‘নৌকায় ভোট দিলে উন্নয়নশীল দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে’
৬ আগস্ট ২০২৩ ১৭:৪৬ | আপডেট: ৬ আগস্ট ২০২৩ ১৮:৩৪
ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণেই হচ্ছে ভোটের মালিক। তারা যদি চায় উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে তাহলে নৌকা মার্কায় আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে হবে। আওয়ামী লীগ ভোট পেলেই এটি সম্ভব হবে, অন্য কেউ হলে করবে না।
রোববার (৬ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় তিনি এ সব কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভা শুরু হয়। ১ম পর্বে সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম। সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগ সভাপতির বক্তব্যের বিভাগওয়ারী তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য পর্ব শুরু হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। পাশাপাশি ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্বভার কাঁধে নিয়ে নিজ সন্তানদের মাতৃস্নেহ বঞ্চিত করে বাংলার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে ছুটে আসার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন তিনি।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে অনেকেই বেঁচে নেই। সর্বশক্তি দিয়ে আমাকে সহায়তা করেছেন। যে প্রেরণা দিয়ে গেছেন, সেটি আমি চিরদিন মনে রাখব। বাংলাদেশে আসার পর আমার চলার পথ এত সহজ ছিল না। বারবার আঘাত এসেছে সেটি আপনারা অনেকেই জানেন, অনেকেই জানেন না। ৪২ বছর আগের কথা। প্রতিনিয়ত প্রতি পদে আমাকে প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হয়। বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে।’
বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে, ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যারা আত্মাহুতি দিয়েছেন তাদের আত্মার মাগফেরাতও কামনা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন,‘ ২১টা বছর আমাদেরকে শুধু আহতদের চিকিৎসা আর লাশ টানতে হয়েছে। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর অন্তত এই দেশের মানুষ এইটুকু পেয়েছিল, জনগণের সেবক হিসেবে আমরা কাজ করেছিলাম।’
২০০১ সালে দেশীয়-আন্তর্জাতিক চক্রান্ত করে আওয়ামী লীগকে সরকার গঠন করতে না দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে সরকার গঠন করার পর দলের নেতাকর্মীদের ওপর যে অকথ্য অত্যাচার নির্যাতন নেমে আসে তার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন।
পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসন এবং দুর্নীতির কারণে দেশে এক/এগারোর সরকারের ক্ষমতা গ্রহণ করার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাধ্য হয় নির্বাচন দিতে। সেই নির্বাচনে ২০০৯ সালে আমরা জয়ী হই। অনেকের ধারণা ছিল আওয়ামী লীগ তেমন ভোট পাবে না। কাজেই আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে পারবে না। কিন্তু তা না এদেশের মানুষ আমাদের ওপর আস্থা রেখেছে। বিশ্বাস রেখেছে। কারণ আমরা তো জনগণের ভোটের অধিকার সুরক্ষিত করার জন্যই সংগ্রাম করেছি। আর বিএনপির আমলে কী হয়েছে? জিয়ার আমলে হ্যাঁ-না ভোট ভোট চুরির কালচার শুরু হলো। এরশাদও ৪৮ ঘণ্টা ভোট বন্ধ রেখে ১৯৮৬ সালে ভোট কারচুপি করল। খালেদা জিয়া তার থেকে আরও একভাগ বেশি।’
১৯৯১ সালের নির্বাচনে কোনো দল সরকার গঠন করার মত সংখ্যাগরিষ্ট আসন পায়নি জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই সময় তখন যিনি প্রধান বিচারপতি ছিলেন শাহাবুদ্দিন সাহেব। তিনি তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত। তিনি আমাকে ডেকেছিলেন। আমাকে বলেছিলেন, আপনি সরকার গঠন করতে পারেন। কীভাবে? জামায়াত আর জাতীয় পার্টি আমাকে সমর্থন দেবে। হ্যাঁ, সংখ্যাগরিষ্ঠতা হয়। জামায়াত, জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগ এক হলে সংখ্যাগরিষ্টতা হয়। তিনি আমাকে বলেছিলেন আপনি তো সরকার গঠন করতে পারেন?’
‘আমি রাজি হইনি। কারণ ওইভাবে সরকার গঠন করতে রাজি ছিলাম না। আমি বলেছি যে, আমি যখন সরকার গঠন করার মতো সংখ্যাগরিষ্ট আসন পাইনি তখন আমি এভাবে সরকার গঠন করব না। আপনি অন্যদের ডাকেন তারা করুক। এরপর বিএনপি জামায়াতের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেছিল বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘ওইটুকু ত্যাগ স্বীকার যদি না করতাম তাহলে ২০০৯’এ নির্বাচনে আমরা আসতে পারতাম না। ওইটকু ত্যাগ স্বীকার যদি না করতাম তাহলে ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া নির্বাচনের নামে এক প্রহসন করেছিল। ৩/৪ শতাংশ ভোটও পড়েনি। ভোট চুরি করে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিল বলে ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এই ভোট চুরি মেনে নেয়নি। বাংলাদেশের মানুষ ভোট চুরি করলে মেনে নেয় না। কাজেই খালেদা জিয়া ভোট চোর হিসাবে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল ৩০ মার্চ। এরপরে যে ইলেকশন হলো ১২ জুন। সেই নির্বাচনে আমরা জয়ী হই। সরকার গঠন করি ১৯৯৬ সালে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা দিয়েছিলাম। ২০২০’ এ জাতির পিতার জন্মশতাবার্ষিকী উদযাপন ২০২১’এ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। আর জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং সুবর্ণজয়ন্তী আমরা উদযাপন করছি সেই আন্তর্জাতিকভাবে জাতিসংঘ সর্বসম্মতিভাবে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছিল। জাতির পিতা যুদ্ধবিধস্ত দেশ গড়ে স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে রেখে গিয়েছিলেন। যেটি জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত ছিল। আর তারপরে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে এই দীর্ঘ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করার ফলেই আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে আমাদের যাত্রা শুরু হবে ২০২৬ সালে। বাংলাদেশের মানুষকে আমি আহ্বান করবো, তারা কী চান বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা নিয়ে এগিয়ে চলুক? বাংলাদেশের জনগণকে প্রশ্ন করবেন? কারণ বাংলাদেশের জনগণেই হচ্ছে ভোটের মালিক। তারা যদি চায় উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, প্রতিষ্ঠিত হবে। তাহলে নৌকা মার্কায় আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে হবে। আর আওয়ামী লীগ ভোট পেলেই এটি সম্ভব হবে। তা ছাড়া অন্য কেউ হলে করবে না।’
বিশেষ বর্ধিত সভায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা, জেলা ও মহানগর, উপজেলা, থানা, পৌর (জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভা) আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় সংসদের দলীয় সদস্য, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দলীয় মেয়র এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত রয়েছেন। সারাদেশ থেকে প্রায় তিন হাজার নেতা ও জনপ্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এনআর/একে