বরিশালে প্রস্তুত ৩৩৭৫টি আশ্রয়কেন্দ্র, খোলা সোয়া ৭ হাজার স্কুল
২৪ অক্টোবর ২০২৩ ২০:০৬
বরিশাল: প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ দেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। এই ঝড় মোকাবিলায় বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় তিন হাজার ৩৭৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। সেইসঙ্গে ছয় হাজার ২৪৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এক হাজার ৬৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আশ্রয়ের জন্য খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) বিকেলে বিভাগীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভায় এ তথ্য জানানো হয়। সভায় বলা হয়, বিভাগের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খুলেছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। বিভাগে তিন হাজার ৩৭৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৬১০ জন মানুষ এবং এক লাখ ৫২ হাজার ২২৭টি পশু আশ্রয় নিতে পারবে। এ ছাড়া বিভাগের ৫২টি মুজিবকেল্লাও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রয়েছে।
সভায় জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় কবলিতদের জন্য এক হাজার ৩৮০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২৪ লাখ তিন হাজার টাকা, ৯৬ বান্ডিল টিন ও দুই হাজার পিস কম্বল প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যা দিয়ে তাৎক্ষণিক ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও শুকনো খাবারের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো সাধারণ মানুষের মাঝে বিতরণ করা যাবে।
সভায় বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. শওকত আলী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয়ের তথ্য চূড়ান্তভাবে পাওয়া যায়নি। তবে ঝালকাঠিতে কিছু লোক আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। দুর্গম ও চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলে থাকা মানুষদের সন্ধ্যার মধ্যে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য স্ব স্ব জেলার প্রশাসককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে কাজটি পরিচালনা করছেন। সেইসঙ্গে এ কাজে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (বিডিআরসিএস) স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন।’
সভায় বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল জানান, পর্যাপ্ত জনবল দিয়ে গোটা বিভাগে ৪১২টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। যারা এখন থেকে দুর্যোগ-পরবর্তী সময় পর্যন্ত অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন। আর পানিবাহিত রোগের সবধরনের ওষুধসহ চিকিৎসা সামগ্রীর কোনো ঘাটতি নেই।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বরিশাল বিভাগের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, বিভাগের দুটি নৌ স্টেশনসহ ৪২টি স্টেশন ও সাড়ে ৮০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) বরিশালের আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. শাহাবুদ্দিন মিয়া জানান, যেকোনো ধরনের উদ্ধারকাজে বরিশাল বিভাগের পাঁচ জেলায় ৩২ হাজার ৫০০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছেন।
এদিকে, বৃষ্টি না হলেও বরিশালের আকাশে মেঘ ও মৃদু বাতাস বইছে। নদ-নদীতে পানি বেড়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে অভ্যন্তরীণ রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে আকস্মিক লঞ্চ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন।
নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ বরিশালের সহকারী পরিচালক রিয়াদ হোসেন বলেন, ‘সকাল সাড়ে ১০টা থেকে অভ্যন্তরীণ ও ঢাকা-বরিশাল রুটের সব লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতিটি স্থানে মাইকিংয়ের মাধ্যমে মাছ ধরার নৌকা, যাত্রীবাহী ট্রলারসহ সবাইকে নিরাপদে যেতে বলা হয়েছে।’
সারাবাংলা/পিটিএম