Monday 06 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জনসভায় ১০ লাখ লোক সমাগমের টার্গেট আওয়ামী লীগের

ইমরান চৌধুরী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৬ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:১১ | আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৩ ০২:৫৯

চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় বিপুল জনসমাগম ঘটিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ উদ্বোধনের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। এজন্য জনসভায় ১০ লাখ লোক সমাগমের টার্গেট নিয়েছে আওয়ামী লীগ। যদিও এত সমাগম হবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান দলটির নেতারা। তবে কিছু কম হলেও জনসভাস্থল যেন কানায়-কানায় পূর্ণ হয় সেই লক্ষ্যে কাজ করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২৮ অক্টোবর) সকালে নগরীর পতেঙ্গা প্রান্তে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত টানেলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর তিনি টানেল পাড়ি দিয়ে আনোয়ারায় গিয়ে কোরিয়ান ইপিজেডের মাঠে জনসভায় যোগ দেবেন।

চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ এ জনসভার আয়োজন করেছে। ইতোমধ্যে জনসভার প্রস্তুতিও প্রায় শেষ পর্যায়ে। মঞ্চসহ জনসভাস্থলের অবকাঠামোগত কাজে ব্যস্ত প্রায় দু’শ শ্রমিক। কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ স্থানীয় নেতাদের নিয়ে সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুতি কার্যক্রম তদারক করছেন।

আরও পড়ুন: কর্ণফুলীর বুক চিড়ে ইতিহাস যাত্রার অপেক্ষায় দেশ

বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে কোরিয়ান ইপিজেড মাঠে মাহবুবউল আলম হানিফ সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল একসময় আমরা উন্নত দেশগুলোতে দেখতাম। অবাক করার বিষয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই প্রকল্প বাংলাদেশে তৈরি করেছেন। কর্ণফুলী টানেলের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাও ঐতিহাসিক হবে। জনসভার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। মঞ্চ, সাজসজ্জার কাজও শেষ পর্যায়ে।’

‘আমরা আশা করছি এটি স্মরণকালের ঐতিহাসিক জনসভা হবে। যেহেতু টানেল স্মরণকালের একটি ঐতিহাসিক প্রজেক্ট। সুতরাং টানেলকে কেন্দ্র করে জনসভাও হবে ঐতিহাসিক। আর এটি হবে স্মার্ট জনসভা।’

এদিকে, টানেল উদ্বোধন ও জনসভাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো হয়েছে পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা। স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ), পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জনসভাস্থলসহ আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা ঘিরে রেখেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।

বিজ্ঞাপন

নগরীর বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোড, ফৌজদারহাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত আউটার রিং রোড এবং টানেলের অপর প্রান্ত আনোয়ারা থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত এলাকা ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে লাগানো এসব পোস্টার-ব্যানারে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের ছবি শোভা পাচ্ছে। সড়ক সংস্কার করা হয়েছে। সড়কের পাশে গাছগুলোও সাদা রঙে সেজেছে।

যেহেতু জনসভার স্থান চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলায়, সেহেতু আওয়ামী লীগের দক্ষিণ সাংগঠনিক কমিটিই আয়োজনে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। তবে প্রচার-প্রচারণায় সমানতালে কাজ করছে মহানগর এবং উত্তর জেলা আওয়ামী লীগও।

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান সারাবাংলাকে জানান, ৮ ফুট উচ্চতার মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। ৩০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪৮ ফুট প্রস্থের মঞ্চটি নৌকার আদলে তৈরি করা হয়েছে। প্রায় ৫০০ জনের বসার ধারণক্ষমতা থাকলেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পদধারী নেতা ও জনপ্রতিনিধি মিলে ৩০০ জনের বসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ঢাকার কলরেডি থেকে আসা ২০০ মাইক জনসভাস্থলের আশপাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লাগানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে এক লাখ লোক সমাগমের ঘোষণা দিয়েছে। উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না দিলেও প্রতি উপজেলা থেকে অন্তত ১০ হাজার করে নেতাকর্মীকে জনসভায় নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। এর বাইরে মূল জমায়েত দেবে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ।

জানা গেছে, দক্ষিণের প্রত্যেক সংসদ সদস্য এবং উপজেলা চেয়ারম্যানকে জনসমাগমের টার্গেট দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে সাংগঠনিক পদবিধারী প্রত্যেক নেতা মিলিয়ে প্রতি উপজেলা থেকে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ লোক সমাগমের আশা করছে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ।

তবে কোরিয়ান ইপিজেডের মাঠসহ আশপাশের এলাকায় আদৌ ১০ লাখ লোকের স্থান সংকুলান হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা গত ডিসেম্বরে পলোগ্রাউন্ডে জনসভা করেছিলাম। সেটার আয়তন ছিল সাড়ে তিন লাখ বর্গফুট। আর কোরিয়ান ইপিজেডের যে মাঠ, এটার আয়তন সাড়ে নয় লাখ বর্গফুট। পলোগ্রাউন্ডে যদি আমরা পাঁচ লাখ লোকের জনসভা করতে পারি, এখানেও দশ লাখ লোক সমাগম সম্ভব। তবে যেহেতু, জনসভাটি শহরে হচ্ছে না এবং সকালে হচ্ছে, সেজন্য লোক কিছু কম হতে পারে। তবে আমাদের টার্গেট দশ লাখ।’

