Sunday 12 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কে কত শক্তিশালী সিন্ডিকেট, দেখব: প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৯ আগস্ট ২০২৩ ২১:১৫ | আপডেট: ৩০ আগস্ট ২০২৩ ০১:৩৮

ঢাকা: নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করে জনগণের পকেট কাটা ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সিন্ডিকেট থাকলে সিন্ডিকেট ভাঙা যাবে না, এটি কোনো কথা না। কে কত বড় শক্তিশালী সিন্ডিকেট, আমি জানি না? আমি দেখব কী ব্যবস্থা করা যায়।

মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে গণভবনে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানসবার্গে ১৫তম ব্রিকস সম্মেলনের সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ সব কথা বলেন। শুরুতে সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর দুইপাশে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

দেশে নিত্যপণ্য নিয়ে একটা মৌসুমি ব্যবসা হয়। মজুদ আছে সরবরাহ আছে তবুও জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। যেমন- পেঁয়াজ, ডাব, কাঁচামরিচ। এমন অনেক পণ্য সিন্ডিকেট করে ব্যবসা করে সাধারণ মানুষের পকেট কেটে নিয়ে যাওয়া হয়। মন্ত্রীরাও বলেন সিন্ডিকেটে হাত দেওয়া যায় না। এই মৌসুমি ব্যবসায়ীদের নিরস্ত করার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, আপনি কোন কঠোর ব্যবস্থা নেবেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানতে চান যে, সিন্ডিকেটে হাত দেওয়া যাবে না এমন কথা কে বলেছেন। জবাবে জানানো হয় বাণিজ্যমন্ত্রী ওই কথা বলেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন বলেন, ‘ঠিক আছে আমি বাণিজ্যমন্ত্রীকে ধরব তো। ওখানে হাত দেওয়া যাবে না কে বলেছেন? আমি তাহলে দেখব।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে একটা শ্রেণি আছে তারা সবসময় এরকম ব্যবসা করে। খাদ্যপণ্য নিয়ে কয়েকটা হাউজ আছে তারা ব্যবসা করে। যখনি তারা এরকম আর্টিফিসিয়ালি দাম বাড়ায়, সেটা আমরা আমদানি করি। বিকল্প ব্যবস্থা নিই। তারা বাধ্য হয় দাম কমাতে।’

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সিন্ডিকেট থাকলে সিন্ডিকেট ভাঙা যাবে না, এটি কোনো কথা না। কে কত বড় শক্তিশালী সিন্ডিকেট, আমি জানি না? ঠিক আছে, আমি দেখব এটি, কী ব্যবস্থা করা যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ছোটবেলায় দেখেছি শীতকালে যখন বাজারে শিম ওঠে কে কত বেশি দামে কিনতে পারে এটির প্রতিযোগিতা হতো। দুইদিন পর দাম কমে যেত। আবার বর্ষাকালে কাঁচামরিচের দাম বাড়ে। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে কাঁচামরিচ শুকনা করে রেখে দেওয়া যায়। পেঁয়াজ শুকিয়ে সুন্দর রেখে দেওয়া যায়। যেটির উৎপাদন বেশি হবে সেটি শুকিয়ে রেখে দিলে যথাযথভাবে ব্যবহার করা যায়।’

‘জীবনে কেউ কখনো ভাবছেন আগে বর্ষাকালে শিম, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, টমেটো খাবে। ভবিষ্যতে এগুলো রাখা, প্রসেস করা, চিলিং সিস্টেমে সংরক্ষণ করার বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি’ বলেও জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমার কথা হলো। উনি আমাদের এখান থেকে চাল কিনতে চান। আমি বলেছি, আমাদের ১৭ কোটি মানুষের খাবার দিতে হয় আগে, আর আমরা তো গরিবদের বিনা পয়সায় দেই। আমি গিয়ে দেখব, যদি উদ্বৃত্ত থাকে অবশ্যই আমরা আপনাকে দেব।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশ থেকে এখন অনেকেই তরকারি কিনতে চাচ্ছে, আমরা কিন্তু দিচ্ছি। আমাদের তরকারি তো এখন সুইজারল্যান্ডেও যাচ্ছে। ওদের একটি সুপার মার্কেট চেইনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে। পৃথিবী তো ছোট হয়ে আসছে এটিও তো দেখতে হবে। কিছু জিনিস তো বাইরেও যাচ্ছে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘সবাইকে বলছি নিজেরা উৎপাদন করেন। প্রত্যেকে যদি কিছু উৎপাদন করতে পারে, তাহলে তো বাজারের ওপর নির্ভরশীলতা থাকে না। আমরা নিজেরা যত উৎপাদন করতে পারব, আমাদের নির্ভরশীলতা যদি কমে তাহলে সিন্ডিকেট এমনি ভেঙে যাবে। ওদের আর কিছু করার থাকবে না। সে জন্য বলেছি এক ইঞ্চি জমিও যেন পতিত না থাকে। যখন যেটি দরকার নিজেরা করেন।’

কাঁচামরিচ গাছ থেকে ছিঁড়ে নিয়ে খাওয়ার আলাদা একটা টেস্ট আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তবে কিছু হাউজ আছে, ধরে রেখে পঁচায় ফেলবে। আবার ডিম নিয়েও শুরু করল। ডিম যখন বেশি পাবেন সিদ্ধ করে ফ্রিজে রেখে দেবেন, বহুদিন থাকবে। সহজে নষ্ট হবে না। সবকিছুর বিকল্প ব্যবস্থা আছে। ডিম সিদ্ধ করে ডিপ ফ্রিজে রেখে দেন, ডিম ভালো থাকবে। রান্না করে, ভর্তা করে খাওয়া যাবে। আমরা রাখি খাই দেখি বলি। এগুলো নিজে থেকে শেখা’ বলে যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘বিকল্প ব্যবস্থা করে নেব। ওই সিন্ডিকেটের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেব। ওরা এমনি ভেঙে যাবে।’

১৫তম ব্রিকস সম্মেলনে যোগদান শেষে রোববার (২৭ আগস্ট) স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী।

এর আগে, এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের ওআর টাম্বো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রওনা হয় প্রধানমন্ত্রী। সংযুক্ত আরব-আমিরাতের দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতির পর ঢাকা আসেন তিনি। এ সফরে প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা ও একমাত্র মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ তার সঙ্গে ছিলেন।

এর আগে, ১৫তম ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে ২২ আগস্ট রাতে জোহানেসবার্গে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। ব্রিকস সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বেশ কয়েকজন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে সাইডলাইন বৈঠক করেন শেখ হাসিনা।

সারাবাংলা/এনআর/একে

টপ নিউজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর