Friday 10 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডেঙ্গুতে ১৮ জনের মৃত্যু, ৪০০ ছাড়াল প্রাণহানি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৪ আগস্ট ২০২৩ ১৯:২৬ | আপডেট: ১৪ আগস্ট ২০২৩ ২০:৫০

ঢাকা: রোববার (১৩ আগস্ট) সকাল ৮টা থেকে সোমবার (১৪ আগস্ট) সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪১৬ জনে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ৪৮০ জন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯১৯ জন। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৫৬১ জন।

সোমবার (১৪ আগস্ট) স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মারা যাওয়াদের মধ্যে ২৩৮ জনই নারী। যা মোট মৃত্যুর ৫৭.২১ শতাংশ। এখন পর্যন্ত দেশে ৮৭ হাজার ৮৯১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৪৩ হাজার ৬৬৫ জন এবং ঢাকা মহানগরীর বাইরের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪৪ হাজার ২২৬ জন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৯ হাজার ৪৩১ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে চার হাজার ১৪০ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঁচ হাজার ২৯১ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।

হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭৮ হাজার ৪৪ জন। এর মাঝে ঢাকায় ৩৯ হাজার ২০৭ এবং ঢাকার বাইরে ৩৮ হাজার ৮৩৭ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

মৃত্যু সংখ্যা বেশি নারীর

চলতি বছর এখন পর্যন্ত যারা ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় পুরুষ রোগীর সংখ্যা বেশি। তবে মৃত্যুর পরিসংখ্যানে পুরুষের তুলনায় নারীদের মারা যাওয়ার হার বেশি। এর মধ্যে মারা গেছেন গর্ভবতী নারীরাও।

বিজ্ঞাপন

চলতি বছর এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত ৩২ হাজার ৭৯৮ জন পুরুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৫৫ হাজার ৯৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

অন্তঃসত্ত্বা নারীরা ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে ঝুঁকি বাড়ে

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সহযোগী অধ্যাপক ও গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. রেজাউল করিম কাজল সারাবাংলাকে বলেন, গর্ভাবস্থায় যদি কারো ডেঙ্গু হয় তবে তা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে রক্তের অনুচক্রিকা কমে যায়। আবার গর্ভাবস্থার শেষের দিকে প্রসূতি নারীর রক্তের অনুচক্রিকা কমে যায়। বিশেষ করে শেষ তিন মাসে এমনটা ঘটে বেশি। ওই সময়ে যদি কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় তবে তার দুই ধরণের বিপদ দেখা দিতে পারে।

তিনি বলেন, প্রথমত ডেঙ্গু থেকে শরীরে পানি কমে যায়। এর ফলে প্রেশার বা রক্তচাপ মাত্রা কমে আসে অনেক ক্ষেত্রে। এর ফলে মায়ের পাশাপাশি পেটের সন্তানের শরীরের রক্ত চলাচল ও পুষ্টি কমে যেতে পারে। এর ফলে গর্ভেই শিশুর মৃত্যু হতে পারে। অথবা অসময়ে সন্তান প্রসব হতে পারে। অথবা সন্তানের ওজন কম হতে পারে। এর কারণে শেষ তিনমাসের দিকে বা প্রসবকালীন সময়ে মায়ের ডেঙ্গু হওয়াটা বেশি ভয়ের।

তিনি আরও বলেন, যদি গর্ভকালীন সময়ের প্রথম বা দ্বিতীয় তিন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় নারী তবে সেটাও কিন্তু বিপজ্জনক। কারণ এ সময় জ্বরের কারণে মায়ের গর্ভপাত হয়ে থাকে। সব মিলিয়ে বিপদ বেশি মায়েরই। অন্যদিকে রক্ত বন্ধ হওয়ার যে প্রক্রিয়া সেটা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কারো কারো দাঁত দিয়ে, চোখ দিয়ে, নাক দিয়ে রক্ত বের হয়। গর্ভবতী মায়ের এক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর ফলে মা ও সন্তান দুইজনেরই মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়।

ডা. রেজাউল করিম কাজল বলেন, সবচাইতে বেশি কপাল খারাপ সেই প্রসূতি নারীর যার হয়তোবা ডেঙ্গু হয়েছে আজ কিন্তু একইসঙ্গে শুরু হয়েছে প্রসব বেদনাও। প্রাকৃতিক নিয়মেই এমনটা সম্ভব। দেখা গেলো একজন গর্ভবতীর সন্তান প্রসবের দিনেই ডেঙ্গু শনাক্ত হলো যার সেদিনই অস্ত্রোপচার করতে হবে। যাদের আগে একটা বা দুইটা অস্ত্রোপচারের ইতিহাস আছে তাদের যদি অস্ত্রোপচার করতেই হয় সেক্ষেত্রে আরেকটা বিপদ ঘটে। এমন রোগীর যদি ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার দিনই পানি ভাঙে অর্থাৎ অস্ত্রোপচার করতেই হবে এমন পরিস্থিতি সামনে আসে তখন আরেকটা বিপদ। কারণ একদিকে তার গায়ে জ্বর আবার ডেঙ্গুর কারণে রক্তে অনুচক্রিকাও কমে এসেছে।

তিনি বলেন, এমন রোগীর অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে মৃত্যুঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যায়। সাধারণত বেসরকারি ক্লিনিকে এই অস্ত্রোপচারগুলো করতে চান না অনেকেই। মা ও নবজাতকের মৃত্যুঝুঁকি থাকার কারণে তারা সরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন রোগীকে। এসব অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে, অনেক বেশি রক্তের প্রয়োজন হতে পারে। আবার রক্ত দিয়েও যে এমন সমস্যার সমাধান করা সম্ভব তেমন নাও হতে পারে। এই গর্ভবতী নারীদের অবস্থা সবচাইতে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে তখন।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা সংস্থা আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বলেন, অন্তঃসত্ত্বা নারী ঝুঁকিপূর্ণ জনসংখ্যার অন্তর্ভুক্ত। কারণ একজন নারী যখন অন্তঃসত্ত্বা হন, তখন তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এ সময় তিনি সব ধরনের রোগের ঝুঁকিতে থাকেন।

তিনি বলেন, এ জন্য এই সময়ে বাড়িতে যদি অন্তঃসত্ত্বা কেউ থাকে, তাহলে অবশ্যই বাড়ির আঙিনা এডিস মশামুক্ত রাখতে হবে। ঘুমানোর সময় মশারি টানাতে হবে। এ ছাড়া ফুলহাতা পোশাক ও পায়ে মোজা পরবে। জ্বর হোক বা না হোক, কোনো ধরনের অসুস্থতা দেখা দিলেই তার ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে। কারণ লক্ষণ ছাড়া ডেঙ্গু হলে অন্তঃসত্ত্বা নারী ঝুঁকিতে পড়বেন।

সারাবাংলা/এসবি/এনইউ

ডেঙ্গু মৃত্যু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর