রণসাজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
২৭ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:৩২ | আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:২৩
ঢাকা: বিএনপি ও জামায়াতের মহাসমাবেশে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রণসাজে সজ্জিত হয়ে মাঠে নামছে। এরইমধ্যে ঢাকার রাজপথে তার চিত্রও দেখা গেছে। পুলিশের দাবি, মূলত নাশকতা ও অপ্রীতিকর কোনো কিছু ঠেকাতেই পুলিশকে সর্বশক্তি দিয়ে নামতে হয়েছে।
ডিএমপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২৮ অক্টোবরের রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশকে কেন্দ্র করে তৃতীয় পক্ষের কেউ অথবা রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষকতায় কোনো কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নাশকতা চালাতে না পারে সেজন্য পুলিশ সজাগ ভূমিকায় রয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সমাবেশের নামে বড় ধরনের জ্বালাও-পোড়াও হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে ভোটের আগে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঘেরাওয়ের মত অবস্থা তৈরি করতে পারে। সে জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে থাকছে পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পাশাপাশি বিজিবি ও আনসার সদস্যরাও সহযোগী দায়িত্ব পালন করবে।
এরইমধ্যে রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে দিনভর তল্লাশি চৌকি বসিয়ে বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার এনকি সিএনজিকে তল্লাশি করতে দেখা গেছে। এতে একদিকে যেমন যাত্রী ভোগান্তি তেমনি মাইলের পর মাইল দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের দাবি, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দ্বারা অথবা কোনো দাগী আসামির মাধ্যমে রাজধানীর সমাবেশস্থলে অস্ত্র বা বিস্ফোরকদ্রব্য প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য পুলিশের বিশেষ তল্লাশি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একে একে ডিএমপির রায়ট কার, এপিসি কার ও জল কামান এসে হাজির হয়। সাথে প্রিজন ভ্যানসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ অস্ত্রে সস্ত্রে হাজির হন। পুলিশ নেতাকর্মীদের জানিয়ে দেয়, আগামীকাল (২৮ অক্টোবর) দুপুর ১২ টার আগে কোনো নেতাকর্মী জড়ো হতে পারবেন না। এছাড়া কেউ সড়কে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবেন না।
বিএনপিসহ অন্যান্য দলের সমাবেশ যাতে নজরদারি করা যায় সেজন্য সমাবেশ এলাকাগুলোতে বিশেষ করে মতিঝিল ও পল্টন এলাকায় সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এসব এলাকা ডিএমপির কন্ট্রোল রুম থেকে মনিটরিং করা হবে। কোনো নাশকতার আগাম প্রস্তুতি দেখলে তা যেন ভেস্তে দেওয়া যায় সেজন্য সমাবেশ এলাকায় বিশেষ টিম প্রস্তুত থাকবে। এছাড়া কেউ নাশকতা করে পালিয়ে গেলেও তাকে যেন শনাক্ত করা যায় সেজন্যও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
নয়া পল্টনে উপস্থিত একজন আগন্তুক সরোয়ার হোসেন পরিচয়ে সারাবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশ রণসাজে সজ্জিত হয়ে মাঠে নেমেছে। এর আগে এরকম পরিস্থিতি কখনো চোখে পড়েনি।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এরইমধ্যে দুই হাজার আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্যকে স্ট্যান্ডবাই থাকতে বলা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করবে।
মতিঝিল এলাকায় জামায়াতের মহাসমাবেশ ঠেকাতে শুক্রবার রাত থেকে শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) বিপুল সংখ্যক সদস্য।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (প্রশাসন) বিপ্লব কুমার সরকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘মতিঝিলে জামায়াতের সমাবেশ ঠেকাতে যা যা করা দরকার তার সবই করবে পুলিশ। সমাবেশের নিষেধাঙ্গা সত্ত্বেও জামায়াত তাদের সমাবেশ করতে বদ্ধ পরিকর। সুতরাং পুলিশের মত একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ করে কীভাবে সমাবেশ করে সেটিই দেখতে চায় পুলিশ। প্রয়োজনে বল প্রয়োগ করে জামায়াতকে সমাবেশ থেকে নিবৃত করতে চায় ডিএমপি। সে কারণে প্রস্তুতি হিসেবে পুলিশ জল কামান, রায়ট কার ও এপিসি কার মোতায়েন রেখেছে। এর বাইরে মতিঝিল এলাকা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলেও জানান বিপ্লব কুমার সরকার।
ডিএমপি সুত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে ২৮ টি দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১৪ হাজার পুলিশ কাজ করবে। পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা কাজ করবে। আমিন বাজার, বছিলা, কেরানীগঞ্জ বাবু বাজার ও পোস্তগোলা ব্রীজের ওপারে ঢাকা জেলা পুলিশ কাজ করবে। নারায়ণগঞ্জ অংশে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ ও গাজীপুর অংশে জিএমপি নিয়োজিত থাকবে। সমাবেশের আশেপাশে ডিএমপির বিপুল সংখ্যক রিজার্ভ পুলিশ ভারী অস্ত্রে সস্ত্রে অবস্থান করবে।
অন্যদিকে র্যাবের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এরইমধ্যে শাপলা চত্বর এলাকা র্যাব ঘিরে রেখেছে। সন্দেহজনক কাউকে দেখলেই তাদের আটক করা হচ্ছে।
বন্ধ থাকবে আবাসিক হোটেল ও খাবার হোটেল। ঢাকাগামী দুরপাল্লার যানবাহন বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে লঞ্চ। ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতে বেরিকেড বসানো হয়েছে। বুড়িগঙ্গা নদী দিয়ে কেউ নৌকা যোগেও ঢাকায় প্রবেশ করতে পারবে না কারণ সকাল থেকে নৌকা বন্ধ থাকবে। এমনকি রাজধানীর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে যেসব পরিবহন চলত তার কোনোটাই চলবে না। এমনকি সিএনজি চলাচলেও থাকবে কড়াকড়ি। দুএকটি বিআরটিসি বাস চলাচল করলেও সেখানে থাকবে কঠোর নজরদারি। ঢাকা মোটর মালিক সমিতির পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
সারাবাংলা/ইউজে/একে