বাবা হাসতে হাসতে জান দিয়েছেন: হুম্মাম কাদের চৌধুরী
৪ আগস্ট ২০২৩ ১৯:৫৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রয়োজন হলে বাবার মতো নিজেও জিয়া পরিবারের জন্য জীবন দিয়ে দেবেন বলে মন্তব্য করেছেন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া ‘যুদ্ধাপরাধী’ সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী।
শুক্রবার (৪ আগস্ট) বিকেলে নগরীর কাজীর দেউড়ীর দলীয় কার্যালয়ের সামনে নূর মোহাম্মদ সড়কে তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানকে সাজা দেওয়ার প্রতিবাদে মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির উদ্যেগে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
নিজেকে জিয়াউর রহমান ও তারেক রহমানের সৈনিক পরিচয় দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আজ এখানে আপনারা যারা যারা আছেন সকলের সামনে একটি ওয়াদা করতে চাই। যতদিন পর্যন্ত এই অবৈধ সরকার এবং এই বিচার বিভাগ…. যেটি এখন খালি নাটকই করছে। বাংলাদেশের মানুষের কাছে খালি নাটক করছে। যতদিন পর্যন্ত এদের বিচার আমরা করব না, ততদিন আমরা মাঠ ছেড়ে যাব না।’
‘আপনাদের সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাই, আমার বাবা উনি ছিলেন বেগম জিয়ার সৈনিক। হাসতে হাসতে জান দিয়ে দিয়েছেন। আপনাদেরকে বলে দিতে চাই, আমি জিয়াউর রহমান ও তারেক রহমানের সৈনিক। দরকার পড়লে আমিও আমার জান দিয়ে দেবো।’
‘আজ আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, আপনাদের কাছে একটি জিনিস জানতে চাই। এই রাজপথে যত সমাবেশ হবে, যতগুলো প্রোগ্রাম হবে আপনারা কি আমাদের মাঝে থাকবেন? ইনশাল্লাহ.. এখন থেকে তারেক রহমান যতগুলো প্রোগ্রামের ডাক দেবে চট্টগ্রামের মানুষ, বরিশাল হোক, রাজশাহী হোক আমরা হাজির হবো ইনশাল্লাহ।’
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধে অংশ নেওয়া সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামে। তারা বাবা তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ভূমিকায় ছিলেন। পাকিস্তানের পরাজয়ের পর ১৯৭১ সালের ২৮ ডিসেম্বর নৌযানে করে দেশ থেকে পালানোর পথে আনোয়ারা উপজেলার গহীরা উপকূলে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়েছিলেন ফজলুল কাদের। বন্দি অবস্থায় ১৯৭৩ সালের ১৮ জুলাই তার মৃত্যু হয়।
অন্যদিকে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেই মুক্তিযোদ্ধাদের হামলায় আহত হয়ে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী দেশ ছেড়েছিলেন। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর তিনি দেশে ফিরে রাজনীতি শুরু করেন। মুসলিম লীগ, জাতীয় পার্টি, এনডিপি এবং ফাঁসিতে দণ্ডিত হওয়ার সময় পর্যন্ত তিনি বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের বিচার শুরু হলে সালাহউদ্দিন কাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় প্রমাণিত হওয়ায় সাকা চৌধুরীর ফাঁসির রায় দেন আদালত। ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর তার ফাঁসির রায় কার্যকর হয়।
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির পর কিছুদিন রাজনীতির মাঠে থাকলেও পরে পর্দার আড়ালে চলে গিয়েছিলেন হুম্মাম কাদের চৌধুরী। গত একবছর ধরে তাকে আবার সক্রিয় দেখা যাচ্ছে। সাকা পরিবারের মধ্যে তার ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান পদে আছেন। তবে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় নন।
নগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, সদস্য মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন ও দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান।
সারাবাংলা/আইসি/একে