দুই বিচারপতির পদত্যাগ দাবি
১৭ আগস্ট ২০২৩ ২১:২১
ঢাকা: সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দুই বিচারপতির বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তাদের পদত্যাগ দাবি করেছে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। এই দাবিতে আগামী সোমবার (২১ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে আইনজীবী সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ১ নং হল রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
বিচারপতিগণও ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ এবং বিচার বিভাগ— শিরোনামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
লিখিত বক্তব্যে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘আপনারা অবগত আছেন গত ১৫ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট আয়োজিত এক শোকসভায় প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগের কয়েকজন বিচারপতিগণের বক্তব্য বিভিন্ন টিভি চ্যানেল এবং ১৬ আগস্ট জাতীয় পত্রিকাসমূহে সবিস্তারে প্রকাশিত হয়েছে। দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে উল্লেখিত অনুষ্ঠানে প্রদত্ত মাননীয় বিচারপতিগণের বক্তব্যের বিষয়ে আমাদের আজকের এই সাংবাদিক সম্মেলন।’
তিনি বলেন, ‘দেশের আপামর জনগণের আশা-ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল হলো বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিগণ সংবিধানের তৃতীয় তফসিলে বর্ণিত শপথের মাধ্যমে দেশের সংবিধান ও আইনের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধানের অঙ্গীকার করে থাকেন। একইসঙ্গে ভীতি বা অনুগ্রহ, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হয়ে সবার প্রতি আইন অনুযায়ী যথাবিহীত আচরণ করার অঙ্গীকার করে থাকেন। গত ১৫ আগস্ট আলোচনা সভার প্রদত্ত কয়েকজন বিচারপতির বক্তব্যের কিছু কিছু অংশ বিচারপতি হিসেবে নেওয়া শপথের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন কিনা তা প্রশ্ন রাখার দাবি রাখে। সাধারণত কোনো রাজনৈতিক কর্মী তার দলীয় সভায় যে ধরনের বক্তব্য প্রদান করে থাকেন, অনেক বিচারপতির বক্তব্যে তেমনই একজন রাজনীতিবীদের বক্তব্যের প্রতিফলন লক্ষ করা যায়।’
আলোচনা সভায় বিচারপতি এম. এনায়েতুর রহিম ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ হিসেবে বিচারপতিগণকে চিহ্নিত করেছেন। তিনি স্পষ্টতই দেশের চলমান রাজনৈতিক বিষয়ে শাসক দলের নেতাদের মতো রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে বলেছেন, ‘ইদানিং সুষ্ঠু নির্বাচন, বিদেশি প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত এসব নিয়ে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে ..শুধু ভোট দেওয়াই একমাত্র গণতন্ত্র নয়।’
তিনি বলেন, বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের যে মৌলিক অধিকার জনগণের রয়েছে তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেছেন `সারা পৃথিবীতে নির্বাচন হয় কেউ তাকিয়েও দেখে না, নির্বাচন ঘিরে সব নজর বাংলাদেশের দিকে কেন?’
বিচারকগণের এহেন বক্তব্য কতটুকু বিচারক সুলভ বা রাজনৈতিক মতাদর্শের পরিচায়ক তা সহজেই অনুমেয়। তারা বিচারপতির মহত্ব ধারণ করতে পারেন কি না, তা জনমনে অনেক সংশয় ও প্রশ্ন রাখছে। বস্তুতপক্ষে একজন রাজনীতিকের বক্তব্যই প্রতিধ্বনিত হয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন।
কায়সার কামাল বলেন, ‘এদেশের জনগণের ভোটাধিকার ক্রমাগতভাবে অস্বীকার করে ২০১৪ ও ২০১৮ এর মতো তথাকথিত নির্বাচনের মতো করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বৈতরণ পার করার যে স্বপ্ন এই অনির্বাচিত সরকার দেখছে, গত ১৫ আগস্টের অনুষ্ঠনে কয়েকজন বিচারপতিদের বক্তব্যের মাধ্যমে তা উস্কে দেওয়া হয়েছে বলে দেশের অনেক সচেতন মহল মনে করছেন। এর মাধ্যমে বিচারপতিগণ শাসক দলের প্রতি তাদের সমর্থন প্রকাশ করেছেন বলে সচেতন অনেক নাগরিকই মনে করেন। যা শুধুমাত্র বিচার বিভাগ নয় আমাদের জাতির জন্য এক অশনি সংকেত এবং যাহা দেশের গণতন্ত্র, ন্যায় বিচার, আইনের শাসন ও মানবাধিকারের পরিপন্থি।’
উল্লেখিত বক্তব্যের মাধ্যমে বিচারপতিগণ তাদের শপথ ভঙ্গ করেছেন বলে অনেকেই বিশ্বাস করেন এবং এজন্য আইনগত ও নৈতিকভাবে তারা বিচারকার্য পরিচালনার অধিকার হারিয়েছেন।
এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এই সh স্বঘোষিত ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ বিচারপতিগণকে’ অবিলম্বে পদত্যাগ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট শাখার সভাপতি আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল, ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্টের আহ্বায়ক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন ও যুগ্ম আহ্বায়ক সুব্রত চৌধুরী।
সারাবাংলা/কেআইএফ/একে