‘রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ সীমিত, বিকশিত হয়নি রাঙ্গামাটির পর্যটন খাত’
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:১৪ | আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৪:২২
আজ ২৭ সেপ্টেম্বর। বিশ্ব পর্যটন দিবস। দেশে এ বছর দিবসটি পালন করা হচ্ছে ‘পর্যটনে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ’ প্রতিপাদ্যে। দেশের পর্যটন শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের তিন পাহাড়ি জেলা নিয়ে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম। কিন্তু গত কয়েক দশকে দেশের পর্যটন খাত যেভাবে এগিয়েছে তার কতটুকু প্রভাব পড়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে? স্থানীয়রা এ খাতের জন্য কতুটুকু এগিয়ে এসেছেন? পার্বত্য চট্টগ্রামের পর্যটন কতটুকু ভূমিকা রাখছে দেশের পর্যটন খাতে?
পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের পর্যটন শিল্প নিয়ে ভাবনা, আক্ষেপ, প্রত্যাশা ও করণীয় নিয়ে সারাবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন রাঙ্গামাটির প্রথম ইকো-রিসোর্ট রাইন্যা টুগুন ইকো রিসোর্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘ত্রিমাত্রিক’-এর প্রধান নির্বাহীও তিনি। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সারাবাংলার রাঙ্গামাটি ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট প্রান্ত রনি
সারাবাংলা: ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি হয়, এর পর পাহাড়ে পর্যটন শিল্প কতটুকু এগোনোর কথা ছিল এবং এই সময়ে কতটুকু এগিয়েছে বলে মনে করেন?
মোহাম্মদ ওমর ফারুক: পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি একটি অনন্য ঘটনা। চু্ক্তির আগের সময়ের তুলনায় পরের সময়ে বেশকিছু ইতিবাচক ও গুণগত পরিবর্তন এসেছে। কিছু বিষয় এখনো অমীমাংসিত থাকলেও চুক্তির পরে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে দেশের বাইরের মানুষের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়। সরকারও পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নে আরও বেশি মনোযোগী হয়। বিশেষত প্রত্যন্ত অঞ্চলেও সড়ক যোগাযোগ ও অবকাঠামো খাতে চোখে পড়ার মতো উন্নয়ন হয়। ফলে স্থানীয়দের যোগাযোগ ও উৎপাদিত পণ্য আনা-নেওয়ায় যেমন সুবিধা হয়েছে, তেমনি পার্বত্য চট্টগ্রামের অপার সৌন্দর্য দেখতে আসা ভ্রমণ পিপাসুদেরও প্রত্যন্ত অঞ্চলে অভিগম্যতা বেড়ে যাওয়ার অপরিসীম সুযোগও তৈরি হয়েছে।
এ চুক্তি পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে এখানকার জনবৈচিত্র্য, ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐতিহ্য, জীবনাচার ইত্যাদিকে বিশেষভাবে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করায় পর্যটকদের কাছে আরও বেশি ইতিবাচক বার্তা পৌঁছেছে। একজন পর্যটক কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই দেখতে আসেন না, মানুষও দেখতে আসেন। বৈচিত্র্যময় জীবনধারা ও সংস্কৃতির আস্বাদ নিতে আসেন। তার ওপরে পাহাড় ও হ্রদের অপূর্ব ও অনন্য সাধারণ মিতালীতে গড়ে ওঠা রাঙ্গামাটি এরই মধ্যে সৌন্দর্যের রানি পরিচিতি পেয়েছে ও প্রকাশিতও হয়েছে। ভূমিরূপ, পাহাড়, পর্বত, ঝরনা, নদী, দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ, জীববৈচিত্র্য সব মিলিয়ে পুরো রাঙ্গামাটির প্রতিটি এলাকাকে প্রকৃতি তার আপন মহিমায় সাজিয়েছে। এককথায় পর্যটককে আকর্ষণ করার জন্য সব ধরনের উপাদান রাঙ্গামাটিতে রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেভাবে রাঙ্গামাটির পর্যটন বিকশিত হয়নি।
শহর এলাকাগুলো প্রথাগত পর্যটনের জন্য সীমাবদ্ধ থাকলেও রাঙ্গামাটির অসীম সম্ভাবনাময় পর্যটন খাত হচ্ছে ইকো-পর্যটন, কমিউনিটি পর্যটন, অ্যাডভেঞ্চার পর্যটন, জৈব কৃষি পর্যটন ও সাংস্কৃতিক পর্যটন প্রভৃতি। এসব খাত শ্রমনিবিড় এবং অন্যান্য বহু খাতসংশ্লিষ্ট বলে ব্যাপক কর্মসংস্থান ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের অবকাশ ছিল। যে প্রকারে ও আকারে পর্যটন খাতকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার ছিল ঠিক সেভাবে আমরা প্রায়োগিক গুরুত্ব দিতে পারিনি।
সারাবাংলা: পর্যটন খাত যথাযথভাবে এগিয়ে না যাওয়ার পেছনে প্রতিবন্ধকতা কী মনে করেন?
