Monday 06 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রত্যাবাসনে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের নির্যাতনে আরসার ‘টর্চার সেল’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৭ অক্টোবর ২০২৩ ১৬:৩৭ | আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৩ ১৯:৪৬

কক্সবাজার: জেলায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে কেন্দ্র করে একাধিক টর্চার সেল গড়ে তুলেছে মিয়ানমারের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)। মূলত প্রত্যাবাসনে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের নির্যাতন চালাতে এসব টর্চার সেল তৈরি করা হয়েছে। সেখানে অনেক কমিউনিটি নেতাসহ সাধারণ রোহিঙ্গাদের শালিসের নামে চালানো হয় নির্যাতন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুন, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, মাদক ও আধিপত্যসহ নানা অপরাধ সংঘটনের নিরাপদ আস্তানা হিসেবেও ব্যবহার হতো এসব টর্চার সেল। এমন একটি টর্চার সেলের সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব। এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে আরসার দুইজন শীর্ষ কমান্ডারকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব সদর দফতরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

এর আগে, গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) মধ্যরাতে উখিয়া উপজেলার কুতুপালং এলাকার মধুরছড়া পাহাড়ের গহীনে এই টর্চার সেলের সন্ধান পায় র‌্যাব। সেই টর্চার সেলে অভিযান চালিয়ে দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও অন্যান্য সরঞ্জামসহ সংগঠনটির শীর্ষ দুই কমান্ডারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন ওই টর্চার সেলটির প্রধান এবং গত বছর নভেম্বরে বান্দরবান জেলার ঘুমধুম সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানের সময় হামলা চালিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই’র জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডসহ রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত অনেক হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

গ্রেফতাররা হলেন— উখিয়া উপজেলার ১৩ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা মৃত নুরুজ্জামানের ছেলে মো. ওসমান ওরফে সালমান মুরব্বী (৫০) এবং ৫ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সৈয়দ হোসেনের ছেলে মো. ইউনুস (২৪)।

র‌্যাব জানিয়েছেন, গ্রেফতার সালমান আরসার শীর্ষ কমান্ডার, তিনি সংগঠনটির ওলামা বডি ও টর্চার সেলগুলোর প্রধান। যিনি গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই’র কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডসহ রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিলেন। আর ইউনুস সন্ধানপ্রাপ্ত টর্চার সেলটির নিয়ন্ত্রক ও সালমানের নিরাপত্তায় নিয়োজিত কমান্ডার।

এই অভিযানে ১টি ৯এমএম বিদেশি পিস্তল ও পিস্তলের ৪ রাউন্ড গুলি, ৪টি একনলা ওয়ান শুটার গান, ২টি এলজি, ৫ রাউন্ড ১২ বোর কার্তুজ, ১টি কুড়াল, ৩টি বিভিন্ন সাইজের প্লাস, ১টি কাঠের লাঠি, ১টি স্টিলের লাঠি, ১টি করাত, ১টি চাকু, ১টি লোহার রড, ১টি লোহার দা, ১টি হ্যাংগিং হুক, ১টি সিসর, ৪টি তালা, ৩টি বড় লোহার পেরেক, ২টি লোহার শিকল, ১টি রশি, ১টি কুপি বাতি এবং সুইসহ সুতার ১টি বান্ডেল উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানায় র‌্যাব।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী সংগঠন আরসার দ্বারা সংঘঠিত খুন, অপহরণ, ডাকাতি, মাদক, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারে কোন্দলসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যকলাপ লক্ষ্য করছে র‌্যাব। যার সূত্র ধরে ধারাবাহিক অভিযান চলতে। ইতোমধ্যে র‌্যাবের অভিযানে আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও সামরিক কমান্ডার, গান কমান্ডার, অর্থ সম্পাদক, আরসা প্রধান আতাউল্লাহ’র একান্ত সহকারী এবং অর্থ সমন্বয়কসহ মোট ৭৩ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটির শীর্ষ নেতাসহ অন্যান্য সদস্যদের গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।’

এই ভিত্তিতেই গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালান হয় উল্লেখ করে র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, ‘৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে সালমান মুরব্বীকে গ্রেফতারের পর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মধুরছড়ার পাহাড়ের গহীনে এই টর্চার সেলটির সন্ধান পাওয়া যায়। ওখানে মো. ইউনুসকে গ্রেফতারের পর অস্ত্র, গুলি ও অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করা সম্ভব হয়।’

তিনি বলেন, ‘সালমান মুরব্বী ২০১৭ সালে বাংলাদেশে এসে থাইংখালীর ১৩ নম্বর ক্যাম্পে বসবাস শুরু করেন। ২০১৮ সালে তিনি আরসার ওলামা কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য ও কমান্ডার মৌলভী মোস্তাক আহম্মদ এবং মৌলভী আবু রায়হানের সঙ্গে সাক্ষাতের মাধ্যমে আরসায় যোগ দেন। পরে অস্ত্র চালনাসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নানা দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে আরসার ওলামা বডির প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব পান সালমান। তার নির্দেশনায় মৌলভী লাল মোহাম্মদের নেতৃত্বে ১০/১২ জনের একটি গ্রুপ তৈরি করা হয়। যারা মূলত রোহিঙ্গা তরুণ ও যুবকসহ সাধারণ রোহিঙ্গাদের প্রলোভন দেখিয়ে অথবা জোরপূর্বক আরসায় যোগদান করায়।’

গ্রেফতারের পর প্রাথমিক তথ্যের সূত্র ধরে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘২০১৯ সালে আরসা প্রধান আতাউল্লাহর নির্দেশনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসার আধিপত্য এবং নিরবিচ্ছিন্নভাবে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভিতরে ও ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড় ও গহীন জঙ্গলে একাধিক টর্চার সেল স্থাপন করে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে কয়েকটি জোনে বিভক্ত করে সালমান মুরব্বীর নেতৃত্বে মাস্টার কামাল, মাস্টার ইউনুছ, জাফর আলম, মৌলভী যুবায়ের, মাস্টার আবুল হাশিম, মাস্টার সলিম’সহ আরও আরসার কমান্ডাররা একাধিক টর্চার সেল পরিচালনার করে আসছে বলে তথ্য মিলেছে।’

ইতোমধ্যে র‌্যাব এসব টর্চার সেলের সন্ধানে কাজ শুরু করেছে। গ্রেফতার দুইজনকে আইনগত প্রক্রিয়ার জন্য উখিয়া থানায় সোপর্দ করা হবে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

সারাবাংলা/ওএফএইচ/এনএস

আরসা কক্সবাজার টপ নিউজ টর্চার সেল রোহিঙ্গা রোহিঙ্গা ক্যাম্প রোহিঙ্গাদের নির্যাতন

বিজ্ঞাপন

চলে গেলেন প্রবীর মিত্র
৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪২

আরো

সম্পর্কিত খবর