Saturday 11 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বপ্নজয়ী পিরু মোল্লার গল্প মুগ্ধ নয়নে শুনলেন প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৮ অক্টোবর ২০২৩ ১৯:০৪ | আপডেট: ৮ অক্টোবর ২০২৩ ২১:৩৬

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা পিরু মোল্লা বলেছেন, সরকারি চাকরি প্রাপ্তিতে আপনি মেধাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে নিরেপেক্ষতা, স্বচ্ছতা ও যোগ্যতার মূল্যায়ন নিশ্চিত করেছেন। ফলে ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে জনগণের সেবায় নিয়োজিত হতে পেরেছি। আপনাকে আমরা কথা দিতে চাই, আমরা হবো স্বপ্নরথের সারথি। অজপাড়াগাঁয়ের ভূমিহীন কৃষকের যে ছেলেটি আজ প্রজাতন্ত্রের নবীন কর্মচারী, জাতির ঋণ পরিশোধের সামান্য সুযোগও সে হাতছাড়া করবে না।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৮ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিসিএস কর্মকর্তাদের ৭৫তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ বিতরণ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন ৫টি প্রকল্প/কর্মসূচির আওতায় নির্মিত ভবন ও জেমস(GEMS) সফটওয়্যার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বপ্নজয়ী এই তরুণের গল্প শোনেন প্রধানমন্ত্রী। পরে প্রধানমন্ত্রী এই স্বপ্নজয়ী প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তার গল্প শুনে ডেকে নিয়ে কথা বলেন তার সঙ্গে।

বিজ্ঞাপন

৪০তম বিসিএস ক্যাডার হন পিরু মোল্লা। তার আজকের অবস্থানের সংগ্রামী জীবনের স্বপ্নে আসতে তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে নানা বাধা। সেই অবস্থান থেকে আজ তিনি সহকারী মহাহিসাবরক্ষক। বর্তমানে সংযুক্ত আছেন ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট একাডেমিতে (ফিমা)।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্‌ উদ্দিন চৌধুরী, বাংলাদেশ লোক-প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিস)’র রেক্টর আশরাফ উদ্দিন।

অনুষ্ঠানে ৭৫তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের চারজন প্রশিক্ষণার্থী অনুভূতি ব্যক্ত করেন। এদের মধ্যে পিরু মোল্লাও একজন। তিনি বলেন, ‘আজ আমি স্বপ্নপূরণ ও ভাগ্য বদলের গল্প বলতে এসেছি। এই স্বপ্নপূরণ আমার মতো হাজারও কর্মপ্রত্যাশী তরুণের। এই ভাগ্যবদল চিরায়ত বাংলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কোটি প্রাণের।’

তিনি বলেন, ‘আমি এসেছি ফরিদপুর জেলার সুবারামপুর গ্রামের ভূমিহীন এক কৃষক পরিবার থেকে। বাবা-ভাইদের সঙ্গে অন্যের জমিতে সেচ দেওয়া, চুক্তিতে ধান-পাট কাটা, ক্ষেত নিড়ানি দেওয়াই ছিল তার পরিবারের উপার্জনের উৎস। ঝড়-বৃষ্টির রাতে ছনের ঘরের চালা উড়ে যাওয়ার ভয়ে ঘুম হতো না। আমার ইচ্ছা ছিল প্রকৌশলী হওয়ার। কিন্তু বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যেতে পারব কি না, সে আশঙ্কা ছিল। আমার ইঞ্জিনিয়ার পড়ার ইচ্ছাটি প্রায় শেষই হতে যাচ্ছিল। যদি না রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত পদার্থ ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ার সুযোগ না পেতাম। কেন না অর্থের অভাবে কেবল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোথাও ভর্তি ফরম তুলতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবর্ষে পড়ার সময় মাঝে মধ্যেই আমার ভাইয়ের সঙ্গে আমাকে রাজমিস্ত্রির কাজে যেতে হত। প্রাইভেট টিউশনি না পাওয়া পর্যন্ত প্রথম বর্ষের বেশিরভাগ সময় আমি সকালে নাস্তা করতে পারিনি। হলে ১৫ টাকায় দুপুরের খাবার ১২ টাকায় রাতের খাবার, এই মোট ২৭ টাকায় দুবেলা খাবারের খরচ মিটত। রাতের খাবার থেকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত প্রায় ১৮ ঘণ্টা না খেয়ে থেকে আমার মনে আছে, ল্যাব থেকে আসার সময় ক্ষুধায় বাঁকা হয়ে যেতাম আমি।’

