বিএনপির আন্দোলনে ৮০ ভাগ মানুষের সমর্থন: রিজভী
৩০ জুলাই ২০২৩ ২২:৪৪
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে বিএনপির চলমান আন্দোলনে দেশের ৮০ ভাগ মানুষের সমর্থন রয়েছে বলে দাবি করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রোববার (৩০ জুলাই) রাতে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।
রিজভী বলেন, ‘অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির এক দফার আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছেন দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ও শতকরা ৮০ ভাগের বেশি মানুষ।’
তিনি বলেন, “আজ শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে ‘স্টেপ ডাউন শেখ হাসিনা’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টুইটারে ভাইরাল হয়েছে। ‘স্টেপ ডাউন শেখ হাসিনা’ লিখে পোস্ট দিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী।’
রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণসহ বিশ্ব দরবারে বারবার প্রমাণ হয়েছে নিশিরাতের সরকার ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। বিএনপির এক দফার আন্দোলনের সমর্থনে গত ২৮ জুলাইয়ের মহাসমাবেশে সাধারণ মানুষের ঢল নেমেছিল। গতকালকে ঢাকার প্রবেশমুখে বিএনপির শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে নারকীয় হামলা চালিয়েছে এবং তাদের হামলা ও গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমান উল্লাহ আমানসহ ৭ শতাধিক নেতাকর্মী।’
‘লাঠিপেটা করতে করতে আটক করা হয় বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদকে। গতকালের সরকারি বাহিনীর সহিংস আক্রমণের খবর বিশ্ব গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হলে উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর কৌশল নেয় সরকার। এখন বিএনপির বিরুদ্ধে অপবাদ দেওয়ার জন্য নানা ফন্দি-ফিকির করলেও জনগণ এসব আমলে নেয়নি। বরং সরকারি বাহিনীর নির্যাতনের খবরই জনগণের মুখে মুখে’— বলেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জন্মগতভাবেই বিশ্বাস করে অশান্তি, হিংসা আর হানাহানি। ক্ষমতায় আসার জন্য জনগণের কাছে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতাসীন হয়েই জনগণের সাথে একের পর বিশ্বাসঘাতকতা করতে থাকে। বিরোধীদল, বিরোধীমত তথা গণতন্ত্রের প্রতি এক ধরনের ক্রোধ থেকেই শেখ হাসিনার মনে জন্ম নেয় প্রতিহিংসা।’
রিজভী বলেন, ‘গতকাল ঢাকার প্রবেশ মুখে বিএনপির ঘোষিত কর্মসূচি ছিল শান্তিপূর্ণ। অশান্তির ঘেরাটোপে দেশের জনগণকে ঠেলে দেওয়ার জন্যই সরকারের ধারাবাহিক নৃশংসতার কোনো অন্ত নেই। সেটিরই নগ্ন বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে। গতকাল আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এবং তাদের পালকের মধ্যে যুবলীগ-ছাত্রলীগকে নিয়ে বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। অবিরাম গুলিবর্ষণ, বেধড়ক লাঠিচার্জ, মুহুর্মূহ টিয়ারশেল নিক্ষেপ এবং পাইকারি হারে গ্রেফতারের এক ভয়ংকর জুলুম ও নিপীড়ন নামিয়ে আনা হয় বিএনপির কর্মসূচির ওপর।’
‘আজ ১১টি মামলায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, ডেমরা-যাত্রাবাড়ীর সাবেক এমপি সালাহ উদ্দিন আহমেদ, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, নিপুণ রায় চৌধুরী, শওকত হোসেন সরকার, সাইফ মাহমুদ জুয়েল, তানভীর আহমেদ রবিনসহ ৫৪৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। বিরোধী দলকে নির্মূল করতে রাষ্ট্রযন্ত্র এখন মূল হাতিয়ার। আইনের শাসনের সার্বজনীন মূলনীতিকে পদদলিত করে শেখ হাসিনার প্রাইভেট বাহিনীতে পরিণত করার ফলেই পুলিশ, আইন আদালত ও প্রশাসনকে গণতন্ত্রের কসাই হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে’— বলেন রুহুল কবির রিজভী।
‘ভিসা নীতির ভয়ে নয়, মানবিক কারণে বিএনপি নেতাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে’— স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে রিজভী বলেন, ‘আমার প্রশ্ন— তাহলে শত শত নেতা-কর্মীর রক্ত ঝরালেন কোন মানবিক তাগিদে, শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করলেন কোন মানবতাবোধ থেকে? আজ প্রায় ছয়শ’র মতো নেতা-কর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন কোন মানবতাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে?’
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম