‘দেশকে ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত করার স্বপ্ন দেখি’
২৩ আগস্ট ২০২৩ ২১:৪২ | আপডেট: ২৪ আগস্ট ২০২৩ ০০:৫৯
জোহানেসবার্গ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ আফ্রিকার বিনিয়োগকারীদের বিশেষ করে আইসিটি, অবকাঠামো, টেক্সটাইল ও পর্যটন খাতে ব্যাপক বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমার একটি স্বপ্ন আছে, যা বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষেরও স্বপ্ন। সেটি হলো- ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি এবং একটি সম্পূর্ণ উন্নত স্মার্ট জাতিতে পরিণত করা।
শেখ হাসিনা বুধবার (২৩ আগস্ট) দক্ষিণ আফ্রিকার রেডিসন হোটেল অ্যান্ড কনভেনশন সেন্টারে ‘দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড বিজনেস সামিট’ শীর্ষক একটি রোড শো’র অনুষ্ঠানে তার বাসস্থান থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ভাষণে এ কথা বলেন। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার আমন্ত্রণে ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে শেখ হাসিনা জোহানেসবার্গে অবস্থান করছেন।
সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাণিজ্য, ব্যবসা ও বিনিয়োগের জন্য আরও বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ লক্ষ্য নির্ধারণে বাংলাদেশ তার বাণিজ্যিক পরিস্থিতিকে দৃঢ়তার সঙ্গে শক্তিশালী করে চলেছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই প্রচেষ্টা শুধুমাত্র আমাদের জন্য সুবিধাই দেবে না, বরং যারা বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করতে পছন্দ করে তাদের জন্যও লাভজনক প্রমাণিত হবে। সেজন্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিনিয়োগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিনিয়োগকারীদের স্বাগত জানাই।’
দক্ষিণ আফ্রিকার বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ যেমন- বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন সর্বোত্তম আয়ের জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সবধরনের সহযোগিতা দেবে।’
বাংলাদেশে বিনিয়োগের যৌক্তিকতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আসলে, আমাদের দেশে আপনার বিনিয়োগ সুরক্ষিত রয়েছে অব্যাহত হাই রিটান্স ইনভেস্টমেন্টের(আরওআই) কারণে। এছাড়া, আমাদের সরকার ব্যবসা-বান্ধব এবং স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করে; যা আপনার বিনিয়োগ সফলতার নিশ্চয়তা দেয়।’
বাংলাদেশ কেন ‘লুক আফ্রিকা পলিসি’ গ্রহণ করেছে সে সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আফ্রিকার জনসংখ্যা ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ছাড়িয়েছে এবং বর্তমানে দ্রুত নগরায়ণ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্মুখীন হচ্ছে; যা বাংলাদেশের জন্য, বিশেষত টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক, ফার্মাসিউটিক্যালস ও কৃষি পণ্যের মতো খাতে রফতানি সম্প্রসারণে অনুকূল সুযোগ তৈরি করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী নেতা উভয়েই আফ্রিকার অর্থনীতির সম্ভাবনা ও শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্কের সুবিধার কথা স্বীকার করে। আফ্রিকায় ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণী, দ্রুত বর্ধিত জনসংখ্যা ও ভোক্তা চাহিদার কারণে অঞ্চলটি বাংলাদেশি পণ্য রফতানির একটি আকর্ষণীয় বাজারে পরিণত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘একইসঙ্গে বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে আফ্রিকান দেশগুলো থেকে প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সম্পদ ও কাঁচামাল সংগ্রহের উপায় খুঁজছে। এই অন্বেষণের মধ্যে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান শিল্প, খনিজ, পেট্রোলিয়াম পণ্য, তুলা, কৃষিপণ্য ও আরও অনেক কিছুর জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা থাকার পরও গত বছর বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল মাত্র ৩১৬ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা উভয় দেশের রফতানি ও আমদানির পূর্ণ সম্ভাবনার তুলনায় কম। উভয় দেশের জন্য আমদানি-রফতানির আরও সম্ভাবনা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী যে-উভয় দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ও বাণিজ্য সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জন্য পর্যাপ্ত সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে। বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় প্রক্রিয়ার বাইরে আমরা ‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত একটি যৌথ কমিটি’ প্রতিষ্ঠা ও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে দ্বৈত কর এড়ানোর চুক্তি নিয়ে আলোচনার ব্যাপারে আগ্রহী।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-এফবিসিসিআই ও দক্ষিণ আফ্রিকার চেম্বারের মধ্যে একটি যৌথ ব্যবসায়িক ফোরাম গঠনেরও পরিকল্পনা রয়েছে।’ তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যবসায়ীদের সাথে যৌথ উদ্যোগ গ্রহন এবং বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমানসহ অন্যান্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে দক্ষিণ আফ্রিকার গণপূর্ত ও অবকাঠামো মন্ত্রী সিহলে জিকালালা বক্তৃতা করেন।
বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) লোকমান হোসেন মিয়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বিএসইসির চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) অধ্যাপক শিবলী রুবায়াত-উল-ইসলাম বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টা ও বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেন।
বাংলাদেশে দক্ষিণ আফ্রিকার বৃহত্তর বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে দেশটির সবচেয়ে বড় নগরী জোহানেসবার্গে এটি হচ্ছে ৭ম রোড শো। বিডা ও বিএসইসি বাংলাদেশে বৈশ্বিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পদক্ষেপের অংশ হিসেবে দুবাই, যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, কাতার ও জাপানে এই ধরনের রোড শো আয়োজন করে। জার্মানি, কানাডা, রাশিয়া, হংকং, মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশেও একই ধরনের রোড শো করার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ। [সূত্র: বাসস]
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম