আমার দল জাপা নির্বাচনে অংশ নিতে পুরোপুরি প্রস্তুত: রওশন এরশাদ
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২০:২৮
ঢাকা: জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ বলেছেন, আমার দল জাতীয় পার্টি (জাপা) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। জাতীয় পার্টি তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সব জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। আমরা গণতান্ত্রিক ধারায় বিশ্বাস করি বলেই কখনও নির্বাচন বয়কট করিনি। আমরা আশা করি যে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে, আর সেই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশ নেবে।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে বেগম রওশন এরশাদ এ কথা বলেন।
দেশের বর্তমান নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ওএমএস চাল ও আটা এবং টিসিবি পণ্য কিনতে স্বল্প আয়ের মানুষের দীর্ঘ লাইন এখন এক সাধারণ চিত্র। এ লাইনে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে মধ্যবিত্তরাও। ‘যদি আয় না বাড়ে তাহলে সাধারণ বা কম আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আরও কমে যাবে। তারা আরও চাপে পড়বে। এখন তাই প্রবৃদ্ধিই যথেষ্ট নয়,অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি জরুরি। সামাজিক সুরক্ষামূলক কর্মসূচির ব্যাপ্তি ও প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হবে। রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে গোটা সমাজের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী নিশ্চিত করা সম্ভব না হলে সামাজিক অস্থিরতাও সামনে নতুন রূপে হাজির হতে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। এ জন্য এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারকে আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণের ভারে কোনো কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হলেও হাজার বা শতকোটি টাকার ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে না কোনো ব্যবস্থা। অথচ ১ লাখ টাকার নিচে ঋণ নেওয়া কৃষকদের বিরুদ্ধে মামলা করছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। অর্থ মন্ত্রণালয়ের চলতি বছরের জুলাইভিত্তিক এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, স্বল্প ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করা কৃষকদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৯ হাজার ৩৫৭টি মামলা (সার্টিফিকেট মামলা) করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংক। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলোর পাওনা ৩৯৯ কোটি টাকা। ঋণ অবলোপন করতে হলে গরিব কৃষকের ক্ষেত্রে করা উচিত, রাঘববোয়ালের ক্ষেত্রে নয়। দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালনকারী কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা করা থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বিরত থাকবে, এটিই আশা করি।’
ব্যাংক রির্জাভ সর্ম্পকে বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, ‘বৈশ্বিক ও দেশীয় সংকটের কারণে গত দুবছর ধরেই রিজার্ভ নিম্নমুখী। বকেয়া ও মেয়াদ বাড়ানো বৈদেশিক ঋণ এবং আমদানির দায় পরিশোধের চাপে পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। রেমিট্যান্স, রফতানি আয়, বিদেশি বিনিয়োগ ও বৈদেশিক অনুদান নিম্নমুখী। এ সব কারণে রিজার্ভের ওপর আগামীতে চাপ আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে ডলার সংকটের প্রধান কারণ এবং সমাধানে কী করণীয় তা বহুল আলোচিত। ডলার সংকট কাটাতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর পদক্ষেপ জরুরি। ব্যাংকগুলো এসব মানুষের কাছে সহজে সেবা পৌঁছে দিতে পারলে রেমিট্যান্স প্রবাহে গতি আসবে। বিদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মী পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।’
বেগম রওশন এরশাদ বলেন, “জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা আলোচনার পর সরকার ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ নিলেও কার্যত উদ্বেগ কাটেনি। ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩’-পাস করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয়, এ আইনের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন তথা সাংবাদিক, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মীসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের আইনটি তৈরির ক্ষেত্রে মতামত গ্রহণ করা যেতে পারত।”
সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। দেশের প্রায় ১০ কোটি মানুষকে পেনশন-সুবিধার আওতায় আনা হবে। কর্মক্ষম প্রত্যেক নারী ও পুরুষকে এই কর্মসূচির আওতায় কীভাবে আনা হবে, তা এখনও অস্পষ্ট। সরকার নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য নির্ধারিত ‘সমতা’ নামের পেনশন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের মাসিক চাঁদার অর্ধেক দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।”
এই কর্মসূচির আওতায় সব কর্মক্ষম নারী-পুরুষকে নিয়ে আসতে হলে ন্যূনতম অর্থনৈতিক নিশ্চয়তাও থাকতে হবে। অতীতে অনেক ভালো কর্মসূচিও দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনার কারণে সফলতা পায়নি। সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি এগিয়ে নিতে হলে এর বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করতে হবে, অসঙ্গতিগুলোকে দূর করতে হবে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে