ইটিং, সিটিং, গসিপিং কিন্তু ফলাফল জিরো: মেয়র আতিক
১৯ নভেম্বর ২০২৩ ১৭:২৭ | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৩ ২০:৩৭
ঢাকা: বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে আমরা যত আলোচনা করি বা কথা বলি সমাধানে সেভাবে কাজ করি না। সড়কে শৃঙ্খলা আনতে স্মার্ট ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, সড়ক, ফুটওভারব্রিজ ও জেব্রা ক্রসিং নির্মাণ ইত্যাদি কাজ সিটি করপোরেশন করে দিতে পারবে কিন্তু এনফোর্সমেন্ট তো সিটি কাজ না। এগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেই করতে হবে। দেখা যায় বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের ইটিং, সিটিং, গসিপিং হচ্ছে কিন্তু ফলাফল জিরো। ফলাফল পেতে আমাদের আইনের প্রয়োগ বাড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
রোববার (১৯ নভেম্বর) ওয়ার্ল্ড ডে অফ রিমেমব্রান্স ফর রোড ট্রাফিক ভিকটিমস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংলাপের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি (বিআইজিআরএস) ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এর সহায়তায় প্রথমবারের মতো নানা কর্মসূচি মাধ্যমে দিবসটি পালন করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
মেয়র বলেন, ‘রোড ক্র্যাশ একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ যা আমাদের সবাইকে প্রভাবিত করে। ঢাকায় ছোট গাড়ির আধিক্য যানজটের অন্যতম কারণ। আবার যানজট হতে মুক্ত হলে যানবাহনের বেপরোয়া গতি লক্ষ করা যায়। যান্ত্রিক যানগুলো জেব্রা ক্রসিং ও সিগনালে সঠিকভাবে থামাকে পথচারীদের সড়ক পারাপারে ঝুঁকি কমে আসবে। এছাড়া, ঢাকার অনেক সড়ক পারাপারের জন্য ফুটওভারব্রিজ রয়েছে সেগুলো ব্যবহারেও পথচারীদের ঝুঁকি কমে আসবে।’
মেয়র জানান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সড়কসমূহকে নিরাপদ করার জন্য আমরা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটিসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কাজ করছি। বিশেষত, ডিএনসিসি ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস এর বৈশ্বিক সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর আওতায় ঢাকা উত্তরের জনগণের জন্য নিরাপদ সড়ক গড়ে তুলতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এ লক্ষ্যে ফুটপাথ নির্মাণ, জেব্রা ক্রসিং অঙ্কনসহ অবকাঠামোগত উন্নতি, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সমন্বয় এবং জনসচেতনতামূলক প্রচারণার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। জেব্রাক্রসিংকে ছয় ইঞ্চির মতো উঁচু করে দেওয়া, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাসহ নানা উদ্যোগ আমরা নিচ্ছি। আমাদের এই প্রচেষ্টায় সবার সমর্থন এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। বিশেষত, সড়ক ব্যবহারে আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে, ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলতে হবে। পথচারী, সাইকেল চালক, রিকশাসহ সব পরিবহনের যাত্রী ও চালকদের জন্য সড়ক নিরাপদ হোক। আসুন আমরা দায়িত্বের সঙ্গে গাড়ি চালাই। সড়ককে নিরাপদ হিসেবে গড়ে তুলি।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, “আমরা নানা উদ্যোগ নেই কিন্তু বাস্তবায়নের সময় ‘পোতায়ে’ যাই। বক্তব্য একরকম দেয় কিন্তু কাজ কেউ করে না। আমরা মুখে মুখেই ডিজিটাল, স্মার্ট কিন্তু আসলে কতটুকু প্রযুক্তিনির্ভর হয়েছি তা ভেবে দেখতে হবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে টোল দিতে যে সময় ব্যয় হয়, সেই সময়ে মহাখালী পৌঁছে যাওয়া যায় উত্তরা থেকে। আমরা এমনভাবে সবকিছুর জন্য কৃতিত্ব দাবি করি তাতে মনে হয় লজ্জাটুকুও আর অবশিষ্ট নাই। লজ্জা থাকলে কথায় বড় না হয়ে কাজ করে দেখাতাম, দায়িত্ব পালন করতাম।”
অনুষ্ঠানে দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এর টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার আমিনুল ইসলাম সুজন এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিআইজিআরএস এর সমন্বয়কারী আবদুল ওয়াদুদ।
অনুষ্ঠানে দু’জন ভিকটিম তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন যারা সড়কে তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় দুই পা হারানো সাংবাদিক নিখিল ভদ্র তার দুর্ঘটনা ও পরবর্তী সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন। সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামীকে হারানো অ্যাডভোকেট ইতি রানী সাহা দুর্ঘটনা পরবর্তী সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন।
নিখিল ভদ্র বলেন, ‘জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দুর্ঘটনার পর তাকে হাসপাতালে নেওয়ার লোক যেমন ছিল না তেমনি চিকিৎসকদের ভুলে তার পা যতটুকু কাটা পড়েছে তা হয়ত পড়ত না। তার চিকিৎসা ব্যয়ের ৭০ লাখ টাকা সরকার, চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান ও সাংবাদিক সংগঠন থেকে দিলেও দুর্ঘটনার পর আড়াই মাসের কন্যা সন্তানকে নিয়ে যে অবর্ণনীয় কষ্ট তার স্ত্রীকে ভোগ করতে হয়েছে তা কেউ অনুধাবন করবে না। দেশের বাইরে থেকে চিকিৎসা নিয়ে আসার পরেও এদেশে প্রতিনিয়ত হুইলচেয়ার উপযোগী ভবন না থাকায় চলাচলে নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়।’
তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এসব বিষয়ে দৃষ্টিপাতের আহ্বান জানান তিনি।
ইতি রাণী সাহা জানান, তার স্বামীর মৃত্যুর পর সবাই তার ও সন্তানদের পাশে দাঁড়ালেও লড়াইটা তাকেই করতে হচ্ছে। যে সড়কে তার স্বামী মারা যান, জীবিকার খাতিরে তাকে সেই সড়কেই চলাচল করতে হচ্ছে।’
টাকার বিনিময়ে অনভিজ্ঞ চালকদের লাইসেন্স দেওয়া থেকে বিরত থাকা, প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো, যাত্রী ও পথচারীদের সতর্ক চলাচল ও আইন মানার আহ্বান জানান তিনি।
ডিএনসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজার সভাপতিত্বে এতে আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) এর পরিচালক (সড়ক নিরাপত্তা) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)-এর যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) এস এম মেহেদী হাসান, ডিএনসিসি’র প্রধান প্রকৌশলী ব্রি.জে. মু. আমিনুল ইসলাম, অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর সহকারী অধ্যাপক ড. আর্মানা সাবিহা হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. আশরাফুল আলম, ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটি (ডিটিসিএ) এর সিনিয়র রোড সেফটি স্পেশালিস্ট মো. মামুনুর রহমান, গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর -এর কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর ড. মো. শরিফুল আলম, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ-এর সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) আবদুর রশিদ।
উল্লেখ্য, ওয়ার্ল্ড ডে অফ রিমেমব্রান্স ফর রোড ট্রাফিক ভিকটিমস অর্থাৎ সড়কে মৃত্যু ও ক্ষতিগ্রস্তদের স্মরণে একটি বৈশ্বিক দিবস। এ বছরের দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘মনে রেখো সমর্থন করো এবং ভূমিকা রাখো।’
এ দিবসের উদ্দেশ্য হচ্ছে, রোড ক্র্যাশের কারণে অকালে যারা মারা গেছে ও যারা পঙ্গুত্বের শিকার হয়েছে সেসব পরিবারকে একটি প্ল্যাটফর্ম দেওয়া। এর মাধ্যমে সড়কে মারা যাওয়া ও পঙ্গুত্বের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণ এবং তাদের জরুরি সেবা প্রদানের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া, সড়ক নিরাপদ করতে গবেষণাধর্মী তথ্য ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় আইন ও নীতিগত পদক্ষেপ গ্রহণকে উৎসাহিত করা হয়।
সারাবাংলা/আরএফ/একে