জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে সুন্দরবন ও করমজল
৪ আগস্ট ২০২৩ ১৭:২৬ | আপডেট: ৪ আগস্ট ২০২৩ ১৯:৩২
বাগেরহাট: বৃষ্টি ও পূর্ণিমার প্রভাবে স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েক ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হচ্ছে সুন্দরবন। টানা চারদিন ধরে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের দুবলার চর ও দেশের একমাত্র বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্র করমজল। তবে এখন পর্যন্ত বন বিভাগের কোনো স্থাপনায় তেমন ক্ষতি হয়নি।
এদিকে নিম্নচাপ, বৃষ্টি ও পূর্ণিমার প্রভাবে মোংলা বন্দরের পশুর নদীতে স্বাভাবিকের তুলনায় দুই ফুট পানি বেড়েছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে পূর্ব সুন্দরবনসহ উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে তিন ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। সাগরে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে গেছে পূর্ব সুন্দরবনের নিম্নাঞ্চল।কটকা, দুবলা, কচিখালী ফরেস্ট অফিস, ব্রাক ও রেস্টহাউস পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পানির কারণে বন রক্ষিদের চলাচলে সংকট সৃষ্টি হচ্ছে।বন্যপ্রাণীরা আশ্রয় নিয়েছে অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে। উত্তাল সাগরে জেলেরা টিকতে না পেরে ফিশিং ট্রলারসহ আশ্রয় নিয়েছে বনের বিভিন্ন খালে।
অপরদিকে সুন্দরবন সংলগ্ন বলেশ্বর নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শরণখোলা উপজেলার ৩৫/১ পোল্ডারের বেড়িবাঁধের বাইরে থাকা দুই শতাধিক গৃহস্থের বাড়ির উঠোনে পানি জমেছে। সুন্দরবন অঞ্চলে এখনও কিছুক্ষণ পর পর ঝড়- বৃষ্টি হচ্ছে।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের কটকা অভয়ারণ্য কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুজিত চৌধুরী জানান, উত্তাল রয়েছে সমুদ্র। সাগর তীরবর্তি বনাঞ্চল ও বনবিভাগের অফিসও প্লাবিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধির ঘটনায় বন বা বন্যপ্রাণীর তেমন ক্ষতি হচ্ছেনা। এক দুই দিনের মধ্যে আবহাওয়া শাস্ত হলে বনের পানি নেমে যাবে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের জেলে পল্লীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ জানান, নিম্নচাপ-লঘুচাপের প্রভাবে স্বাভাবিকের তুলনায় সাগরে জোয়ারের পানি অনেকে বেড়েছে। ফলে অস্বাভাবিক জোয়ারে দুবলার চরে ৫-৬ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাটা হলে আবার পানি নেমে যাচ্ছে। তবে এ জ্বলোচ্ছাসে দুবলার চরে কোথাও এখনও পর্যন্ত ক্ষতি নজরে আসেনি।
চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির জানান, চারদিন ধরে অস্বাভাবিক জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে করমজল। করমজলের রাস্তার উপরে দেড় ফুট, আর বনের ভেতরে ৩-৪ফুট উচ্চতার জ্বলোচ্ছাসে প্লাবিত হচ্ছে। পূর্ণিমায় সাধারণত জোয়ারের পানি বেড়ে থাকে। কিন্তু এবার সাগরে নিম্নচাপ-লঘুচাপের প্রভাব আর বৃস্টির কারণে পানির চাপও বেড়েছে। এখন পর্যন্ত করমজলে কুমির, কচ্ছপ, হরিণ ও বানরসহ অন্যান্য প্রাণী নিরাপদে রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘সাগরের নিম্নচাপ-লঘুচাপের প্রভাবে এবং বৃষ্টি ও পূর্ণিমায় মোংলা বন্দরের পশুর নদীর পানি স্বাভাবিকের তুলনায় দুই ফুটের বেশি বেড়েছে।’
বন্যপ্রাণীর ক্ষতির আশঙ্কা তেমন একটা নেই বলে জানিয়েছেন সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন। তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়টি মাথায় রেখেই বনের ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় উঁচু টিলা তৈরি করা হয়েছে। পানি বাড়লে বন্যপ্রাণীরা টিলায় আশ্রয় নিতে পারবে।’
সারাবাংলা/একে