Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাত পোহালেই উদ্বোধন, স্বপ্নের সেতু দিয়ে ছুটবে ট্রেন

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১০ অক্টোবর ২০২৩ ০০:০০

ঢাকা: শেষ হচ্ছে অপেক্ষার পালা। আরেকটি স্বপ্ন পূরণের হাতছানি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সামনে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু দিয়ে রেল চলাচল শুরু হচ্ছে। মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) লাল-সবুজের পতাকা নেড়ে এর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর উদ্বোধনের একদিন পর অর্থাৎ বুধবার (১১ অক্টোবর) থেকেই পদ্মা রেল সেতু দিয়ে যাত্রী নিয়ে ছুটবে ট্রেন।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত পাথরবিহীন এই রেলপথ উদ্বোধনের সকল প্রস্তুতি শেষ। তবে যশোর পর্যন্ত অংশের কাজ শেষ করতে সময় লাগবে আরও ছয় মাস। প্রাথমিকভাবে এই রেলপথে ছয়টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করবে বলে জানা গেছে। এই রেলপথ পুরোপুরি চালু হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রুটের ট্রেন চলবে।

বিজ্ঞাপন

রেলওয়ের সূত্র মতে, ঢাকা থেকে ভাঙ্গা ও পদ্মা সেতু পার হয়ে মোট ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্প’র উদ্বোধন করা হয় ২০১৮ সালে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনের পর রেলওয়ের ব্যবস্থাপনায় চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ লিমিটেড এই রেললাইন নির্মাণ কাজ শুরু করে।

জানা যায়, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ তিন ভাগে ভাগ করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ঢাকা থেকে মাওয়া ৪০ কিলোমিটার, দ্বিতীয় ধাপে মাওয়া থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার এবং তৃতীয় ধাপে ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ৮৭ কিলোমিটার ব্রডগেজ পাথরবিহীন রেললাইন নির্মাণ হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার পথে রেললাইন বসানো শেষ। ইতোমধ্যে এই পথে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শেষ করেছে। এখন যাত্রী নিয়ে চলার অপেক্ষায়।

বিজ্ঞাপন

রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেলপথের কাজ শেষ। মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় মাওয়া রেলস্টেশনে পদ্মাসেতু দিয়ে রেল যোগাযোগের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনসহ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও অংশ নেবেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের পর দিন থেকে যাত্রী নিয়ে এই পথে ট্রেন চলাচল করবে।

জানা গেছে, উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে সবপ্রস্তুতি শেষ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ইতোমধ্যে কয়েক দফা পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো শেষ করা হয়েছে। কমলাপুর-গেন্ডারিয়া-ভাঙ্গা জংশন পরিদর্শন করেছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, পদ্মাসেতু দিয়ে ট্রেন চলাচলে প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। এখন শুধু অপেক্ষার পালা।

রেলপথমন্ত্রী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা পরীক্ষামূলক ট্রেন চালিয়েছি। আমি নিজে পরিদর্শন করেছি কয়েকবার। কর্মকর্তারা প্রতিদিনই স্পটে থাকছেন। কোথাও কোনো ত্রুটি রয়েছে কিনা তা বারবার চেক করা হচ্ছে। আমাদের প্রস্তুতি শেষ।’

সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে পদ্মাসেতুর রেললাইন দিয়ে ছয়টি যাত্রীবাহী ট্রেন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। যেসব ট্রেন চলবে তার মধ্যে রয়েছে খুলনা-ঢাকা রুটের দুটি আন্তঃনগর ট্রেন (সুন্দরবন ও চিত্রা) ঢাকা-বেনাপোল রুটের বেনাপোল এক্সপ্রেস বর্তমান রুট পরিবর্তন করে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় চলাচল করবে। ঢাকা-কলকাতা রুটের আন্তর্জাতিক ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেসও রুট পরিবর্তন করে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় ঢুকবে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রাজশাহী থেকে গোপালগঞ্জ পর্যন্ত চলাচল করা আন্তঃনগর ট্রেন মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনটিকেও রাজশাহী থেকে ভাঙ্গা হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। খুলনা থেকে গোয়ালন্দ রুটে চলাচলকারী মেইল ট্রেন। নকশিকাঁথা এক্সপ্রেসকে ভাঙ্গা হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

ঢাকা থেকে পদ্মাসেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত মোট রেললাইন ১৭২ কিলোমিটার। এর ১৩ দশমিক ৩ কিলোমিটার লাইনে কোনোরকম পাথর ব্যবহার করা হয়নি। এ রেলপথের অনগ্রাউন্ড লাইন পাথর দিয়ে করা হয়েছে। আর যেগুলো ভায়াডাক্ট অর্থাৎ সেতুর মতো ওপরে রয়েছে, সেখানে পাথরবিহীন লাইন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে পাথরবিহীন রেলপথ দিয়ে ঘণ্টায় ৩০০ থেকে ৪০০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করে থাকে। কিন্তু ৬ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার পদ্মা সেতুতে ট্রেনের গতি নির্ধারণ করা হয়েছে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার।

ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে পদ্মাসেতু এরপর ভাঙ্গা হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রডগেজ লাইনের ২৩ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, মাইনর সেতু ও কালভার্ট মিলিয়ে ২৭৪টি, ৩০টি লেভেল ক্রসিং, ১৩১টি আন্ডারপাস, ৫৮টি মেজর ব্রিজসহ ২০টি আধুনিক স্টেশন করা হবে এই রেলপথে। এরমধ্যে মাওয়া-ভাঙ্গা অংশে হবে ৫টি স্টেশন। এরমধ্যে ভাঙ্গায় নির্মিত হচ্ছে সবচেয়ে বড় ও আধুনিক স্টেশন। এই স্টেশনটি হবে উন্নত দেশের মতো। এটির নির্মাণকাজ শেষ হলে এটি হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে আধুনিক রেল জংশন।

ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত মোট ২০ স্টেশনের ১৬টি নতুন করে নির্মাণ করতে হচ্ছে। আর পুরনো চারটি স্টেশনকে ঢেলে সাজানো হবে। এ ছাড়া সেতুর দুই প্রান্তে নির্মাণ করা হচ্ছে চারটি রেলস্টেশন। প্রতিটি স্টেশনে থাকবে অফিস ভবনসহ আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা। এটি হবে দেশের উড়াল ও লেভেলক্রসিং বিহীন প্রথম রেললাইন। এই পথ পুরোপুরি চালু হলে ঢাকা থেকে যশোর পৌঁছানো যাবে মাত্র দুই ঘণ্টায়।

প্রমত্তা পদ্মার বুকে গড়ে তোলা সেতুর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন, আর তার নিচে চলবে ট্রেন- এমনই পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু পদ্মাসেতু রেলসংযোগে দেরি হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। ফলে দেড় বছর আগে এক জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন করা হয় স্বপ্নের পদ্মাসেতু।

এবার আংশিক উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ট্রেন লাইন। জানা যায়, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলা রাজধানী ঢাকার সঙ্গে রেলপথে যুক্ত হবে। প্রকল্পটিতে ব্যয় হচ্ছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। যদিও পদ্মাসেতুর খরচের চেয়ে বেশি। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ২১০ কোটি ১১ লাখ টাকা। আর ঋণ চুক্তির আওতায় চায়না এক্সিম ব্যাংক দিচ্ছে বাকি টাকা দিচ্ছে।

পদ্মাসেতু রেললিংক প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কানসালটেন্ট হিসেবে এর প্রয়োজনীয় তদারকি ও পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

উদ্বোধন টপ নিউজ ট্রেন পদ্মা রেল সেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর