কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা শুরু ১ সেপ্টেম্বর
১৭ আগস্ট ২০২৩ ২২:৪৩
রাঙ্গামাটি: কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা বন্ধের সময়সীমা আরও ১২ দিন বর্ধিত করে আগামী পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে মাছ আহরণের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। এর আগে, হ্রদে পানিস্বল্পতার কারণে তিন মাসের নির্ধারিত সময়ের পর গত ১৯ জুলাই থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত আরও একমাস মাছধরা বন্ধের সময়সীমা বর্ধিত করেছিল প্রশাসন। তবে এবার হ্রদে পানিস্বল্পতা না থাকলেও ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে মাছের ‘সুষম বৃদ্ধির জন্য’ ২০ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত আরও ১২ দিন বন্ধের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বৈঠক সূত্র।
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) বিকেলে রাঙ্গামাটি জেলাপ্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খানের সভাপতিত্বে কাপ্তাই হ্রদ ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. আশরাফুল আলম ভূঁইয়া, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য বিপুল ত্রিপুরা, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) রাঙ্গামাটি নদী উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা লিপন মিয়া, মৎস্য ব্যবসায়ী উদয়ন বড়–য়া, মো. আব্দুল শুক্কুরসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে ব্যবসায়ীরা দাবি জানিয়েছেন, সপ্তাহব্যাপী টানা বৃষ্টিতে কাপ্তাই হ্রদে পর্যাপ্ত পানি বাড়লেও হ্রদে মাছের সুষম বৃদ্ধি হয়নি। যে কারণে বর্ধিত একমাসের মধ্যে আহরণ শুরু হলে হ্রদে কার্পজাতীয় মাছ ছোট অবস্থাতেই ধরা পড়ে যাবে। যে কারণে আরও কিছুদিন মাছ আহরণ বন্ধের দাবি জানান তারা। পরবর্তীতে বৈঠকে সিদ্ধান্ত আসে আরও ১২দিন সময় বর্ধিত করে ১ সেপ্টেম্বর থেকে মাছ আহরণের।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রাঙ্গামাটির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, ‘বৈঠকে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন হ্রদে এখন পর্যাপ্ত পানি বাড়লেও অনেক মাছ এখনও ছোট রয়েছে, সঠিকমতো বেড়ে উঠতে পারেনি। তাই মাছের সুষম বৃদ্ধির লক্ষ্যে আরও কিছুদিন মাছ ধরা বন্ধ রাখা প্রয়োজন। পরে বৈঠকে ২০ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত আরও ১২দিন সময় বর্ধিত করে আগামী পহেলা সেপ্টেম্বর ভোর থেকে মাছ আহরণ শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. আশরাফুল আলম ভূঁইয়া বলেন, ‘কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ শুরু সংক্রান্ত বৈঠকে আগামী পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে মাছ আহরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
প্রচলিত নিয়মানুসারে প্রতি বছরের ১ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় কৃত্রিম জলাধার কাপ্তাই হ্রদে কার্পজাতীয় মাছের সুষম বৃদ্ধি, হ্রদে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতসহ অন্যান্য জীববৈচিত্র্য রক্ষায় হ্রদে মাছ ধরা বন্ধ থাকে। এসময় হ্রদের মাছ বাজারজাতকরণ ও স্থানীয় বরফকলগুলোও বন্ধ থাকে। হ্রদে নিষেধাজ্ঞা মানাতে নৌ-পুলিশের পাশাপাশি বিএফডিসির মনিটরিং দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু জলাবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিগত কয়েকবছর ধরে হ্রদে পর্যাপ্ত পানি না বাড়ার কারণে বিলম্বে মাছ আহরণ শুরু হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছর (২০২২ সালে) নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১৮ দিন পর ১৯ আগস্ট থেকে মাছ আহরণ শুরু হয়। এর আগের বছর পর্যাপ্ত পানি না বাড়ায় পুরো আগস্ট জুড়ে মাছ আহরণ বন্ধ থাকায় তিনমাসের নিষেধাজ্ঞা চারমাসে ঠেকেছে। দু’বছরই পানি স্বল্পতার মধ্যে শুরু হয় মাছ ধরা। চলতি বছরও তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা চার মাস ১২ দিনে ঠেকেছে। তবে এবার কাপ্তাই হ্রদের চিত্র ভিন্ন; অন্যান্য বছর পানিস্বল্পতার মধ্যে মাছ আহরণ শুরু হলেও এবার হ্রদে পর্যাপ্ত পানি রয়েছে।
এদিকে, কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণনকেন্দ্র সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছর মাছ ধরা বন্ধকালীন সময়ে কাপ্তাই হ্রদে ৭২৬টি অভিযান পরিচালিত করে ৩ হাজার ৪৭৩ কেজি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ২৪৬টি মাছ ধরার নৌকা ও আনুমানিক দেড় লাখ মিটার জাল জব্দ করা হয়। বিগত দুই বছরে একটি করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হলেও এবার হয়েছে ১৪টি।
সারাবাংলা/একে