মোহাম্মদ ওমর ফারুক: পর্যটন খাত যতটা না একক খাত তার চেয়ে অনেক বেশি সমন্বিত উদ্যোগ। এ খাতের জন্য সামাজিক ও রাজনৈতিক ঐকমত্য এবং অনুমোদন যেমন দরকার, তেমনি রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি উদ্যোগ এবং আন্তঃবিভাগীয় সমন্বয়ও অপরিহার্য। স্বল্পমেয়াদি, মধ্য মেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি কার্যকর ও ফলপ্রসূ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সেভাবে বাস্তবায়নে মনোযোগী হওয়া আবশ্যক। এ কাজগুলো আমরা যথাযথভাবে করতে পারিনি। প্রথাগত পর্যটনের বাইরে ইকো-পর্যটন, অ্যাডভেঞ্চার পর্যটন বা অন্য যেসব পর্যটনের কথা বাগে বলেছি, এগুলোতে উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও পৃষ্ঠপোষকতা নেই বললেই চলে। পর্যটন শিল্পে প্রথাগত দৃষ্টিভঙ্গির বদলে আধুনিক, উদার, পরিবেশ ও প্রতিবেশবান্ধব এবং স্থানীয় ও কমিউনিটিসংযুক্ত পর্যটন বিকাশে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ খুবই সীমিত।
সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বৈশ্বিক সংকট ও মহামারির প্রভাব সবার আগে পর্যটন শিল্পের ওপর পড়ে এবং সবার শেষে এসে স্বাভাবিক হয়। অথচ অতি সংবেদনশীল এই খাতে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা দেয়া ও সহায়ক অবকাঠামো তৈরি করা হয়নি। আবার নিরাপত্তা ও স্বচ্ছন্দ্য বিষয়ে নিশ্চিত না হলে
কোনো পর্যটক কোনো এলাকায় ভ্রমণে যাবেন না। এ ক্ষেত্রে রাঙ্গামাটি নিয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতিবাচক প্রচারণা আছে। ছোট-খাটো ও বিচ্ছিন্ন ঘটনাও নেতিবাচক প্রচারণায় ‘চেইন রি-অ্যাকশন’ হিসেবে এ খাতে বড় প্রভাব ফেলে। উদ্যোক্তা ও যুবদের ব্যাপক প্রশিক্ষণ, কারিগরি সহায়তা প্রদান ও পর্যটন খাতে কমিউনিটির সংযুক্তির মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি বলে আশানুরূপ কমিউনিটি আস্থা অর্জন এবং অংশগ্রহণও হয়নি।
কমিউনিটি পর্যটন, ইকো-পর্যটন, অ্যাডভেঞ্চার পর্যটন ও সাংস্কৃতিক পর্যটনের বিকাশ ঘটানোর জন্য অর্থায়নের সুযোগকে কার্যকরভবে বিবেচনায় আনা হয়নি। ন্যূনতম একটি ঘূর্ণায়মান তহবিল পর্যন্ত গঠন করা হয়ে ওঠেনি। পর্যটন ও পর্যটন খাতে যুক্ত অংশীজনদের সমন্বিতভাবে উন্নয়নে সমবেত, কার্যকর ও ফলপ্রসূ করার জন্য দৃশ্যমান ও নিয়মিত কোনো দফতর বা সংস্থাও নেই।
সারাবাংলা: এত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও পাহাড়ে পর্যটন শিল্প যতটুকু এগিয়েছে তার কৃতিত্ব কার? সরকারের নাকি ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের?
