বাবাকে খুনের পর লাশ টুকরো করা ছেলে রিমান্ডে
৭ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:৫৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে বাবাকে খুনের পর লাশ কেটে টুকরো করা ছেলেক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফজতে নেওয়ার অনুমতি পেয়েছে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
শনিবার (৭ অক্টোবর) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম জুয়েল দেব তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন।
বাবাকে খুনের অভিযোগে সফিকুর রহমান জাহাঙ্গীরকে (৩০) শুক্রবার বিকেলে ঢাকার হাজারীবাগের একটি ট্যানারি থেকে গ্রেফতার করে পিবিআই। চট্টগ্রামে ফিরিয়ে আনার পর শনিবার সকালে তাকে নিয়ে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে তার বাবার খণ্ডিত মাথার সন্ধানে তল্লাশি চালায় পিবিআই।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিটের পরিদর্শক মো. ইলিয়াস খাঁন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সফিকুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছিল। শুনানি শেষে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।’
পিবিআই জানিয়েছে, বাবাকে খুনের পর পালিয়ে ঢাকায় গিয়ে সফিকুর হাজারীবাগের একটি ট্যানারিতে চাকরি নিয়েছিল। টানা ৩৬ ঘণ্টার অভিযানে তার অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এর আগে, পিবিআই সফিকুরের মা ছেনোয়ারা বেগম (৫০), বড় ভাই মোস্তাফিজুর রহমান (৩২) ও স্ত্রী আনারকলিকে (২৪) গ্রেফতার করে।
খুনের শিকার মো. হাসান (৬১) চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার কাথারিয়া ইউনিয়নের বড়ইতলী গ্রামের সাহাব মিয়ার ছেলে।
গত ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নগরীর পতেঙ্গা বোট ক্লাবের অদূরে ১২ নম্বর গেইটে একটি ট্রলিব্যাগ পাওয়া যায়। কফি রঙের ট্রলিব্যাগে ছিল মানব শরীরের ২ হাত, ২ পা, কনুই থেকে কাঁধ এবং হাঁটু থেকে উরু পর্যন্ত অংশ। এ ঘটনায় পতেঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল কাদির বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এর দুই দিনের মাথায় ২৩ সেপ্টেম্বর সকালে নগরীর আকমল আলী সড়কের খালপাড়ে একটি খাল থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় টেপে মোড়ানো শরীরের আরেকটি খণ্ড উদ্ধার করে পিবিআই। এছাড়া আঙ্গুলের ছাপ ও নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে নিহত ব্যক্তির পরিচয়ও নিশ্চিত করা হয়। গ্রেফতার করা হয় হাসানের স্ত্রী ছেনোয়ারা ও বড় ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানকে। তাদের পাঁচদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
২৭ সেপ্টেম্বর আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বাবাকে খুনের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান জানান, প্রায় ২৮ বছর নিখোঁজ থাকার পর দুই বছর আগে পরিবারের কাছে ফিরে আসেন হাসান। ফিরেই তিনি ভিটেমাটি বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। এ নিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে তার বিরোধ বাঁধে।
২০ সেপ্টেম্বর সকালে হাসান ও তার স্ত্রী, বড় ছেলে মোস্তাফিজুর নগরীর ইপিজেড থানার আকমল আলী সড়কের পকেট গেইট এলাকার জমির ভিলায় ছোট ছেলে সফিকুর রহমান জাহাঙ্গীরের বাসায় ছিলেন। সেখানে বাবা ও দুই ভাইয়ের মধ্যে এ নিয়ে ঝগড়া শুরু হয়। এর মধ্যেই বড় ছেলে তার গলা টিপে ধরলে মারা যান হাসান। ঘটনা জানাজানি হওয়ার ভয়ে দুই ভাই মিলে লাশ গুমের উদ্দেশে সেটি কেটে কয়েক টুকরো করে সেগুলো বিভিন্নস্থানে ফেলে দেয়।
এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলায় বাবার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় ছোট ছেলে সফিকুরের স্ত্রী আনারকলিকে। পরদিন আনাকলিকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের নির্দেশে তিন দিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই। ৩ অক্টোবর আনারকলি আদালতে জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে আনারকলি জানান, ২০ সেপ্টেম্বর সকালে নিজ বাসার একটি কক্ষে শ্বশুর হাসানকে তার ভাসুর মোস্তাফিজুর ও স্বামী সফিকুর মিলে একটি বস্তায় ঢোকাতে দেখেন। তবে জীবিত নাকি মৃত সেটা বুঝতে পারেননি। বিকেলে আনারকলি জানতে পারেন, তার শ্বশুরকে মেরে ফেলা হয়েছে। ভাসুর ও স্বামী হাসানের লাশ কেটে কয়েক টুকরো করেন। লাশের টুকরোগুলো লাগেজ, ব্যাগ ও বস্তায় ভরেন তারা। রাতে একজন অজ্ঞাত লোকের মাধ্যমে তারা একটি বস্তা বাইরে ফেলে দেন।
পরদিন সকালে লাগেজ ও স্কুলব্যাগ নিয়ে স্বামী ও ভাসুরের সঙ্গে বের হন আনারকলি। লাগেজ নিয়ে ফেলেন পতেঙ্গার ১২ নম্বর ঘাট এলাকায়। স্কুলব্যাগে ছিল খণ্ডিত মাথা, সেটা নিয়ে আনারকলি ও সফিকুর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে যান। মাথাসহ ব্যাগ পাথরের ব্লকের ভেতরে ফেলে দিতে চাইলে আনারকলি ব্যাগ রেখে দেন। এরপর সফিকুর শুধু খণ্ডিত মাথাটি পাথরের ব্লকের ভেতর ফেলে দেন।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম