রাণীনগরে বেড়িবাঁধ ভেঙে ৯০০ পরিবার পানিবন্দি
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:০২ | আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২০:২৫
নওগাঁ: জেলার রাণীনগর উপজেলায় ছোট যমুনা নদীর নান্দাইবাড়ি-মালঞ্চি ও মালঞ্চি-কৃষ্ণপুর দুই স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে তিনটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফলে তিন গ্রামের প্রায় ৯০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে অর্ধশতাধিক পুকুরের মাছ। ডুবেছে কয়েকটি মাঠের হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল। এতে করে চরম বিপাকে পড়েছেন বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ।
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভোর রাতে বেড়িবাঁধটি ভেঙে যায়। জানা গেছে, কয়েকদিনের টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ছোট যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আসছিল। এতে আতঙ্কে ছিলেন বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা। এরই মধ্যে বুধবার ভোররাতে উপজেলার গোনা ইউনিয়নের নান্দাইবাড়ি-মালঞ্চি মাদরাসা সংলগ্ন এবং মালঞ্চি-কৃষ্ণপুর ভাটা এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। ফলে প্লাবিত হয় বেড়িবাঁধ এলাকার নান্দাইবাড়ি, মালঞ্চি ও কৃষ্ণপুর তিন গ্রাম এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েন তিন গ্রামের প্রায় ৯০০ পরিবার। ভেসে যায় অর্ধশতাধিক পুকুরের মাছ। ডুবেছে কয়েকটি মাঠের হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল। মাঠে থাকা কাঁচা মরিচ, পটল, সবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকলে রাণীনগর-আত্রাই মেইন সড়কের কয়েকটি স্থানে পাকা সড়কও ভাঙার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
স্থানীরা জানান, প্রতি বছরই এই বেড়িবাঁধ ভাঙে। নাম মাত্র তা মেরামত করা হয়। এতে করে প্রতি বছরই তিন গ্রামের মানুষ ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েন। গত বছর এবং তার আগের বছর ভাঙলে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে নান্দাইবাড়ি-মালঞ্চি ও কৃষ্ণপুর বেড়িবাঁধ মেরামত করা হয়। কিন্তু সঠিকভাবে কাজ না হওয়ায় এবারও বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এতে প্রতি বছর ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাদের দাবি, বস্তাভর্তি বালু দিয়ে মেরামত না করে সিসি ব্লকের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে বাঁধ মেরামত করা হলে বন্যা থেকে রক্ষা পাবেন তারা।
নান্দাইবাড়ি গ্রামের ফারুক বলেন, ‘বুধবার সকাল হওয়ার আগে আমার ঘরের ভিতর হাটু পানি হয়ে যায়। পুকুরে গিয়ে দেখি সব মাছ ভেসে গেছে। এতে আমার প্রায় লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।’
একই এলাকার এছাহক আলী জানান, বেড়িবাঁধ ভাঙনের কারণে তার দুইটি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। প্লাবিত হয়েছে ফসল, সবজির ক্ষেতসহ বাড়িঘর।
রাণীনগর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান বলেন, বেড়িবাঁধের আর কোথাও যেন নতুন করে ভেঙে না যায়, এ বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতা নিয়ে ভেঙে যাওয়া অংশে বস্তায় বালি ফেলে বন্ধ করার কার্যক্রম চলছে।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল বলেন, ভেঙে যাওয়া অংশগুলো আমরা উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ ও স্থানীয়দের সহযোগিতা নিয়ে জিও ব্যাগের মাধ্যমে মেরামতের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে আরও কয়েকদিন নদীতে পানি বাড়তে পারে। নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সারাবাংলা/এআরপি/এনএস