মোহাম্মদ ওমর ফারুক: নির্জলা সত্য হলো রাঙ্গামাটিতে পর্যটন শিল্পের বিকাশ এখনো ভঙ্গুর। তবে আশার কথা, প্রায় সব মহল থেকেই একে সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। সরকার তো ব্যবসা করে না। সহায়ক পরিবেশ তৈরি, অবকাঠামো উন্নয়ন, নীতি সহায়তা, তহবিল গঠন ইত্যাদি নানাভাবে শিল্প উদ্যোগকে প্রণোদিত ও প্রভাবিত করে। তাই এ শিল্পের অগ্রগতিতে সরকারের কৃতিত্ব তো আছেই। তবে আর সব খাতের মতো শিল্প হিসেবে মূল উদ্যোগ উদ্যোক্তাকেই নিতে হয়। এ ক্ষেত্রেও ঠিক তাই হয়েছে। তবে অন্য খাতের তুলনায় পর্যটন খাত বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ও সংবেদনশীল বলে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ঝুঁকিও বেশি। সমস্যা ও ঝুঁকির বিষয় বিবেচনায় এ শিল্প বিকাশে উদ্যোক্তাদের ভূমিকা অসাধারণ।
সারাবাংলা: পর্যটনের বিকাশে যেসব প্রতিবন্ধকতার কথা বললেন, সেগুলো দূর করতে করণীয় কী?
মোহাম্মদ ওমর ফারুক: পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী স্থানীয় পর্যটন বিষয়ে মূল ভূমিকা পালনকারী প্রতিষ্ঠান হলো রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। তাই জেলা পরিষদকে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড প্রভৃতি এবং জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশসহ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে রাঙ্গামাটিতে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন ও অন্যান্য সুবিধা গড়ে তুলে তা রক্ষার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। রাঙ্গামাটি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজ, জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ (নাসিব), মহিলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজ, পর্যটন উদ্যোক্তা সংগঠনের সমন্বয়ে সাধারণ পর্যটন, কমিউনিটি পর্যটন, ইকো-পর্যটন, অ্যাডভেঞ্চার পর্যটন, জৈব কৃষি পর্যটন ও সাংস্কৃতিক পর্যটনের উদ্যোক্তা ও নতুন উদ্যোগ চিহ্নিত করতে হবে। ক্লাস্টার চিহ্নিত ও ব্যবসায়িক প্রোফাইল তৈরি করে সেবাদাতাদের ডাটাবেজ তৈরি করতে হবে।
সহজ যাতায়াতের সুযোগ তৈরি করতে হবে। উদ্যোক্তাসহায়ক বাস্তব অবকাঠামো যেমন— বিদ্যুৎ, সড়ক ও নৌ পথ তৈরিতে রাঙ্গামাটির বিভিন্ন উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ও সরকারকে সম্পৃক্ত হতে চাপ তৈরি করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান, চেম্বার, নাসিব ও উদ্যোক্তা সংগঠনগুলোকে নিয়ে শক্তিশালী কমিটি গঠন করতে পারলে এই কমিটি সেই চাপ প্রয়োগের কাজটি করতে পারবে।
দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বাস মালিক সমিতি, অটোরিকশা মালিক ও শ্রমিক সমিতি, বোট মালিক সমিতি ইত্যাদি সংগঠনের সঙ্গে বসে পরিবহন যোগাযোগ খাত পর্যটকবান্ধব করতে হবে। সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আওতায় এনে এগুলোর জন্য তদারকি কর্তৃপক্ষ গঠন করতে হবে। প্রথাগত পর্যটনের বাইরের পর্যটন পদ্ধতিগুলোকে উৎসাহ দিতে সৃজনশীল ও অভিনব কার্যক্রম নিতে হবে। পর্যটন শিল্পে উদ্যোক্তা উন্নয়নের জন্য ব্যাপক প্রশিক্ষণ দিতে হবে, এই খাতের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে। আর্থিক স্বচ্ছলতা ও ক্ষমতায়নে নারী জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করতে হবে। কমিউনিটি পর্যটন, ইকো-পর্যটন, অ্যাডভেঞ্চার পর্যটন ও সাংস্কৃতিক পর্যটনের বিকাশে উদ্যোক্তাদের জন্য ৫০০ কোটি টাকার ঘূর্ণায়মান তহবিল (রিভলভিং ফান্ড) গঠন করতে হবে। পাশাপাশি ব্যাক-লিংকেজ স্থাপন করতে হবে।
সারাবাংলা: সরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যটনের বিকাশে কতটুকু এগিয়ে এসেছে? তাদের আরও কতটা এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন?
