তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় না সাংস্কৃতিক কর্মীরা
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২০:৪৯ | আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২৩:১১
ঢাকা: তত্ত্বাবধায়ক সরকারেরর অধীনে নির্বাচন চায় না সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিরপেক্ষ নির্বাচন ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ।
শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আয়োজিত সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের এক অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন। ‘আমার দেশ সম্প্রীতির বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সম্প্রীতির বাংলাদেশকে সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে দেশের ৬৪ জেলায় এই আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। তারই অংশ হিসেবে এদিন দেশের ১০টি জেলায় এই কর্মসূচি পালিত হলো।
সূচনা বক্তব্যে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ বলেন, ‘আজ যে আয়োজনটির সূচনা হচ্ছে সেটির পরিকল্পনা হয়েছিলো আজ থেকে একবছর আগে। আমরা যে দেশে এখন বসবাস করছি, সেটি কি আমাদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ? উত্তর ছিল না, না। এটি আমাদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ নয়।’
তিনি বলেন, ‘এই প্রথমবারের মতো একই সুরে বাজবে বাংলাদেশ, একই তালে নাচবে বাংলাদেশ। ১৯৭০ সালে শতকরা ৩০ ভাগ মানুষ নৌকায় ভোট দেয়নি। তারা পরবর্তী সময়ে আলবদর হয়েছে, রাজাকার হয়েছে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছে। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে তিনি লড়াই শুরু করেন। আমরা জয়ী হই। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি শেখ হাসিনাকে সেবার আমরা প্রধানমন্ত্রী বানাতে পারিনি। আবার আমরা আন্দোলন শুরু করি নব্য স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে। পরে ১৯৯৬ সালে আমরা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে বিজয়ী করতে সক্ষম হই।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা আবারও এক হয়েছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। কারণ, বঙ্গবন্ধুকন্যা ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশ জয়ী হবে।’
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহম্মদ সামাদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে প্রায় দুই দশক ধরে বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছে। হায়েনারা আবার নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এসব ষড়যন্ত্রের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে পিছিয়ে দেওয়া। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ এগিয়ে চলেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে চাই, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’
কর্মসূচিতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘জাতির সংকটে সংস্কৃতিকর্মীরা কখনও নিশ্চুপ ছিল না। দেশের যেকোনো সংকটেই আমরা দায়িত্ব নিয়ে সচেষ্ট হয়েছি।’
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন হওয়া স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তফসিল ঘোষণা হবে, ভোট হবে। প্রত্যেক মানুষ নিজ নিজ ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। কিন্তু আমাদের দেশে এক অদ্ভুত রাজনীতি কাজ করছে। এখানে যার যখন যেভাবে মনে চায়, সেভাবেই নির্বাচন চায়। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশ আজ দু’ভাগে বিভক্ত। সরকার বলছে, সংবিধান অনুযায়ী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অপরদিকে, বিএনপি ও তাদের ঘরানার দলগুলো বলছে, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে আসবে না। এমনকি নির্বাচন হতেও দেবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাংস্কৃতিককর্মী হিসেবে আমরা কোন পক্ষে? আমরা একসময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছি। কিন্তু, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে। সে ইতিহাসের দিকে আমি যাব না। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দলীয় পদধারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সোয়া কোটি ভুয়া ভোটার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল- সেসব বিষয় আমরা জানি। তারপরেও বলি, আমরা এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই না।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না চাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এক-এগারোর সময় গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধান লঙ্ঘন করে ৯০ দিনে নির্বাচন দেওয়ার পরিবর্তে দুই বছর জোর করে ক্ষমতা দখল করে ছিল। শেখ হাসিনাসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের গ্রেফতার করে রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন তো নয়ই, এমনকি গণতন্ত্রের জন্যও হুমকিস্বরূপ। সংস্কৃতি চর্চার জন্য হুমকিস্বরূপ। তা হলে কেন আমি তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাইব? কোনো যুক্তি আছে কি? স্পষ্ট কথা, আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই না।’
কর্মসূচিতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- যাত্রাশিল্পী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দেব, সাংস্কৃতিক সংগঠক মানজারুল ইসলাম সুইট, ঝুনা চৌধুরী প্রমুখ। বক্তব্য শেষে সাংস্কৃতিক জোটের কর্মীরা আবৃত্তি, নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন করেন।
সারাবাংলা/আরআইআর/পিটিএম