প্রতিশ্রুতি রাখেনি বিশ্বব্যাংক, প্রকল্প ব্যয় কমিয়ে সংশোধনী
৩১ জুলাই ২০২৩ ১১:৪০
ঢাকা: প্রতিশ্রুতি রাখেনি বিশ্বব্যাংক। কোভিড-১৯ এর কারণে প্রকল্পের গতি কমে যাওয়ায় অর্থ তুলে নিতে অনুরোধ করা হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকেই। কথা ছিল পরবর্তীতে একই প্রকল্পে প্রত্যাহার করা টাকা সমন্বয় করা হবে। কিন্তু সেটি করেনি বিশ্বব্যাংক। ফলে কাজের কম্পোনেন্ট বা অঙ্গ বাদ দিয়েই প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। বাংলাদেশ আঞ্চলিক অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন প্রকল্প-১ শীর্ষক প্রকল্পে বিরাজ করছে এ অবস্থা। প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ নৌপথ এবং টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি নিয়ে কাজ চলছে। শিগগিরই হয়তো প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হবে। সংশোধনী প্রস্তাবটি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এটি না হলে প্রকল্পের পরবর্তী কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে পারে।’
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নদীমাতৃক বাংলাদেশে অনেক নৌ-রুট রয়েছে। নৌপরিবহন হলো তুলনামূলকভাবে সহজ ও পরিবেশবান্ধব এবং দেশের দূরবর্তী অংশের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম। চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ নৌ-করিডোর এবং নারায়ণগঞ্জ ও বরিশালের বর্ধিতাংশকে অভ্যন্তরীণ এবং ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রাধিকার রুট হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ অভ্যন্তরীণ নৌযান ও করিডোরের মধ্য দিয়ে চলাচল করে। দৈনিক প্রায় দুই লাখ যাত্রী এসব জলপথ ব্যবহার করে। যাত্রী ও মালামাল পরিবহন করার ক্ষেত্রে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, আশুগঞ্জ, চাঁদপুর এবং বরিশাল অভ্যন্তরীণ নদী টার্মিনালগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক পথের ওপর পণ্যবাহী যানবাহনের চাপ কমানোর উদ্দেশে অভ্যন্তরীণ নৌপথগুলো উন্নয়নের জন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দীর্ঘদিনের আলোচনা হয়।
প্রাথমিকভাবে বিআইডব্লিউটিএ বিশ্বব্যাংকের আইডিএ ফান্ডের সহায়তায় ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুনে বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছিল। ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদিত হয়।
বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে স্বাক্ষরিত আর্থিক চুক্তি অনুসরণ করে এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক দলিল তথা প্রজেক্ট এগ্রিমেন্ট, প্রজেক্ট আপারসেল ডকুমেন্ট (পিএডি) ইত্যাদি পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে মূল অনুমোদিত ডিপিপির (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) কিছু সংশোধনীর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এজন্য চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএ করিডোরের উন্নয়ন এবং বিআইডব্লিউটিএর প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা দরকার। ফলে ৩ হাজার ৫২ কোটি ৮০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের প্রথম সংশোধন করা হয়।
