Thursday 09 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মায়ের মৃত্যু ডেঙ্গুতে, হাসপাতালে ৪ মাসের শিশু

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২১ অক্টোবর ২০২৩ ১৭:০৭ | আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৩ ১৯:২৩

শিশু শাথিন, ছবি: সংগৃহীত

মানিকগঞ্জ: শরীরে ডেঙ্গুর ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে হার মেনেছেন গৃহবধূ সাদিয়া ইসলাম(১৮)। আর তার চার মাসের শিশু পুত্র শাথিন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে। সে বর্তমানে ঢাকার মুন্নু মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে মানিকগঞ্জের সদর উপজেলার বড়ঙ্গাখোলা গ্রামে। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার বড়ঙ্গাখোলা গ্রামের হেদায়েত হোসেন বছর দেড়ক আগে একই উপজেলার চামটা গ্রামের সাদিয়া ইসলামকে বিয়ে করেন। গত চার মাস আগে সাদিয়া জন্ম দেয় ফুটফুটে একটি পুত্র সন্তান। পরিবারের প্রথম সন্তানের উচ্ছ্বসিত ছিলেন মা-বাবাসহ স্বজনেরা।

বিজ্ঞাপন

এরই মধ্যে সম্প্রতি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয় গৃহবধূ সাদিয়া। মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে কয়েক দিন চিকিৎসাও নেন তিনি। অবস্থা অবনতি হলে ঢাকার মিরপুরে ইসলামী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গতকাল শুক্রবার (২০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সাদিয়া মারা যান। অন্যদিকে সাদিয়ার শিশু সন্তান শাথিন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে গত মঙ্গলবার মুন্নু মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকার একটি হসপিটালে মায়ের মৃত্যুর খবর আশার সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের লোকজন ছুটে আসেন নিউমোনিয়া আক্রান্ত শাথিনের কাছে।

এমময় শিশুটিকে বুকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন দাদি নুরুন্নাহান ও দাদা আসলাম হোসেন। মা হারানো শিশুটিকে তারা চিন্তিত হয়ে পড়েন। নিউমোনিয়ার ঝুঁকিও এখনো কাটেনি। মায়ের মৃত্যুর খবর শোনার পর ফুটফুটে অবুঝ শিশুটির প্রতি ডাক্তার এবং নার্সসহ আশপাশের বেডের রোগী এবং স্বজনদের আলাদা এক ধরনের সহানুভূতির সৃষ্টি হয়।

বিজ্ঞাপন

দাদি নুরুন্নাহার কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ছেলের বউ যখন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা নেওয়ার মত অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আমাদের ছিল না। আমার নিজের গলার একটি চেইন বন্ধক রাখতে গেলে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা পাওয়া যাবে বলে আমাকে জানানো হয়। এই টাকায় ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। ওদিকে হাতে টাকা না থাকায় ছেলে আমার পাগলের মতো বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করতে থাকে। কোথাও টাকার ব্যবস্থা করতে না পেরে অবশেষে বড় ছেলে শিপন তার আড়াই লাখ টাকার গাড়িটি এক লাখ চল্লিশ হাজার টাকায় বিক্রি করে ছেলের বউকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পাঠানো হয়। টানা ৭-৮দিন ঢাকার ইসলামী হাসপাতালে রাখা হলেও অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। পরে সেখান থেকে গত বৃহস্পতিবার মুগদায় একটি হাসপাতালে নেওয়ার পর গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় মারা যায়। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত চার মাসের নাতিকে নিয়ে গত মঙ্গলবার থেকে আমি মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছি। মা ছাড়া শিশুটি কিভাবে বাঁচবে আল্লাহ জানেন।’

দাদা আসলাম হোসেন জানান, ছেলের বউয়ের মরদেহ গতকাল শুক্রবার রাতেই গ্রামের বাড়ি আনা হয়। শনিবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে দাফন সম্পন্ন হয়।

প্রতিবেশী মাসুদ খান বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। অসহায় পরিবারের সদস্যরা সোনার গহনা এবং একটি লেগুনা গাড়ি বিক্রি করে গৃহবধূকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠিয়েও বাঁচাতে পারেনি। শুধু তাই নয়, শিশু ছেলেটিও চার দিন ধরে নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। মায়ের মৃত্যু ও শিশু ছেলেটি হাসপাতালে, ঘটনাটি খুবই হৃদয়বিদারক।’

সারাবাংলা/আরএ/এনএস

টপ নিউজ মানিকগঞ্জ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর