Thursday 09 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন ২৮ অক্টোবর, পরদিন থেকে চলবে গাড়ি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:৫০ | আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:২৩

চট্টগ্রাম ব্যুরো: কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বহু প্রতীক্ষার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আগামী ২৮ অক্টোবর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে এসে টানেলের উদ্বোধন করবেন। পরদিন ২৯ অক্টোবর সকালে ১০টা থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য টানেল খুলে দেওয়া হবে।

মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে টানেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি সভার পর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মনজুর হোসেন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

বিজ্ঞাপন

মনজুর হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব টানেল শুধুমাত্র চট্টগ্রামবাসীর জন্য গর্ব নয়, জাতির জন্যও অনেক গর্বের বিষয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় টানেল এখন প্রায় প্রস্তুত হয়েছে। আগামী ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী এটা উদ্বোধন করার জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে।’

‘এটার প্রি-কমিশনিং থেকে শুরু করে নিরাপত্তার ব্যবস্থা সবগুলো দেখা হয়েছে। আশা করছি ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল উদ্বোধন করার পরদিন থেকে সাধারণ মানুষ যাতায়াত করতে পারবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘টানেল উদ্বোধনের পরও আমাদের কার্যক্রম চলবে। পুলিশের পক্ষ থেকে ফাঁড়ি, ডাম্পিং, স্টেশনের কথা বলা হয়েছে, সেটা করতে পারব, জায়গা রয়েছে। অপারেশনের যারা রয়েছেন, মেইটেনেন্স যারা করবেন তাদের নিজস্ব যানবাহন থাকবে। প্রথমদিকে অন্যদের সাপোর্ট নিয়ে সবার সমন্বয়ে কাজগুলো এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব।’

টানেল চালু হলে ট্রাফিক জট হতে পারে কি না— সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে সেতু সচিব বলেন, ‘ট্রাফিকের প্ল্যান আছে, পুলিশেরও নির্দিষ্ট প্ল্যান থাকতে পারে। সিডিএর পক্ষ থেকে কিছু প্রস্তাব আছে। তারাও কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। টানেলের যে আরও একটি বড় লক্ষ্য আছে সেটা হলো, কক্সবাজারে কিছু বড় প্রকল্প হচ্ছে। আগামী দুই চার বছরের মধ্যে সেই প্রকল্পে যাতায়াতের জন্য টানেলটি ব্যবহার করা হবে। সেক্ষেত্রে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পুলিশের আলাদা প্ল্যান আছে, পরিকল্পনাও আছে। তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা সব কাজ করতে চাই।’

বিজ্ঞাপন

ওয়ান সিটি টু টাউনের পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওয়ান সিটি টু টাউনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পতেঙ্গার এক পাশে আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে। আরও করা হচ্ছে। আনোয়ারা প্রান্তে পৌনে দুইবছর ধরে যা দেখছি, অনেক পরিবর্তন হয়েছে। চোখের সামনে সেই পরিবর্তন দেখা যায়।’

‘নগরীকে যদি আনোয়ারার ওই প্রান্তে শিফট করা যায় তাহলে এদিকে চাপ কমবে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প কারখানা গড়ে উঠা- এগুলোই তো মূল লক্ষ্য। একটি দেশের উন্নয়নে জিডিপিতে পজেটিভ প্রভাব যেটা থাকে সেটা হচ্ছে, আমরা সময় বাঁচাতে পারছি কি না, শিল্প উন্নয়ন ঘটাতে পারছি কি না, ট্যুরিজমে ডেভলপ ঘটাতে পারছি কি না। সব কিছু মিলিয়ে আনোয়ারা প্রান্তে সেই উন্নয়নটা দেখা যাচ্ছে। সেটাই মূল বিষয়। ওয়ান সিটি টাউনের কনসেপ্টটা সেখান থেকেই এসেছে।’

তিন চাকার গাড়ি চলাচলের বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব মনজুর হোসেন বলেন, ‘কোন কোন যানবাহন টানেলে চলবে তা নির্ধারিত করা হয়েছে। টোলও নির্ধারণ করা হয়ে গেছে। টানেলের যে ডিজাইন করা হয়েছে ৮০ কিলোমিটার বেগে প্রতি ঘণ্টায় গাড়ি চলতে পারবে। টানেলের কনসেপ্টটা আমাদের কাছে নতুন। সেজন্য এটার কিছু চ্যালেঞ্জ আছে।’

‘ভেতরে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে সেজন্য রেসকিউ কিভাবে হবে? সেটা অন্য ব্রিজ বা সড়ক থেকে আলাদা। সেক্ষেত্রে আমাদের এই জিনিসটা নিশ্চিত করতে হচ্ছে টানেলও নিরাপদ থাকবে এবং যারা ব্যবহার করবে তারাও নিরাপদ থাকবে। সেই ধারনা থেকে এই মুহূর্তে দুই বা তিন চাকার গাড়ির জন্য এটা নিরাপদ হবে না বলে আমি মনে করি।’

দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য ট্যাক্সি ক্যাব চালুর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ট্যাক্সি ক্যাবটা যে কেউ চালু করতে পারেন। সেজন্য সেতু বিভাগ থেকে আলাদাভাবে প্রকল্প নেওয়ার দরকার নেই। জেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিতে পারে। এতে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না।’

‘টানেলে গতকয়েক মাস ধরে ট্রায়াল হচ্ছে। ইলেকট্রিক মেকানিক্যাল কাজ হয়ে যাওয়ার পর প্রি কমিশনিং, সেইফটি এসবই ট্রায়ালের অংশ।’

এর আগে টানেলের উদ্বোধনীর প্রস্তুতিমূলক সভায় সেতু সচিব মনজুর হোসেন বলেন, ‘ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের টানেলের কাজ সমাপ্তি করার কথা থাকলেও তার আগেই কাজ শেষ করেছি। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) এখানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। দিনশেষে আমরা সবাই কাজ করছি দেশের জন্য, জাতির জন্য। সবাই মিলে কাজ করলে কোনো সমস্যা হবে না।’

‘এখানে একটি মজার বিষয় হচ্ছে টানেলে ঢুকার আগে যেসব গাড়ি এফএম রেডিও চালু করবে তখন টানেল ব্যবহারের নীতিমালা অটোমেটিক চলতে থাকবে। অধিকাংশ রেডিও স্টেশনে এই নীতিমালা রয়েছে। টানেলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রেডিওতে এই নীতিমালাগুলো পড়ে শুনানো হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘২৯ অক্টোবরের আগে টানেলে সাধারণ মানুষ কেউ যেতে পারবে না। ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল উদ্বোধনের করার পরদিন ২৯ অক্টোবর সকাল ১০টার পর টানেল সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ইমার্জেন্সি গাড়ি ও প্রশাসনের অন-ডিউটিরত গাড়িকে টোলের আওতায় আনা হবে না। আর সবাইকে টোল দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীও টোল দেন। যেসব জায়গায় যেতে ওনাকে সেতু ব্যবহার করতে হয়েছে সব জায়গায় ওনাকে পুরো গাড়ির বহরের জন্য টোল দিতে হয়েছে।’

সভায় আরও দেন বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, ডিআইজি নুরে আলম মিনা, পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, টানেলর প্রকল্প পরিচালক হারুন উর রশিদ ও আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম।

কর্ণফুলী নদীর দুইপাড়ে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তুলতে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে টানেল প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। নির্মাণ কাজ করছে চীনের কোম্পানি ‘চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম টানেল টিউব নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই টানেলে প্রতিটি টিউব বা সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। একটির সঙ্গে অপর টিউবের দূরত্ব ১২ মিটারের মতো। প্রতিটি টিউবে দুটি করে মোট চারটি লেইন তৈরি করা হয়েছে। টানেলের পূর্ব ও পশ্চিম ও প্রান্তে থাকছে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। এছাড়া ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ওভার ব্রিজ রয়েছে আনোয়ারা প্রান্তে।

নগরীর পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমির পাশ দিয়ে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরতায় নেমে যাওয়া এই টানেল কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ-পূর্বে আনোয়ারায় সিইউএফএল ও কাফকোর মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে স্থলপথে বের হবে। ৩৫ ফুট প্রশস্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতার টানেলে দুটি টিউব দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। টানেলের উত্তরে নগরীর দিকে আউটার রিং রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কাটগড় সড়ক, বিমানবন্দর সড়ক এবং পতেঙ্গা বিচ সড়ক দিয়ে টানেলে প্রবেশ করা যাবে।

টানেল দিয়ে মোটরসাইকেল ও তিন চাকার গাড়ি চলতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্মাণকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্প ব্যয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকার মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক দুই শতাংশ হারে সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। বাকি অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সরকার।

প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, টানেলটি প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়েকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করবে এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে দেবে। এই টানেল দিয়ে যানবাহন ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে চলবে।

এদিকে বঙ্গবন্ধু টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য টোল হার চূড়ান্ত করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ। টানেল উন্মুক্ত করার দিন থেকে টোলের হার কার্যকর হবে বলে সেতু বিভাগের প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ আছে।

উল্লেখ্য, ৩ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর বঙ্গবন্ধু টানেল কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের অঞ্চলকে যুক্ত করবে। এই টানেলের মধ্য দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক যুক্ত হবে। এটা বাংলাদেশের প্রথম সুড়ঙ্গ পথ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নদী তলদেশের প্রথম ও দীর্ঘতম সড়ক সুড়ঙ্গপথ। চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এই সুড়ঙ্গ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।

সারাবাংলা/আইসি/এনএস

টপ নিউজ বঙ্গবন্ধু টানেল

বিজ্ঞাপন

লস অ্যাঞ্জেলসে দাবানল, নিহত ৫
৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:৪৩

২৪ ম্যাচ পর হারল লিভারপুল
৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:৩১

সাভারে তিন গাড়িতে আগুন, নিহত ৪
৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর