Thursday 23 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কালাজ্বরের ঝুঁকিতে দেশের ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৬ নভেম্বর ২০২৩ ১৪:৪৭

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক [ফাইল ছবি]

ঢাকা: কালাজ্বরের ঝুঁকিতে দেশের ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষ। এই রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণে দেশের ২২ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিনামূল্যে রোগ নির্নয় ও চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও সাতটি রেফারেল হাসপাতালে কালাজ্বরের জন্য বিশেষায়িত রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক। তিনি বলেন, বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার কারণে কালাজ্বরের সংক্রমণ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৬ নভেম্বর) সচিবালয়ে এ সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ সব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে এ অঞ্চলে কালাজ্বরের ইতিহাস তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, কালাজ্বর একটি প্রাণঘাতী। মেডিকেলের ভাষায় এটি ভিসারাল লিশম্যানিয়াসিস হিসেবে পরিচিত। এটি লিশম্যানিয়া পরজীবী দ্বারা সৃষ্ট যা স্ত্রী স্যান্ডফ্লাই কামড়ের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। সময়মত চিকিৎসা না হলে প্রায় ৯৫%, কালাজ্বর রোগীর মৃত্যু হয়। এই জ্বরের প্রধান লক্ষণ অনিয়মিত দীর্ঘমেয়াদী জ্বর, প্লীহা এবং যকৃতের বৃদ্ধি, ওজন হ্রাস এবং রক্তস্বল্পতা।

এটি সমাজের অবহেলিত ও প্রান্তিক গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেশি সংক্রমিত হয় উল্লেখ করে বলেন, ‘এ রোগের প্রার্দুভাব বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশে দেখা যায়। প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন মানুষ এই রোগের ঝুঁকিতে থাকে। ব্রাজিল, পূর্ব আফ্রিকা এবং ভারতবর্ষে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। বাংলাদেশে প্রায় ৩৮ মিলিয়ন মানুষ ঝুঁকিতে রয়েছে।’

১৮২০, ১৮৬০, ১৯২০ এবং ১৯৪০-এর দশকে বাংলায় কালাজ্বর মহামারির এই পরিলক্ষিত হয় বলে উল্লেখ করা হয় লিখিত বক্তব্যে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১৯৩১-১৯৪৩ সাল পর্যন্ত তদানীন্তন বাংলায় প্রায় ১০ লাখের বেশি কালাজ্বরের রোগী শনাক্ত হয়। বাংলাদেশে, সত্তর-এর দশকে বিভিন্ন এলাকায় কিছু সংখ্যক কালাজ্বরের রোগী শনাক্ত করা হয়েছিল এবং ৮০ সালে পাবনা জেলায় একটি প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল। তারপর থেকে প্রতি বছর বাংলাদেশে কালাজ্বর সংক্রমণ হয়েছে। ২০০৮ থেকে ২০১১ সময়কালে কালাজ্বর রোগীর সংখ্যার ভিত্তিতে ২৬টি জেলার মোট ১০০টি উপজেলাকে কালাজ্বর উপদ্রুব উপজেলা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল এবং তার বাস্তবায়ন ইউনিট (IUS) উপজেলা হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছিল। ২০০৫ সালে বাংলাদশ, ভারত এবং নেপাল সরকার ২০১৫ সালের মধ্যে জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসাবে কালাজ্বর রোগকে নির্মূল করার জন্য বিশ্বস্বাস্ত্য সংস্থার মধ্যস্থতায় একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। ২০১৭ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে ২০১৪ সালে ভুটান এবং থাইল্যান্ডকে অন্তভুক্ত করে সমঝোতা স্মারক (MoU) হালনাগাদ করা হয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশে জাতীয় কালাজ্বর নির্মূল কর্মসূচি (NKEP) বিশ্বস্বাস্থ্য সংখ্যা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের ২০০৫ সালের কৌশলগত কাঠামো অনুসরণ করে ২০০৮ তাদের জাতীয় কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। এতে রয়েছে-

১. দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা সম্পন্ন করা
২. সমন্বিত বাহক ব্যবস্থাপনা এবং বাহক নজর
৩. রোগের নজরদারি
8. অপারেশনাল রিসার্স
৩. অ্যাডভোকেসি, কমিউনিকেশন অ্যান্ড সোশ্যাল মোবিলাইজেশন (ACSM)
ড. মাল্টিসেক্টরাল এবং আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে কালাজ্বর উপযুক্ত এলাকায় ২২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কালাজ্বর রোগের বিনামূল্যে রোগ নির্ণয় সম্পূর্ণ চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে। সরকারি প্রাথমিক পরিচর্যা কেন্দ্র, যেখানে NKEP ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার সামান্য সামগ্রী সরবরাহ করে থাকে। এছাড়াও সাতটি রেফারেল হাসপাতালে কালাজ্বরের জন্য বিশেষায়িত রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা পরিসেবা প্রদান করা হয়।

প্রাথমিকভাবে রোগের লক্ষণের উপস্থিতির পাশাপাশি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংক্রামক রোগ হাসপাতাল (ঢাকা), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি গবেষণা কেন্দ্রে কালাজ্বর রোগীদের উন্নত ডায়াগনস্টিক এবং চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হয়।

এ সব কার্যক্রমের কারণে বাংলাদেশে ‘জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে কালাজ্বর নির্মূল হয়েছে’ বলে ঘোষণার যোগ্যতা অর্জন করে। বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম দেশ যেটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসাবে কার নির্মূল অর্জন করেছে। এই সনদটি নিঃসন্দেহে দেশের জন্য গৌরবের ও সম্মানের বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এ ও জানি যে, নির্মূলের এই ধারা বজায় রাখা একটি বড় চ্যালের হিসেবে পরিগণিত হবে। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এন প্রাপ্যতা বজায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে Evidence based শূন্য রিপোটিং প্রতিষ্ঠা করা যায়। ২০৩০ সালের মধ্যে শূন্য কালাজ্বর অর্জনের লক্ষ্যে এ পর্যায়ে রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা, নজরদারি এবং নিয়ন্ত্রণকে শক্তিশালী করার জন্য অধিকতর রিসোর্স বরাদ্দের প্রয়োজন হবে। অন্যথায় তিন বছর পর মূল্যায়নের মাধ্যমে কালাজ্বর নিয়ন্ত্রণের এই গৌরব হারাতে হতে পারে।’

সারাবাংলা/জেআর/একে

কালাজ্বর টপ নিউজ স্বাস্থ্যমন্ত্রী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর