বিটিআই নকল প্রমাণ হলে আইনি ব্যবস্থা: ডিএনসিসি
১৪ আগস্ট ২০২৩ ২৩:১৩ | আপডেট: ১৫ আগস্ট ২০২৩ ০২:৪৮
ঢাকা: সিঙ্গাপুর থেকে ব্যাসিলাস থুরিনজিয়ানসিস ইসরায়েলেনসিস (বিটিআই) নামক জৈব কীটনাশক আনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ডিএনসিসি। মার্শাল অ্যাগ্রোভেট নামক একটি প্রতিষ্ঠান এটি আমদানি করে ডিএনসিকে সরবরাহ করে। সারাবাংলাকে সিঙ্গাপুরের বেস্ট কেমিক্যাল লিমিটেড জানায় তারা মার্শাল অ্যাগ্রোভেটকে চেনে না এবং এই নামে কোনো পণ্য তারা বাংলাদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিক্রি করেনি।
এ ছাড়া সারাবাংলার অনুসন্ধানের জানা যায় বিটিআই আমদানীর লাইসেন্সও নেই মার্শাল অ্যাগ্রোভেটের। সংবাদ প্রকাশের আগে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তা না দিলেও সংবাদ প্রকাশের পর এক প্রতিক্রিয়ায় ডিএনসিসি জানিয়েছে বিটিআই আনার সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব মার্শাল অ্যাগ্রোভেটের। পণ্যটি বর্তমানে পরীক্ষা করা হচ্ছে। পরীক্ষায় নকল প্রমাণিত হলে মার্শালের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোমবার (১৪ আগস্ট) সারাবাংলাকে উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী মো. সেলিম রেজা বলেন, ‘পণ্যটি আসল ও কার্যকরী কি না আমরা এখন তা পরীক্ষা করছি। তবে এখনই তদন্ত কমিটি করা হবে না। পণ্য নকল প্রমাণিত হলে তখন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কোথা থেকে পণ্য এনেছে সেটি জানতে চাওয়া হয়েছে। মার্শাল ভাউচার দিলে তা যাচাই-বাছাই শেষে প্রয়োজনে আমরা অ্যাকশনে যাব।’
‘আমরা সরকারি বিধি-বিধান অনুসরণ করে টেন্ডার করেছি। তারপর সেই টেন্ডারের ভিত্তিতে আমরা ঠিকাদার নিয়োগ দিয়েছি। সর্বনিম্ন দাম দেওয়ায় মার্শালকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বিটিআই আমদানি করে আমাদের কাছে জমা দিয়েছে। তারপর আমরা টেস্টে পাঠিয়েছি। আমরা এখনও অফিসিয়ালি পণ্য রিসিভও করিনি, বিলও দেইনি। আমরা পিপিআর অর্থাৎ সরকারের ক্রয় প্রক্রিয়া মেনেই যা করার করেছি। এখন প্রশ্ন হল- বেস্ট কোম্পানি যে এই কথা বলেছে এই পণ্য তারা বেঁচেনি, বাংলাদেশের এই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে তারা চেনে না, তাদের কর্মকর্তার পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিকে তারা চেনে না- এসব আমদানিকারকের বিষয়। আমদানিকারক অন্য কোথাও থেকে বিটিআই কিনেছে কিনা, থার্ড পার্টি থেকে কিনেছে কিনা এগুলোর দায়দায়িত্ব তাদের নিতে হবে। আমরা পণ্য পরীক্ষা করে দেখবো তা কার্যকরী কিনা। পরীক্ষায় এটি আসল প্রমাণিত হলে আমরা এগুবো না হলে এটির বিল তাকে আমরা দিতে পারব না। এই পণ্য আমরা ফিল্ডেও প্রয়োগ করতে পারব না। সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য আনা না আনার দায়দায়িত্ব মার্শাল কেমিক্যালসকে নিতে হবে। না হলে আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় এগুবো’ বলেন উত্তর সিটির এই কর্মকর্তা।
এদিকে টেন্ডারে লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান বিটিআই আনতে পারবে এমন শর্ত থাকার পরেও মার্শালকে দিয়ে কেন আনালেন এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা আগেই উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং পিপিডাব্লিউ থেকে স্পেশাল অনুমতি নিয়েছি। সেই চিঠির কপি অফিস টাইম শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনি দেখাতে পারেননি।’
সেই চিঠিতে তারা কি অনুমতি চেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যে সিঙ্গেল কোম্পানি এটি আনে। সেই মনোপলি ভেঙে অন্য প্রতিষ্ঠান এটি আনতে পারবে কিনা তা জানতে আমরা চিঠি দিয়েছিলাম। সেই চিঠির জবাবে উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং জানিয়েছিল যে অন্য কোনো কোম্পানি আনতে পারবে যদি তাদের অভিজ্ঞতা থাকে। মার্শাল অ্যাগ্রোভেট অনেকগুলো কন্টাক্টে কীটনাশক বাংলাদেশে নিয়ে আসছে। কীটনাশক আনার ক্ষেত্রে তাদের সমস্যা নেই। তাই আমরা মার্শালকে দিয়ে আনিয়েছি। এখন আমরা নিজেরাই লাইসেন্সের অনুমতি চেয়েছি। ডিএনসিসি এখন থেকে নিজেরাই বিটিআই আনবে।’
যদিও এর আগে রোববার (১৩ আগস্ট) উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের পরিচালক ফরিদুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কাছে সিটি করপোরেশন থেকে যে পণ্য পাঠানো হয়, তার সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় গত বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) চিঠিসহ তা ফেরত পাঠিয়েছি।’
কী কাগজপত্র ছিল না জানতে চাইলে ফরিদুল হাসান বলেন, ‘পণ্যটি কারা ও কীভাবে আনে, সেটি সিটি করপোরেশন থেকে জানানো হয়নি। পণ্যটি আনার আগে ডিএনসিসিকে আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো এনওসি-ও (অনাপত্তিপত্র) দেওয়া হয়নি। আমাদের কাছ থেকে লাইসেন্স পাওয়া কোনো প্রতিষ্ঠান এটি আনলে আমরা পরীক্ষা করব। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে আনাতে হলে এনওসি নেওয়া দরকার ছিল।’
অভিযোগ ওঠায় বর্তমানে বিটিআই প্রয়োগ বন্ধ থাকবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমরা ফিল্ড টেস্ট করছি। পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় ফিল্ড টেস্টের জন্য বিটিআই-ও পাঠাচ্ছি। এখন পর্যন্ত আমাদের মাত্র পাঁচজন ব্যক্তি আছে যারা বিটিআই মিক্সড করতে পারে। পণ্যের যথার্ততা যাচাইয়ের জন্য আইইডিসিআর ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ববিদ কবিরুল বাশারের ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি। এসব পরীক্ষায় সঠিক প্রমাণিত হলে আমরা প্রয়োগ করব। আর যদি নকল প্রমাণিত হয়, সেক্ষেত্রেও আমাদের আর্থিক কোনো ক্ষতি নেই।’
সারাবাংলা/আরএফ/একে