মোহাম্মদ ওমর ফারুক: আগেই বলেছি, সরকার হলো এ খাতের মূল শক্তি ও উৎস। পৃথিবীর যত দেশে পর্যটন শিল্প বিকশিত হয়েছে, সবখানেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করেছে, উদ্যোক্তা তৈরি করে তাদের প্রণোদনা দিয়েছে, পুরো খাতকে সমন্বয় করেছে। ঘূর্ণায়মান তববিলও তৈরি করেছে। তাই এ ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ আরও সমন্বিত, বিস্তৃত, তাৎপর্যপূর্ণ, গভীর, কার্যকর ও ফলপ্রসূ হওয়াটাই প্রত্যাশিত।
সারাবাংলা: রাঙ্গামাটিকে তুলে ধরার জন্য খাতসংশ্লিষ্টরা এত দিনে কী কী ভূমিকা রেখেছেন?
মোহাম্মদ ওমর ফারুক: এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে প্রত্যাশা অনুযায়ী না হলেও রাঙ্গামাটির পর্যটন খাত আগের চেয়ে এগিয়েছে। যেহেতু এটি সমন্বিত উদ্যোগ, তাই খাতসংশ্লিষ্টদের অবদান অবশ্যই আছে। কিন্তু সেটি খুব বেশি প্রণিধানযোগ্য নয়। প্রথাগত পর্যটন বিকাশে বেসরকারি উদ্যোগে শহরকেন্দ্রিক অনেকগুলো হোটেল ও মোটেল হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ও তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে রিসোর্ট উন্নয়নে। শহর এলাকার বাইরে হ্রদ ও পাহাড়ের কোলঘেঁষে গড়ে উঠেছে বেশকিছু রিসোর্ট ও ইকো-রিসোর্ট। স্থানীয় উদ্যোক্তারা নিজেদের এলাকা, মানুষ, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ভাষা, খাদ্যাভ্যাস, প্রকৃতি ও প্রতিবেশকে ভালোবেসে এসব রিসোর্ট গড়ে তুলেছেন এবং সমন্বিত ব্যবস্থাপনার জন্য গড়ে তুলেছে ‘রাঙ্গামাটি রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’।
সারাবাংলা: রাঙ্গামাটির সিম্বল হিসেবে পরিচিত পর্যটন সেতুটি কাপ্তাই হ্রদের পানি বাড়লেই ডুবে যায়। এটি পর্যটনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে কি?
