Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাবাকে খুনের পর লাশ টুকরো করা ছেলে গ্রেফতার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৭ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:০২

সফিকুর রহমান জাহাঙ্গীর, ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে বাবাকে খুনের পর লাশ কেটে টুকরো করা আরেক ছেলেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তাকে নিয়ে নিহতের খণ্ডিত মাথার সন্ধানে নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে তল্লাশি চালাচ্ছে সংস্থাটি।

পিবিআই জানিয়েছে, বাবাকে খুনের পর পালিয়ে ঢাকায় গিয়ে নাম-পরিচয় গোপন করে একটি কারখানায় চাকরি নিয়েছিলেন গ্রেফতার সফিকুর রহমান জাহাঙ্গীর (৩০)। গ্রেফতার এড়াতে যেকোনো ধরনের ডিজিটাল ডিভাইস থেকে নিজেকে দূরে রেখেছিলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকার হাজারীবাগের একটি কারখানা থেকে সফিকুরকে গ্রেফতার করে পিবিআই টিম। শনিবার (৭ অক্টোবর) সকাল থেকে তাকে নিয়ে খণ্ডিত মাথার সন্ধানে তল্লাশি চলছে।

এর আগে পিবিআই সফিকুরের মা ছেনোয়ারা বেগম (৫০), বড় ভাই মোস্তাফিজুর রহমান (৩২) ও স্ত্রী আনারকলিকে (২৪) গ্রেফতার করে।

 

সফিকুর রহমান জাহাঙ্গীরকে নিয়ে নিহতের খণ্ডিত মাথার সন্ধানে সমুদ্র সৈকতে তল্লাশি চালায় পিবিআই, ছবি: সারাবাংলা

সফিকুর রহমান জাহাঙ্গীরকে নিয়ে নিহতের খণ্ডিত মাথার সন্ধানে সমুদ্র সৈকতে তল্লাশি চালায় পিবিআই, ছবি: সারাবাংলা

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিটের পরিদর্শক মো. ইলিয়াস খাঁন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাবাকে খুনের পর সফিকুর পালিয়ে ঢাকায় চলে যায়। সুমন নাম উল্লেখ করে হাজারীবাগে একটি ট্যানারিতে চাকরি নেয়। পুলিশ যাতে কোনোভাবে তাকে শনাক্ত করতে না পারে, সেজন্য ডিজিটাল ডিভাইস থেকে নিজেকে দূরে রেখেছিলেন। আমরা টানা ৩৬ ঘণ্টা ধরে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় তাকে শনাক্ত করতে অভিযান চালিয়েছি।’

‘আমাদের কাছে সফিকুরের ছবি ছিল। একপর্যায়ে আমরা হাজারীবাগের ট্যানারিতে তার অবস্থানের বিষয়ে নিশ্চিত হই। গ্রেফতারের সময় তিনি নিজেকে সুমন এবং বাড়ি মীরসরাই উপজেলায় বলে পরিচয় দেয়। কিন্তু ছবি-এনআইডি দেখানোর পর নিজেকে আর আড়াল করতে পারেনি।’

বিজ্ঞাপন

খুনের শিকার মো. হাসান (৬১) চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার কাথারিয়া ইউনিয়নের বড়ইতলী গ্রামের সাহাব মিয়ার ছেলে।

গত ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নগরীর পতেঙ্গা বোট ক্লাবের অদূরে ১২ নম্বর গেইটে একটি ট্রলিব্যাগ পাওয়া যায়। কফি রঙের ট্রলিব্যাগে ছিল মানব শরীরের ২ হাত, ২ পা, কনুই থেকে কাঁধ এবং হাঁটু থেকে উরু পর্যন্ত অংশ। এ ঘটনায় পতেঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল কাদির বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এর দুইদিনের মাথায় ২৩ সেপ্টেম্বর সকালে নগরীর আকমল আলী সড়কের খালপাড়ে একটি খাল থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় টেপে মোড়ানো শরীরের আরেকটি খণ্ড উদ্ধার করে পিবিআই। এছাড়া আঙ্গুলের ছাপ ও নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে নিহত ব্যক্তির পরিচয়ও নিশ্চিত করা হয়। গ্রেফতার করা হয় হাসানের স্ত্রী ছেনোয়ারা ও বড় ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানকে। তাদের পাঁচদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

২৭ সেপ্টেম্বর আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বাবাকে খুনের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান জানান, প্রায় ২৮ বছর নিখোঁজ থাকার পর দুইবছর আগে পরিবারের কাছে ফিরে আসেন হাসান। ফিরেই তিনি ভিটেমাটি বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। এ নিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে তার বিরোধ বাধে।