স্বপ্নজয়ে অনিশ্চিত জীবনে সংগ্রাম থেকে সাফল্যের সিঁড়িতে এসে প্রধানমন্ত্রীর সামনে কথা বলার সুযোগ পেয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানান পিরু মোল্লা। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া অসংখ্য তরুণের মতো আমারও স্বপ্ন ছিল সিভিল সার্ভিসের চাকরি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সরকারি চাকরি প্রাপ্তিতে আপনি মেধাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে নিরেপেক্ষতা, স্বচ্ছতা ও যোগ্যতার মূল্যায়ন নিশ্চিত করেছেন। ফলে ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে জনগণের সেবায় নিয়োজিত হতে পেরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।’

কিন্তু পিরু মোল্লার গল্পটা তখনও শেষ হয়নি। তিনি বলেন, ‘২০২০ সালের আগস্ট মাসের ৩ তারিখে আমার প্রথম চাকরিতে যোগদানের দিনই আব্বার ফুসফুসের ক্যান্সার ধরা পড়ে। এর দুই মাস আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আমার ভগ্নিপতি মারা যান। সন্তানসম্ভবা বোন ও তার দুই সন্তানের ঠাঁই হয়েছিল আমাদের পরিবারে। চরম আর্থিক সংকটে যখন আব্বার চিকিৎসা প্রায় বন্ধ, তখন আপনার কাছে আর্থিক সাহায্য চেয়ে আবেদন জানিয়েছিলাম। আশা ছিল, হয়ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাড়া পাব। কিন্তু এত দ্রুত সাড়া পাব, এটি ছিল কল্পনাতীত। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক আমার বাবাকে ফোন করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য প্রদানের খবরটি জানান। কিন্তু চিকিৎসা শুরুর মাত্র ১৫ মাস পর আমার আব্বা মারা যান। এর কিছুদিন পর মেজো ভাই ও বিধবা বোনের শরীরেও ক্যানসার শনাক্ত হয়। পরিবারের এমন মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনিই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। আমাদের বিপদে সাহায্যকারী হিসেবে বারবার আবির্ভূত হওয়ায় মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি কৃতজ্ঞতা জানানোর সুযোগ পেয়ে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি।’

দেশের উন্নয়নে বিভিন্ন মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে বিশ্বের দরবারে নতুনরূপে পরিচিত করেছেন বলেও উল্লেখ করেন নবীন এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণ করে দক্ষিণবঙ্গের মানুষের ভাগ্য বদলে দিয়েছেন। আমি গ্রামে যাই পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে। অসুস্থ বাবাকে নিয়ে ফেরিতে পদ্মা পাড়ি দিয়ে ঢাকায় আসার পথে আব্বাকে বলতাম, আব্বা, আর কয়টা দিন কষ্ট করেন। ইনশাল্লাহ, কেমো থেরাপির এই ধকল নিয়ে আপনাকে আর ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।’

সেই প্রমত্ত পদ্মা এখন চোখের পলকে পাড় হয়ে যাওয়ার সময় অনুভব করতে পারি, আপনি কীভাবে এদেশের মানুষের চিরায়ত দুঃখের গল্পগুলোকে আনন্দের আখ্যানে পরিণত করেছেন। ২০৪১ সালের মধ্যে এদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ তথা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপান্তরের যে নিরন্তর প্রচেষ্টায় আপনি আত্মনিয়োগ করেছেন। আপনাকে আমরা কথা দিতে চাই, আমরা হবো সেই স্বপ্নরথের সারথি। অজপাড়াগাঁয়ের ভূমিহীন কৃষকের যে ছেলেটি আজ প্রজাতন্ত্রের নবীন কর্মচারী, জাতির ঋণ পরিশোধের সামান্য সুযোগও সে হাতছাড়া করবে না, ইনশাল্লাহ।’

সারাবাংলা/এনআর/একে

টপ নিউজ পিরু মোল্লা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

এক বছর পর ভারত দলে ফিরলেন শামি
১১ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:৩৮

আরো

সম্পর্কিত খবর