‘মহানগর আওয়ামী লীগ এক লাখ লোক আনবে বলেছে, হয়ত ৫০ হাজার কিংবা তার চেয়ে কিছু বেশি আনতে পারে। উত্তর জেলা ২০-৩০ গাড়ি কিংবা ৫০ গাড়ি লোক সমাগম করতে পারে। বাকি সমাগম দক্ষিণ জেলা থেকেই হবে। এজন্য আমরা পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছি। সব উপজেলায়, ইউনিয়নে, গ্রামে বিরামহীনভাবে প্রচার-প্রচারণা চলছে।’

উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম নদীপথের টানেল নিয়ে চট্টগ্রামের মানুষ উচ্ছ্বসিত। আমরা যেভাবে সাড়া পাচ্ছি, তাতে জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হবে। আমাদের উত্তরের প্রতিটি উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা আসবেন। তবে যেহেতু জনসভাটা দক্ষিণে হচ্ছে, দক্ষিণ থেকে লোক সমাগম বেশি হবে।’

মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাংসদ নোমান আল মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা কার্যনির্বাহী কমিটির সভা, বর্ধিত সভা করে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছি। নগরীর প্রতিটি সাংগঠনিক ওয়ার্ড, থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর জনসভা আমরা জনসমুদ্রে পরিণিত করব। এ নিয়ে নগর, দক্ষিণ ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সমন্বয় সভা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থল ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নির্বাচনি এলাকা চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে। একই আসনের বাসিন্দা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়েশা খান। দুই হেভিওয়েট নেতার এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে কেন্দ্র করে দক্ষিণে আলাদা আমেজ বিরাজ করছে।

ওয়াসিকা আয়েশা খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মিত হওয়ায় শুধু আনোয়ারাবাসী নন, দক্ষিণ চট্টগ্রাম, পুরো চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের মানুষ উৎফুল্ল ও গর্বিত। স্বাভাবিকভাবেই আমিও আনন্দিত। আমার বাবা প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান খান কায়সারও কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন। এজন্য আমি আবেগতাড়িতও। এ অবস্থায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের এলাকায় জনসভা করছেন। জনসভার জন্য মাঠ প্রায় প্রস্তুত। শুধু মাঠেই দুই লাখ লোকসমাগম সম্ভব। আশপাশের আরও কয়েক কিলোমিটার এলাকা মানুষে মানুষে সয়লাব হয়ে যাবে।’

২০০৪ সালে তৎকালীন মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামের উন্নয়ন ৪০ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। এর মধ্যে একটি দফা ছিল টানেল নির্মাণ। মহিউদ্দিনের সন্তান চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী, বাকলিয়া, চকবাজার) আসনের সাংসদ ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার বাবা প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী টানেল নির্মাণের দাবি করেছিলেন। সেই দাবি আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী পূরণ করেছেন। এজন্য টানেল উদ্বোধনের প্রেক্ষাপটে এবারের জনসভাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের মানুষের মধ্যে বাড়তি উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। গত ডিসেম্বরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে জনসভা করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘কিন্তু এবার যে জনসভা হচ্ছে, এর তাৎপর্য ভিন্ন। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের যে সক্ষমতা দেখিয়েছে এবং এর মধ্য দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে যে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, তার কারণে এবারের জনসভা ভিন্ন বৈশিষ্ট্য বহন করছে। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মানিত নেতৃবৃন্দসহ আমরা ইতোমধ্যে সাংগঠনিক বিভিন্ন সভা করে জনসভাকে সফল করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। শুধু আমাদের দলীয় নেতাকর্মী নয়, লাখ লাখ মানুষ এদিন জনসভায় যোগ দিয়ে সেটিকে জনসমুদ্রে রূপান্তর করবেন বলে আমার বিশ্বাস।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচনমুখী কর্মসূচি হিসেবে জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। এজন্য জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন্ন নির্বাচন নিয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বার্তা দেবেন।

হানিফ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সভাপতি। সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা আশা করছি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হবে। এখন সারা দেশের মানুষ এখন নির্বাচনমুখী। সবাই আস্তে আস্তে নির্বাচনের দিকে চলে যাচ্ছে। আমাদের প্রত্যেকটা কর্মসূচিও নির্বাচনমুখী।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখানে আসবেন নির্বাচনে আমাদের বিজয় নিশ্চিত করার জন্য। জনগণের ভোট যাতে আমাদের পক্ষে আসে সে লক্ষ্যে তিনি বক্তব্য দেবেন। এ হিসেবে চট্টগ্রামের জনসভায় দলীয় সভাপতি হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের জন্য তিনি দিকনির্দেশনা দেবেন। উন্নয়নের জন্য, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের বিকল্প নেই। শেখ হাসিনা সরকার বারবার দরকার- এটা জনগণকে বলা হবে।’

সারাবাংলা/আইসি/আরডি/পিটিএম

আওয়ামী লীগ উদ্বোধন জনসভা টপ নিউজ প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু টানেল শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

বিপিএলে ছক্কার রেকর্ড
৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:৪১

আরো

সম্পর্কিত খবর