বর্তমানে নতুন প্যাকেজে ১৫টি ল্যান্ডিং স্টেশন নির্মাণ, ভ্যাসেল, হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ সরঞ্জাম সংগ্রহ, ডিইপিটিসির জন্য আধুনিক শিক্ষার উপকরণ এবং সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হবে। কার্গো ও রিভার টার্মিনালের জন্য ম্যাটিরিয়াল হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ করা হবে। ১ হাজার ৪০০ মিটার থেকে ৩ হাজার মিটার, ৭০০ মিটার থেকে ৯৯০মিটার, ২৫০ মিটার থেকে ৩০৫ মিটার এবং ৫৫০ মিটার থেকে ৯৯০ মিটার বৃদ্ধি করতে হবে। এসব কারণে এখন ২ হাজার ৭৭২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২৭ সালের জুনে দ্বিতীয় সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। অনুমোদিত প্রকল্প ব্যয় হতে প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধিত প্রকল্প ব্যয় ৬৭১ কোটি ২০ লাখ টাকা কম।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ এর কারণে ২০২০ সালের মার্চ থেকে প্রকল্প বাস্তবায়ন স্লথ হয়ে পড়ে। দেশের সরকারের অনুরোধে বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্প ২০২০ সালের এপ্রিলে ১২৬ মিলিয়ন ইউএস ডলার বিশ্বব্যাংক প্রত্যাহার করে নেয়। এজন্য প্রকল্পের মোট প্রকল্প সাহায্যে দাঁড়ায় ২৩৪ মিলিয়ন ইউএস ডলার। প্রত্যাহার করা টাকা পরবর্তীতে প্রকল্পে সমন্বয় করার কথা বলা হলেও তা সমন্বয় করা হয়নি।
বিশ্বব্যাংক গত বছরের ২৫ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ইমপ্লিমেন্টেশন সাপোর্ট মিশনে আরডিপিপির বিআরডব্লিউটিপি-ডব্লিউআইএ প্যাকেজের লট-১ আরডিপিপি থেকে বিয়োজন, কার্য প্যাকেজ বিআরডব্লিউটিপি-ডব্লিউ ২, ডব্লিউ ৩ এবং ডব্লিউ ৪ এর আওতায় সাতটি লটের প্রাক্কলন এবং অন্যান্য বিষয় সংশোধন করে ডিপিপি পুনঃসংশোধনের নির্দেশনা দেন। এমন সংশোধনের ফলে প্রকল্প ব্যয় ৫৭৭ কোটি ৮ লাখ টাকা হ্রাস পেয়ে মোট ২ হাজার ৭৭২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা দাঁড়ায় যা অনুমোদিত আরডিপিপি হতে ১৭.২৩ শতাংশ কম। এই প্রকল্পের আওতায় ড্রেজিং কাজের প্যাকেজ বিআরডব্লিউটিপি-ডব্লিউআইএ’র লট-২ ও রট-৩ এবং বিআরডব্লিউটিপি-এসআইএ’র চুক্তি শেষ করা হয়েছে এবং কাজ চলমান রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী এই কাজগুলো বাস্তবায়নে ৬৬ মাস সময় নির্ধারিত রয়েছে।
প্রকল্প প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, এই প্রকল্পের আরডিপিপিতে ড্রেজিং প্যাকেজের তিনটি লটের মধ্যে বিআরডব্লিউটিপি-ডব্লিউআইএ লট-২ এবং বিআরডব্লিউটিপি-ডব্লিউআইএ লট-৩ এর কাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী বিআরডব্লিউটিপি-ডব্লিউআইএ লট-১ এর ড্রেজিং কাজটি চলমান প্রকল্প হতে বাদ দিয়ে পরবর্তী ফেইজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাদ দেওয়া লটটি বাস্তবায়নে আরডিপিপিতে ৬২৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। বিআরডব্লিউটিপি-ডব্লিউআইএ প্যাকেজের আওতায় লট-১ কাজটি বাদ দিলেও এই লটে বরাদ্দ করা অর্থ প্রকল্পের কাজে ব্যয়ের জন্য বিশ্বব্যাংক কর্তৃক পরামর্শক দেওয়া হয়।
এছাড়াও কার্য প্যাকেজ বিআরডব্লিউটিপি-ডব্লিউ-২, ডব্লিউ-৩ এবং ডব্লিউ-৪ এর আওতায় সাতটি লটের মূল্যায়ন শেষ হয়েছে। দরপত্র মূল্যায়নে ৭টি লটের জন্য প্রথম সংশোধিত ডিপিপি’তে বরাদ্দ করা মূল্য ৭৮৮ কোটি টাকা হতে সর্বনিম্ন রেসপনসিভ দরদাতা প্রতিষ্ঠান মোট দর ১০৩ কোটি টাকা বেশি অর্থাৎ সর্বমোট ৮৯৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এই প্যাকেজগুলোর প্রাক্কলন প্রায় ৪ বছর আগে প্রণয়ন করা হয়েছিল এবং নির্মাণ সামগ্রীর দাম আকস্মিকভাবে ২০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিপিপির বরাদ্দ থেকে দরপ্রস্তাব বেশি হয়েছে। এসব বিষয়ও দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবে বিবেচনা করা হয়েছে।
সারাবাংলা/জেজে/এমও