২০ সেপ্টেম্বর সকালে হাসান ও তার স্ত্রী, বড় ছেলে মোস্তাফিজুর নগরীর ইপিজেড থানার আকমল আলী সড়কের পকেট গেইট এলাকার জমির ভিলায় ছোট ছেলে সফিকুর রহমান জাহাঙ্গীরের বাসায় ছিলেন। সেখানে বাবা ও দুই ভাইয়ের মধ্যে এ নিয়ে ঝগড়া শুরু হয়। এর মধ্যেই বড় ছেলে তার গলা টিপে ধরলে মারা যান হাসান। ঘটনা জানাজানি হওয়ার ভয়ে দুই ভাই মিলে লাশ গুমের উদ্দেশে সেটি কেটে কয়েক টুকরো করে সেগুলো বিভিন্নস্থানে ফেলে দেন।

সফিকুর রহমান জাহাঙ্গীরকে নিয়ে নিহতের খণ্ডিত মাথার সন্ধানে সমুদ্র সৈকতে তল্লাশি চালায় পিবিআই, ছবি: সারাবাংলা

সফিকুর রহমান জাহাঙ্গীরকে নিয়ে নিহতের খণ্ডিত মাথার সন্ধানে সমুদ্র সৈকতে তল্লাশি চালায় পিবিআই, ছবি: সারাবাংলা

এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলায় বাবার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় ছোট ছেলে সফিকুরের স্ত্রী আনারকলিকে। পরদিন আনাকলিকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের নির্দেশে তিনদিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই। ৩ অক্টোবর আনারকলি আদালতে জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দিতে আনারকলি জানান, ২০ সেপ্টেম্বর সকালে নিজ বাসার একটি কক্ষে শ্বশুর হাসানকে তার ভাসুর মোস্তাফিজুর ও স্বামী সফিকুর মিলে একটি বস্তায় ঢোকাতে দেখেন। তবে জীবিত নাকি মৃত সেটা বুঝতে পারেননি। বিকেলে আনারকলি জানতে পারেন, তার শ্বশুরকে মেরে ফেলা হয়েছে। ভাসুর ও স্বামী হাসানের লাশ কেটে কয়েক টুকরো করেন। লাশের ‍টুকরোগুলো লাগেজ, ব্যাগ ও বস্তায় ভরেন তারা। রাতে একজন অজ্ঞাত লোকের মাধ্যমে তারা একটি বস্তা বাইরে ফেলে দেন।

পরদিন সকালে লাগেজ ও স্কুলব্যাগ নিয়ে স্বামী ও ভাসুরের সঙ্গে বের হন আনারকলি। লাগেজ নিয়ে ফেলেন পতেঙ্গার ১২ নম্বর ঘাট এলাকায়। স্কুলব্যাগে ছিল খণ্ডিত মাথা, সেটা নিয়ে আনারকলি ও সফিকুর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে যান। মাথাসহ ব্যাগ পাথরের ব্লকের ভেতরে ফেলে দিতে চাইলে আনারকলি ব্যাগ রেখে দেন। এরপর সফিকুর শুধু খণ্ডিত মাথাটি পাথরের ব্লকের ভেতর ফেলে দেন।

পিবিআই পরিদর্শক ইলিয়াস খাঁন সারাবাংলাকে বলেন, ‘গ্রেফতার আনাকলির তথ্য অনুযায়ী পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে টানেলের প্রবেশমুখের পাশে পুলিশ বক্সের পেছনে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় তল্লাশি চালিয়েছি। কিন্তু খণ্ডিত মাথাটি পাওয়া যায়নি। এখন আমরা আবার সফিকুরকে নিয়ে খণ্ডিত মাথার সন্ধানে তল্লাশি চালাচ্ছি।’

খুনের মোটিভ প্রসঙ্গে সফিকুর কি বলেছেন, এমন প্রশ্নে ইলিয়াস বলেন, ‘সফিকুর জানিয়েছে, তার বাবা হত্যা মামলার আসামি হয়ে ২৮ বছর নিরুদ্দেশ ছিলেন। ফিরে আসার পর সম্পদ বিক্রির চেষ্টা করছিলেন, সেটা একটা বিষয়। তার বাবার দ্বিতীয় সংসার ছিল। তাদের সম্পত্তির ভাগ দিতে হবে কি না, আরেকটি বিষয়। এছাড়া বাবা ফেরত আসার পর মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাবা তার মাকে বানটোনা করেছে এমন সন্দেহও ছিল। এসব বক্তব্য আমরা তদন্ত করে দেখছি।’

সারাবাংলা/আরডি/এনএস

চট্টগ্রাম টপ নিউজ বাবাকে খুন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর