গাড়িতে আগুন দিলে তার হাতও পুড়িয়ে দেওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী
৩১ অক্টোবর ২০২৩ ১৭:৩২ | আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৩ ১৭:৪৭
ঢাকা: গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা প্রসঙ্গে প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যারা পুলিশকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে তারা কী মানুষের জাত। যারা যখন গাড়ি পুড়িয়ে দেবে তাদের হাতও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া উচিত।’
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট যে সন্ত্রাসী দল তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। কানাডার আদালত কিন্তু এ বিষয়টা কয়েকবার বলেছে। সন্ত্রাসী দল হিসেবে কানাডা তাদেরকে প্রত্যাখান করেছে, তাই আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেও তারা সেখানে সুযোগ পায়নি।’
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে পালিয়ে গিয়ে এখন বিএনপি অবরোধের ডাক দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২৮ তারিখ (২৮ অক্টোবর) বিএনপি যেসব ঘটনা ঘটালো (পুলিশকে কুপিয়ে মারা, সাংবাদিকদের ওপর হামলা) তাতে জনগণের ধিক্কার ছাড়া কিছুই জুটবে না। ইসরায়েল যেভাবে ফিলিস্তিনের হাসপাতালে হামলা করেছে তার সঙ্গে বিএনপির হামলার কোনো পার্থক্য দেখছি না।’
সংলাপ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করতে পারে তাদের সঙ্গে কিসের সংলাপ। খুনিদের সঙ্গে সংলাপ বাংলাদেশের মানুষও চাইবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাঝখানে কিছুদিন বিএনপি রাজনৈতিকভাবে কর্মসূচি করছিল এবং আপনারা নিশ্চয়ই বিশেষভাবে লক্ষ করেছিলেন আমাদের সরকার কিছু তাদের কোনো বাধা দেয়নি। তাদের ওপর একটা শর্ত ছিল, তারা অগ্নিসংযোগ বা ভাঙচুর করবে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা (বিএনপি) যখন সুষ্ঠুভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি করছিল তাতে কিন্তু মানুষের একটু আস্থা-বিশ্বাসও তারা ধীরে ধীরে অর্জন করতে শুরু করেছিল। কিন্তু ২৮ তারিখে বিএনপি যেসব ঘটনা ঘটালো, বিশেষ করে যেভাবে পুলিশকে হত্যা করেছে, মাটিতে ফেলে যেভাবে কোপালে, সাংবাদিকদের যেভাবে পেটাল, এ ঘটনার পর জনগণের ধিক্কার ছাড়া বিএনপির আর কিছুই জুটবে না।’
এর আগে, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়েনের আমন্ত্রণে গত ২৪ অক্টোবর ব্রাসেলসে যান শেখ হাসিনা। সফরকালে সাইডলাইনে ইউরোপীয় দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেন। সফর শেষে ২৭ অক্টোবর ঢাকায় ফেরেন প্রধানমন্ত্রী।
গত ২৫ অক্টোবর সকালে তিনি ইসির নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ইউরোপীয় বাণিজ্য কমিশনার ভালদিস ডোমব্রোভস্কিসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। পরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়েনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। এই দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংকের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ৩৫০ মিলিয়ন ইউরোর একটি ঋণ সহায়তা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
ইউরোপীয় কমিশন ও ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংকের মধ্যে বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ৪৫ মিলিয়ন ইউরোর একটি অনুদান চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও ইসির মধ্যে একটি ১২ মিলিয়ন ইউরোর অনুদান চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ ছাড়া এই সফরে বাংলাদেশ সরকার এবং ইসি বাংলাদেশের সামাজিক খাতে ৭০ মিলিয়ন ইউরোর পাঁচটি ভিন্ন অনুদান চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
শেখ হাসিনা একই দিন ২৫ অক্টোবর গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামের উদ্বোধনী পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে যোগ দেন এবং বক্তৃতা করেন। বিকালে ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ড. ওয়ার্নার হোয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। ইউরোপীয় কমিশনের কমিশনার ফর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট জেনেজ লেনারসিক ও কমিশনার ফর ইন্টারন্যাশনাল পার্টনারশিপ জুটা উরপিলাইনেনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সম্মানে উরসুলা ভন ডার লেয়েনের দেওয়া নৈশভোজে যোগ দেন।
২৬ অক্টোবর সকালে বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডি ক্রুর সঙ্গে ও লুক্সেমবার্গের প্রধানমন্ত্রী জেভিয়ার বেটেলের সঙ্গে দুটি পৃথক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন তিনি। একই দিন বিকেলে প্রধানমন্ত্রী গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামের সমাপনী পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে যোগ দেন। শেখ হাসিনা পরে বেলজিয়ামে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের দেওয়া সংবর্ধনায় যোগ দেন।
এ ছাড়াও ২৫ ও ২৬ অক্টোবর টিভি চ্যানেল ‘ইউরো নিউজ’ এবং ‘পলিটিকো’ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার নেয়।
সারাবাংলা/একে
আওয়ামী লীগ জামায়াত টপ নিউজ প্রধানমন্ত্রী বিএনপি শেখ হাসিনা সহিংসতা