মোহাম্মদ ওমর ফারুক: খুবই মনোরম ও আকর্ষণীয় স্থানে সেতুটি অবস্থিত বলে পর্যটন সেতুটির জনপ্রিয়তা ও পরিচিতি সবচেয়ে বেশি। তাই রাঙ্গামাটির প্রথাগত পর্যটনের আইকনে পরিণত হয়েছে এ সেতুটি এবং পরিচিতি পেয়েছে সিম্বল অব রাঙ্গামাটি হিসেবে। কিন্তু নির্মাণের সময় কাপ্তাই হ্রদের ধারণক্ষমতা ও উচ্চতা বিবেচনা করা হয়নি বলে হ্রদের ধারণক্ষমতার কাছাকাছি এলেই সেতুটি ডুবে যায়। ডুবন্ত সেতু তাদের আর আকর্ষণ করে না। অর্থাৎ সেতুটি পরিকল্পিত ও সমন্বিতভাবে নির্মিত নয়। ফলে রাঙ্গামাটি পর্যটন করপোরেশনে ভ্রমণকারীরা যায় না এবং রেস্টুরেন্ট ও আবাসিক মোটেলগুলো পর্যটকশূন্য থাকে। এ বিষয়টি আমাদের একটি তাৎপর্যপূর্ণপ বার্তা দেয়— রাজনৈতিক, সামাজিক ও আন্তঃবিভাগীয় পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের অভাবে রাঙ্গামাটির অমিত সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্প ডুবে আছে। কেবল সমসাময়িক প্রবণতায় চলছে পর্যটন শিল্প।
সারাবাংলা: পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী পর্যটন শিল্পকে পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই খাতের উন্নয়নে জেলা পরিষদের কর্মকাণ্ডকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
মোহাম্মদ ওমর ফারুক: পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী ২০১৪ সালের ২৮ আগস্ট থেকে পর্যটন শিল্প রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তরিত হয়। এর ফলে স্থানীয় উদ্যোক্তা ও জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশাও বেড়ে যায়। সরকারের গেজেট নোটিফিকেশন অনুযায়ীও রাঙ্গামাটি পর্যটনের জন্য বিশেষ অঞ্চল হিসেবে ঘোষণার জন্য আদর্শ স্থান। কিন্তু গত ৯ বছরে জেলা পরিষদের যে কার্যক্রম, তাতে এই খাতে গুণগত, তাৎপর্যপূর্ণ, সমন্বিত ও দৃশ্যমান অগ্রগতির আরও অনেক সুযোগ ছিল। আমরা আশা ও বিশ্বাস করছি, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ জনপ্রত্যাশা মেটাতে এবং কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব আরও গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণভাবে উপলব্ধি করে কার্যকর ও লক্ষ্যভেদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে এবং বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেবে।
সারাবাংলা: অর্থনীতি বা স্থানীয়দের কর্মসংস্থানে পর্যটন শিল্প কতটুকু ভূমিকা রাখছে কিংবা রাখতে পারবে?
মোহাম্মদ ওমর ফারুক: পর্যটন শিল্প খাতকে বহুমাত্রিক কর্মসংস্থান তৈরির খাত বলা হয়। শিল্প-কলকারখানা বিহীন রাঙ্গামাটি অঞ্চলে পর্যটন শিল্প খাতের বিকাশ হলে বেকার তরুণ থেকে শুরু করে দোকানদার, হোটেল মালিক, পরিবহন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তা এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রীয় রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি, স্থিতিশীলতা, সম্প্রীতি ও অগ্রগতিসহ শিল্পায়নের প্রাথমিক হাব হিসেবে পর্যটন খাতকে প্রাধান্য দিয়ে পর্যটন বিকাশের সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া। কমিউনিটি পর্যটন, ইকো-পর্যটন, অ্যাডভেঞ্চার পর্যটন ও সাংস্কৃতিক পর্যটন বিকাশের অবারিত সুযোগের কিছু অংশও কাজে লাগানো গেলে পার্বত্য চট্টগ্রামের আর্থসামাজিক ও স্থিতিশীল রাজনীতির ব্যাপকভাবে ইতিবাচক পরিবর্তন হবে।
সারাবাংলা: সারাবাংলাকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ ওমর ফারুক: আপনাকেও ধন্যবাদ।
সারাবাংলা/টিআর
ইকো-পর্যটন পর্যটন খাত পর্যটন দিবস পর্যটন শিল্প মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাঙ্গামাটিতে পর্যটন