‘জনগণ ৭ জানুয়ারি সরকারের পতন দিবস উদযাপন করবে’
২৫ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:৩৫
ঢাকা: আগামী ৭ জানুয়ারি দেশের জনগণ সরকারের পতন দিবস উদযাপন করবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শনিবার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, ‘জনগণ তাদের রাষ্ট্র পরিচালনার ভার কাদের হাতে অর্পণ করতে চায়, তা সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের আলোকে নির্ধারণ করে দেয় জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচনকে এখন হাসি-তামাশা, বাণিজ্য ও প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। জনগণের কাছ থেকে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর জনপ্রতিনিধিত্ব এখন শেখ হাসিনার দান-দক্ষিণা, খয়রাত, বিলি-বণ্টন, ভাগ-বাটোয়ারা, উপহার-করুণায় পরিণত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে বিনা ভোটে অটোপাসের নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের নিশিরাতের ভোট ডাকাতির পর এবার ইলেকশন ভাওতাবাজীর নামে সিলেকশন করা হচ্ছে। ৭ জানুয়ারি ভোটের নামে রাষ্ট্রের শত শত কোটি টাকার শ্রাদ্ধ করা হবে অত্যন্ত নিখুঁত ধুর্ততায়, জনগণের চোখে ধুলো দিয়ে। ইলেকশনের রাতে পাঠ করা হবে গণভবনের তালিকা।’
রিজভী বলেন, ‘নির্বাচন এলে যে আনন্দ-উৎসবের জোয়ার নামে জনপদগুলোতে তার পরিবর্তে ভয়ার্ত পরিবেশ বিরাজ করছে সারাদেশে। গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছে মানুষ। বহু গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। মনোনয়ন নিয়ে ইতোমধ্যে খুনোখুনি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। উৎসবের বদলে নির্বাচনকে ভয়, আতঙ্ক ও শোকে পরিণত করেছেন শেখ হাসিনা।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা নিজেকে সর্বময় ক্ষমতার অধিশ্বর ঘোষণা করে সবকিছুকে নিজের ক্রীড়ানকে পরিণত করেছেন। যা ইচ্ছে তাই করছেন। রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে টার্গেট করে করে অর্থ এবং এমপি বানানোর প্রলোভনে কিংস পার্টিতে রাজনৈতিক নেতাদের ঢোকানো হচ্ছে। তবে, কোনো নীতিবান, আদর্শবাদী, দেশপ্রেমী রাজনীতিককে তারা নিতে পারছে না। কতিপয় ডিগবাজিমার্কা-ভ্রষ্টচারী রাজনৈতিক ব্যক্তিকে নির্বাচনি রঙ্গমঞ্চের অভিনেতা বানাতে কব্জা করেছে।’
রিজভী বলেন, ‘টাকার বিনিময়ে খরিদ হওয়া এইসব রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের কেউ কেউ এখনই নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কারণ, তারা টাকা ও ক্ষমতার মূলোর লোভে পড়ে ডিগবাজি দেওয়ার পর এখন বুঝতে পারছেন তাদের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে না। পাতানো খেলার সাজানো নির্বাচনে ‘হার হাইনেস’ যাকে যাকে চাইবেন, তারাই হবেন এমপি, তারাই হবেন ক্ষমতাশালী।’
তিনি বলেন, ‘শোনা যাচ্ছে, শেখ হাসিনার জোটসঙ্গী একটি দলের শীর্ষ নেতা এই পাতানো ভুয়া সিলেকশনের নির্বাচনে যেতে না চাওয়ায় রাষ্ট্রীয় এজেন্সি দিয়ে সেই নেতাকে একটি পাঁচ তারকা হোটেলে জিম্মি করা হয়। পরে তিনি নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিতে বাধ্য হন।’
রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনার নির্দেশে নেতাদের বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে রাতের বাহিনী। এইভাবে জোড়াতালি দিয়ে নির্বাচনের পথে হাঁটছে মাফিয়াচক্র। তবে, তুমুল আন্দোলনে-জনজোয়ারে এই নির্বাচনি নাটক ভণ্ডুল হয়ে যাবে। জনগণ আগামী ৭ জানুয়ারি দেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন দিবস উদযাপন করবে।’
তিনি বলেন, ‘গণভবন-বঙ্গভবনে যারা ছুটোছুটি করছেন, তাদের প্রতি আমার আহ্বান, অবৈধ ক্ষমতার দাপটের চেয়ে জনগণের ভালোবাসায় ধন্য হওয়া অনেক বেশি সম্মানের। অতএব, নিজেদেরকে অসম্মানিত করবেন না। ১২ কোটি ভোটারের লুণ্ঠিত ভোটের অধিকার আদায়ের দাবির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না। যারা বর্তমানে সাময়িক লোভ-লাভের আশায় ভাগ-বাটোয়ারার নির্বাচনে অংশ নিয়ে জনগণের আন্দোলনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন, তাদের নামও বেঈমানদের তালিকায় চিহ্নিত থাকবে।’
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম