ডেঙ্গু: চট্টগ্রামে মৃত্যু গতবছরের রেকর্ড ছাড়াল
২০ আগস্ট ২০২৩ ১৭:৫১ | আপডেট: ২০ আগস্ট ২০২৩ ১৯:১২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিন নারীর মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। এ নিয়ে চলতি বছর মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪৪ জনে।
রোববার (২০ আগস্ট) বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে দুইজন বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, ২৪ জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ছয়জন চট্টগ্রাম সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া আক্রান্ত আরও ৭১ জন চট্টগ্রামের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়েছে, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট এলাকার নাসরিন আক্তার (৩৭) ও নগরীর সদরঘাট এলাকার রাজ লক্ষী শর্মা (৫৯) এবং রোমানা আক্তার (২৪)।
ডেঙ্গু আক্রান্ত রাজ লক্ষী শর্মাকে শুক্রবার (১৮ আগস্ট) নগরীর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম উল্লেখ করা হয়েছে।
রাজ লক্ষীর ছেলে কুলদীপ শর্মা সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত বুধবার (১৬ আগস্ট) আমার মায়ের ডেঙ্গু ধরা পড়ে। প্রথমে বিআইটিআইডিতে ভর্তি করায়। উনার ডায়াবেটিস ও থাইরডের সমস্যাও ছিল। শুক্রবার অবস্থার অবনতি হবে তাকে জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। তাকে বাঁচানোর সব চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমার মাকে বাঁচাতে পারিনি।’
গৃহিণী নাসরিন আক্তারকে ১৮ আগস্ট নগরীর বেসরকারী এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রোববার ভোরেই তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘ডেঙ্গু শক সিনড্রোম’ ও ‘মাল্টি অর্গান ফেলিওর’ উল্লেখ করা হয়েছে।
নাসরিনের ভাতিজা আমজাদ রুবেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার চাচী একদম সুস্থ ছিলেন। এক সপ্তাহ আগে তিনি হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হন। সঙ্গে শরীর ব্যাথাও ছিল। পরে পরীক্ষায় দেখা গেল ডেঙ্গু পজেটিভ। প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে তাকে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থা অবনতি হলে নগরীর ম্যাক্স ও পরে এভারকেয়ারে হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাই।’
‘এভারকেয়ারে তিনি দুইবার কার্ডিয়াক এ্যাটাক করেছেন। তাকে লাইফ সাপোর্টে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি। তার আড়াই মাস বয়সী একটি দুধের শিশুও আছে। আমার চাচা সৌদি আরব থাকে। টিকেট জটিলতায় তিনি আসতে পারেননি। আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না সামান্য জ্বরে একটি মানুষের কীভাবে সব অঙ্গ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।’
এছাড়া সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের তথ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোমানা আক্তারের মৃত্যুর তথ্য দেওয়া হয়েছে। মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘ডেঙ্গু শক সিনড্রোম’ উল্লেখ করা হয়েছে।
চলতি বছর চট্টগ্রামে মোট চার হাজার ৬১১ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২৪৯ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। চারহাজার ৩৬২ জন সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন।
চলতি আগস্ট মাসে এক হাজার ৮৩৫ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর আগে, জুলাইয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক দুই হাজার ৩১১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। এ ছাড়া জানুয়ারিতে ৭৭ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২২ জন, মার্চে ১২ জন, এপ্রিলে ১৮ জন, মে মাসে ৫৩ জন এবং জুন মাসে ২৮৩ জন আক্রান্ত হন।
চলতি বছর মারা যাওয়া ৪৪ জনের মধ্যে শিশু-কিশোর মিলিয়ে ১৬ জন, ১১ জন পুরুষ এবং ১৭ জন নারী রয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৩ জন, জুনে ৬ জন, জুলাইয়ে ১৬ জন এবং আগস্ট মাসের ১৯ দিনে ১৯ জন মারা গেছেন।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে চট্টগ্রামে ১৭ জন, ২০২১ সালে ২৭১ জন এবং ২০২২ সালে পাঁচ হাজার ৪৪৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল। ২০২২ সালে ৪১ জন এবং ২০২১ সালে পাঁচ জন মারা যায়।
সারাবাংলা/আইসি/ইআ