ময়নাতদন্ত: কাপ্তাইয়ে সেই হাতির মৃত্যু কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে
৬ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৩৫ | আপডেট: ৬ নভেম্বর ২০২৩ ১০:৪৫
রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার রাইখালীতে মাসখানেক আগে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় এক হাতিকে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, হাতিটির মৃত্যু হয়েছে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট তথা আচমকা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে।
এদিকে হাতিটির লোকালয়ে চলে আসার পেছনে বনে খাবারের সংকট থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বলছেন, খাদ্য সংকটের পাশাপাশি গরমের তীব্রতা থেকেও শারীরিকভাবে মাদী হাতিটি অসুস্থ হয়ে থাকতে পারে, যা হতে পারে তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণ।
গত ১২ অক্টোবর সকালে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড মতিপাড়া কাঁঠালতলী এলাকায় বুনো হাতিটিকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে ময়নাতদন্ত শেষে হাতিটিকে মাটিচাপা দিয়েছিল বন বিভাগ। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছিলেন, এশিয়ান নারী হাতিটির বয়স আনুমানিক ৩০ বছর, যদিও এ ধরনের হাতির আয়ুষ্কাল ৬০ থেকে ৭০ বছর। অর্থাৎ গড় আয়ুর অর্ধেক বয়সেই হাতিটির মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন- মৃত হাতিটি নারী, ময়নাতদন্ত শেষে মাটিচাপা
বন বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তারা ধারণা করছিলেন, স্ট্রোক করে হাতিটির মৃত্যু হয়েছিল। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে কারণ হিসেবে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট উঠে এসেছে।
কাপ্তাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. এনামুল হক হাজারী বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা হাতিটির গায়ে কোনো ধরনের আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাইনি। তখন রাঙ্গুনিয়া ও কাপ্তাই ইকো-পার্কের ভেটেরিনারি সার্জনরাসহ সার্বিকভাবে দেখলাম মৃত্যুর কারণ হিসেবে স্ট্রোক হতে পারে বলে ধারণা করছিলেন। হাতির মরদেহের বিভিন্ন অংশের নমুনা সংগ্রহ করে ময়নাতদন্ত শেষে দেখা গেছে হাতিটির মৃত্যু কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে হয়েছে।’
আবহাওয়া ও বনে খাদ্য সংকটের প্রসঙ্গ টেনে এনামুল হাজারী বলেন, সাধারণত একটি হাতির ওজন হয়ে থাকে চার টনের মতো। এদের প্রতিদিন যে পরিমাণ খাবার প্রয়োজন হয় তা পার্বত্য চট্টগ্রামের বনে এখন পায় না। বনে খাদ্য ঘাটতির প্রভাব আর গরমের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে হাতিটির কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হতে পারে।
খাদ্য সংকটের কারণে বন্যপ্রাণী লোকালয়ে চলে আসছে এবং মানুষ ও প্রাণীর দ্বন্দ্ব দেখা দিচ্ছে বলেও মনে করেন এই প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। বলেন, বনের ফুসফুস হলো গাছপালা। কিন্তু দিন দিন বৃক্ষ নিধন বাড়ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বনগুলো বাইরে থেকে ঘন সমৃদ্ধ বন দেখালেও ভেতরে তেমন গাছপালা না থাকায় হাতি খাদ্য ঘাটতিতে ভুগে থাকে। এ কারণে হাতিসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী বন ছেড়ে লোকালয়ে চলে আসছে। এতে করে মানুষ ও প্রাণীর মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে। বন্যপ্রাণীরা আরও বেশি বিপন্ন হচ্ছে।
আরও পড়ুন- কাপ্তাইয়ে বুনো হাতির মৃত্যু
এর আগে ২০১৫ সালে রাঙ্গামাটির সদর উপজেলার জীবতলীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুটি বুনো হাতির মৃত্যু হয়েছিল। এরপর গত মাসে হাতিটি মারা গেল কাপ্তাইয়ে, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে। এর মাঝের আট বছরে রাঙ্গামাটিতে কোনো হাতির মৃত্যুর খবর পাওয়া না গেলেও হাতির আক্রমণে একাধিক মৃত্যুর খবর মিলেছে।
পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, পার্বত্য চট্টগ্রামের বন উজাড়ের ফলে সৃষ্ট খাদ্য সংকট এবং হাতির চলাচলের করিডোরে মানুষের উপস্থিতি ও বসতি গড়ে তোলার ফলে হাতি-মানুষ মুখোমুখি হচ্ছে। হাতি-মানুষের এই দ্বন্দ্বের কারণে অনেকেই প্রাণ হারাচ্ছে হাতির আক্রমণে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে হাতির আবাসস্থল নিরাপদ ও খাদ্য সংকট মোকাবিলায় বন বিভাগের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলছেন পরিবেশকর্মীরা।
তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের বনে প্রাণীদের জন্য খাদ্য ঘাটতি নেই বলে মনে করছেন উপ-বন সংরক্ষক ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘একটি হাতি প্রতিদিন গড়ে ১৬০ থেকে ১৮০ কেজি খাবার খেয়ে থাকে। কেবল কলা গাছই নয়, বাঁশসহ হাতির খাওয়ার উপযোগী প্রায় শত প্রজাতির বৃক্ষ, লতা-পাতা রয়েছে বনে। তবে ড্রাই সিজনে (শুষ্ক মৌসুমে) পার্বত্য চট্টগ্রামের বনে খরার প্রভাবে হাতি লোকালয়ে চলে আসে খাবারের সন্ধানে।’
সারাবাংলা/টিআর
টপ নিউজ রাঙ্গামাটিতে হাতির মৃত্যু হাতির ময়নাতদন্ত হাতির মরদেহ হাতির মৃত্যু