Friday 10 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গর্ভের সন্তানের পর ডেঙ্গু কেড়ে নিলো মাকেও

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১০ নভেম্বর ২০২৩ ২১:২৯ | আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৩১

চট্টগ্রাম ব্যুরো: গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হন মা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ধীরে ধীরে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিস্তেজ হতে শুরু করে। সেটি সংক্রমিত হয় গর্ভে থাকা সাতমাস বয়সী সন্তানের মধ্যেও। মৃত সন্তান প্রসব করেন। তিনদিনের মাথায় চলে গেলেন সেই মা-ও। হঠাৎ এমন ঝড়ে নির্বাক, শোকস্তব্ধ স্বামী।

শুক্রবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে। এর আগে, বুধবার তিনি মৃত সন্তান প্রসব করেন।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, মৃত দোলা ঘোষ (২৬) চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের দক্ষিণ সারোয়াতলী ইমামুল্লারচর গ্রামের জুয়েল ঘোষের স্ত্রী। পেশায় মিনিট্রাক চালক জুয়েল স্ত্রীকে নিয়ে নগরীর চান্দগাঁও বাহির সিগন্যাল এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।

আট বছর আগে জুয়েল ও দোলার বিয়ে হয়। নগরীর নিউমার্কেটে আইডিয়াল কম্পিউটার সেন্টার নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার প্রশিক্ষক হিসেবে চাকরি করতেন। গৃহশিক্ষক হিসেবে গানও শেখাতেন।

জুয়েলের নিকটাত্মীয় রনি মজুমদার সারাবাংলাকে জানান, জ্বরসহ নানা উপসর্গে আক্রান্ত সন্তানসম্ভবা দোলাকে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২ নভেম্বর তার শরীরে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। এরপর তাকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে এনে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ বিভাগের ইনচার্জ ডাক্তার অসীম বড়ুয়া সারাবাংলাকে জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত দোলার গর্ভে সাত মাসের সন্তান ছিল। গত বুধবার (৮ নভেম্বর) মৃত বাচ্চা প্রসব করেন তিনি। এরপর তিনি সেপটিক শকে আক্রান্ত হন। আস্তে আস্তে অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে।

বিজ্ঞাপন

‘ডেঙ্গু আক্রান্ত অবস্থায় উনার ইনিশিয়াল অর্গান ফেইলিউর শুরু হয়। যেহেতু মায়ের ডেঙ্গু, সংক্রমণটা গর্ভের সন্তানের মধ্যেও গেছে। একপর্যায়ে অ্যাবরশন হয়ে যায় অর্থাৎ তিনি প্রি-ম্যাচিউড অবস্থায় মৃত বাচ্চা প্রসব করেন। এরপর রোগী সেপটিক শকে চলে যান। রোগীর নাক দিয়ে অনবরত রক্ত ঝরছিল। মাল্টিঅর্গান ফেইলিউর হয়। কিডনি, ফুসফুস, লিভার কোনোটাই ভালোভাবে কাজ করছিল না। রক্ত দিতে হয়েছে কয়েকবার। কিন্তু রোগীকে বাঁচানো যায়নি।’

রনি মজুমদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার প্রতিবেশী দাদার স্ত্রী। বিয়ের আটবছর পর স্ত্রী সন্তানসম্ভবা হওয়ার খবরে দাদা খুব খুশি ছিলেন। আমরাও খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু যেটা হলো, দাদার ওপর একেবারে আকাশ ভেঙে পড়ার মতো। ওনাকে কী সান্ত্বনা দেব, আমরা নিজেরাই কোনো সান্ত্বনা পাচ্ছি না। লাশের পাশে বসে আছেন জুয়েলদা, কারও সঙ্গে কোনো কথা বলছেন না।’

এ নিয়ে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৯০ জনের মৃত্যু হল। জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১২ হাজার ৯৫৯ জন। ২০২২ সালে আক্রান্ত ছিল ৫ হাজার ৪৪৫ জন এবং ৪১ জন মারা যান।

সারাবাংলা/আরডি/একে

টপ নিউজ ডেঙ্গু মৃত্যু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর