কোন্দলে সিজেকেএস: দায়িত্ব নিতে পারছেন না নির্বাচিতরা
২৯ নভেম্বর ২০২৩ ২১:৫৯ | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৩ ০১:১৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো : এক যুগ পর চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) নির্বাচন হলেও আপাতত নির্বাচিতরা দায়িত্ব নিতে পারছেন না। নির্বাচনের পর প্রথম সভাও বাতিল হয়ে গেছে। একজন প্রতিনিধির আপিল আবেদনের ভিত্তিতে উচ্চ আদালত সদ্যসমাপ্ত নির্বাচন পরবর্তী যাবতীয় কর্মকাণ্ডের ওপর আট সপ্তাহের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় এ জটিলতা তৈরি হয়।
পদাধিকার বলে সিজেকেএস’র সভাপতি হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চার বার নির্বাচিত হয়ে সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে আছেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। গত ২৫ নভেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের আগ থেকেই ক্রীড়াঙ্গনের বিভক্তি নিয়ে আলোচনা থাকলেও সিজেকেএস নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সেটা প্রকাশ্যে এল বলে মনে করছেন ক্রীড়া সংগঠকরা।
জানা গেছে, নির্বাচনের আগে নগরীর মাদারবাড়ি মুক্তকণ্ঠ ক্লাবের তিন প্রতিনিধি নিয়ে নিম্ন আদালতে একটি মামলা হয়। তিন প্রতিনিধি হলেন- দিদারুল আলম চৌধুরী, এম এ মুছা বাবলু এবং আশরাফুজ্জামান আশরাফ। মামলাটি করেন ওই ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। আদালত ২০২৪ সালের ৩ মার্চ মামলাটির শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেন।
কিন্তু নির্বাচনের আগমুহূর্তে নির্বাহী কমিটির এক সভায় আদালতে মামলা সংক্রান্ত আইনি সনদ দাখিল করা হয়, যার ভিত্তিতে ওই ক্লাবের তিন প্রতিনিধির সদস্যপদ তিন মাসের জন্য বাজেয়াপ্ত করা হয়। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দিদারুল আলম চৌধুরী জজ আদালতে আপিল করেন। আদালত আদেশ বাতিল করে প্রতিনিধি পদ বহাল রাখার নির্দেশ দেন। এরপর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে দিদারুল আলম চৌধুরী সহ-সভাপতি পদে এবং বাবলু সদস্য পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার মধ্যেই দুই দিন আগে ২৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় হাইকোর্টের একটি নির্দেশনা এনে তিন প্রতিনিধির প্রতিনিধিত্ব বাতিল করা হয়। ফলে তারা নির্বাচনে অযোগ্য হয়ে পড়েন। ২৫ নভেম্বর তাদের ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন হয়।
দিদারুল আলম চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত সোমবার (২৭ নভেম্বর) আমি হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার জজ আদালতে আপিল করি। ওইদিনই চেম্বার জজ আমার আপিল মঞ্জুর করে নির্বাচন পরবর্তী সিজেকেএস’র যাবতীয় কর্মকাণ্ড আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন।’
জানা গেছে, বুধবার (২৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সিজেকেএস’র নতুন কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সেইসঙ্গে দায়িত্ব নেয়ারও কথা ছিল নতুন কর্মকর্তাদের। কিন্তু চেম্বার জজ আদালতের আদেশ পৌঁছার পর সেটি স্থগিত করা হয়েছে।
সিজেকেএস সভাপতি চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান উচ্চ আদালতের নির্দেশের কারণে কর্মকাণ্ড স্থগিতের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রবীণ ক্রীড়া সংগঠক সারাবাংলাকে বলেন, ‘সিজেকেএসকে কুক্ষিগত করে রাখা হয়েছে। এখানে একজন নেতা এবং তার অনুসারী ও সিন্ডিকেটের লোকজন ছাড়া কারও জায়গা নেই। নিজেদের লোকজন ছাড়া অন্যদের মামলার জালে ফেলে অথবা যে কোনো কূটকৌশলে কোণঠাসা করে রাখা হয়। ফলে জেলা ক্রীড়া সংস্থায় এখন বিভক্তি প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। এটা চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য শুভ হবে না।’
চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) নির্বাচনে ২৩টি পদের বিপরীতে ৪৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সাধারণ সম্পাদক এবং দুই নির্বাহী সদস্য ছাড়া অন্য পদগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন প্রার্থীরা। এবারও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন আ জ ম নাছির উদ্দীন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন নির্বাহী সদস্য সংরক্ষিত (মহিলা) রেখা আলম চৌধুরী ও রেজিয়া বেগম।
এবার ২৫২ ভোটারের মধ্যে ২৪০ জন ভোট দেন। নির্বাচনে ৪টি সহ-সভাপতি পদে জয় পেয়েছেন হাফিজুর রহমান, সৈয়দ আবুল বশর, এহেছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল ও অ্যাডভোকেট শাহিন আফতাবুর রেজা চৌধুরী। অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন সৈয়দ সাহাবুদ্দিন শামীম। যুগ্ম সম্পাদকের দুটি পদে নির্বাচিত হয়েছের আমিনুল ইসলাম ও অহীদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন। কোষাধ্যক্ষ পদে জয় পেয়েছেন শাহাবুদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। নির্বাহী সদস্য পদে ২৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ১৩ জন নির্বাচিত হন। আর উপজেলার জন্য সংরক্ষিত দুটি পদে জাহিদুল ইসলাম ও প্রদীপ কুমার ভট্টাচার্য জয় পেয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে সর্বশেষ চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচন হয়েছিল।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম