চাপের মুখেও বাংলাদেশ স্বতন্ত্র পররাষ্ট্রনীতি ধরে রেখেছে: ল্যাভরভ
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০০:২৫ | আপডেট: ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০০:৪৬
ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের চাপ থাকলেও বাংলাদেশ জাতীয় স্বার্থে নিজেদের পররাষ্ট্রনীতি ধরে রেখেছে বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। তিনি বাংলাদেশের এই স্বতন্ত্র পররাষ্ট্রনীতির প্রশংসা করেন।
ইন্দোনেশিয়ায় আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান শেষে বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে এসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকের পর ল্যাভরভ সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। বৈঠকে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল, রোহিঙ্গাসংকটসহ দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠক শেষে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় ল্যাভরভ বলেন, এটি আমার প্রথম ঢাকা সফর। এশিয়ায় বাংলাদেশ আমাদের দীর্ঘস্থায়ী বন্ধু। আমাদের সম্পর্কের ভিত্তি বন্ধুত্ব ও সমতা। আমাদের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পর বাংলাদেশ আমাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম অংশীদার। ২০২২ সালে আমাদের দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় তিন বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আমরা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে একসঙ্গে কাজ করছি। অক্টোবরে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি বাংলাদেশে পৌঁছাবে। আমাদের গ্যাজপ্রম বাংলাদেশে গ্যাসক্ষেত্রের ২০টি কূপ নিয়ে কাজ করছে। আমরা সার সরবরাহ নিয়েও আলোচনা করেছি।
ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল নিয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা তাদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে, যাকে তারা তথাকথিত ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল বলছে। এটি পরিষ্কার যে তারা এ উদ্যোগের মাধ্যমে চীন ও রাশিয়াকে একঘরে করে দিতে চায়, এই অঞ্চলে ন্যাটোর কার্যক্রম সম্প্রসারণ করতে চায়, যা আসিয়ানের স্পিরিটের পরিপন্থি। কারণ আসিয়ানের স্পিরিট হলো ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি। আমরা আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে তাদের এ ধরনের উদ্যোগকে প্রতিহত করব।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে সহায়তার আশ্বাস দিয়ে সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বাইরে আর কারও সংযুক্তি ঠিক হবে না। বাইরের লোক যত কম থাকে তত ভালো। কারণ বাইরের হস্তক্ষেপে হিতে বিপরীত হতে পারে। আমরা দ্বিপাক্ষিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানকে সমর্থন করি। প্রয়োজনে আমরা মিয়ানমারে আমাদের বন্ধুদের এ বিষয়ে কাজ করার জন্য অনুরোধ করতে পারব।
রাশিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে রূপপুর প্রকল্পের অর্থ পরিশোধে জটিলতা বিষয়েও দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় ল্যাভরভের। তিনি বলেন, ‘আমরা শিগগিরিই অর্থ পরিশোধের উপায় খুঁজে বের করব। এ অর্থ নিজস্ব মুদ্রায় পরিশোধ করা হবে। আমরা এমন কারও মুদ্রা ব্যবহার করব না যারা একে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।’
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ এই প্রথম বাংলাদেশে এসেছেন। একাত্তরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে তারা সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে। দেশ গঠনেও অনেক সহযোগিতা করেছে। আজকের বৈঠকে আমরা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র, রোহিঙ্গা ইস্যু, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, রাশিয়ায় বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সুবিধা নিয়ে আলোচনা করেছি।
যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ও পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি হলো সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা এই অঞ্চলে কোনো প্রক্সি যুদ্ধ চাই না। আমরা চাই, শান্তিপূর্ণ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান হোক।
এর আগে দুই দিনের সফরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা পৌঁছান সের্গেই ল্যাভরভ। বাংলাদেশে এটি তার প্রথম সফর। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন। সেখান থেকে রাশিয়ার এই মন্ত্রী যান হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে। সেখানে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজ নিজ দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন।
সফরে শুক্রবার সকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন করবেন ল্যাভরভ। এরপর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। পরে শুক্রবার বিকেলে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে নয়াদিল্লির পথে রওনা দেবেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সারাবাংলা/টিআর
টপ নিউজ পররাষ্ট্রনীতি রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