‘গণ্ডগোল না হওয়ায় চটে গিয়ে আগুন সন্ত্রাসের নির্দেশ দেন তারেক’
৩০ জুলাই ২০২৩ ২১:২৭ | আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৩ ২১:৩২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে দলটির নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর আক্রমণের পাশাপাশি গাড়িতে আগুন দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
রোববার (৩০ জুলাই) বিকেলে নগরীর দোস্ত বিল্ডিং চত্বরে ‘বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস নৈরাজ্য ও সহিংসতার’ প্রতিবাদে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে তিনি একথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গত শুক্রবার ঢাকায় বিএনপি সমাবেশ করেছে। একইসাথে আমাদের যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ যৌথভাবে বিশাল সমাবেশ করেছে। মাত্র সোয়া কিলোমিটার দূরত্বে দুইটি বিশাল সমাবেশ হয়েছে, কিন্তু ঢাকা শহরে বিন্দুমাত্র কোনো গণ্ডগোল হয়নি। কারণ, আমাদের দলের নেতাকর্মীরা এবং প্রশাসন সতর্ক দৃষ্টি রেখেছিল।’
তারেক রহমানের নির্দেশে হামলা-ভাংচুরের অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘শুক্রবার গণ্ডগোল কেন হল না, সেজন্য বিএনপি নেতাদের উপর বেজায় চটেছেন তারেক রহমান। গণ্ডগোল করার উদ্দেশ্যে পরদিন শনিবার ঢাকা শহরের প্রবেশ মুখগুলোতে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। তারেক জিয়া নিজে ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে নেতাদের ফোন করে নির্দেশ দিয়েছেন গাড়ি ভাংচুর করার জন্য, আগুন দেয়ার জন্য এবং পুলিশের ওপর আক্রমণ করার জন্য। সেই প্রমাণ আমাদের হাতে আছে।’
বিএনপি আবার পেট্রোলবোমা বাহিনী মাঠে নামিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন বিএনপি নেত্রী নিপুন রায়ের অডিও বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তিনি আগুন দেয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। আবার বলছে, এটা একটু ভিডিও করে রাখেন, জায়গামতো পাঠাতে হবে, অর্থাৎ তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পাঠাতে হবে।’
হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ‘শুক্রবার বিএনপি যেখানে সমাবেশ করতে চেয়েছে, সেখানে অনুমতি দেয়া হয়েছে। সমাবেশের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে। কিন্তু এই রাজপথ মানুষের, ঢাকা শহরের প্রবেশপথ বন্ধ করে দেয়ার অধিকার কোনো রাজনৈতিক দলের নেই। নগরে ঢোকা বন্ধ করে দেয়ার অধিকার কাউকে সরকার দিতে পারে না, সেজন্য সরকার অনুমতি দেয়নি।’
‘বিএনপি শনিবার প্রথমার্ধে সাতটি বাস জ্বালিয়েছে, রাতের বেলা আরও গাড়িতে আগুন দিয়েছে। প্রত্যেকটি গাড়ি ব্যক্তি মালিকানাধীন। অনেক কষ্টে গাড়িগুলো কিনেছে মানুষ। এই গাড়ি জ্বালানোর মধ্য দিয়ে একটি পরিবারকে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে, একটি পরিবারের স্বপ্নকে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। এটি কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি হতে পারে না। যারা গাড়িতে আগুন দিয়েছেন সেগুলো ভিডিও ফুটেজ আছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের গ্রেফতার করা হবে।’
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সতর্ক ও প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীদের কেউ আঘাত করলে, পাল্টা আঘাত করার জন্য তারা একসাথে নেমে পড়ে। বিএনপির হামলাকারীদের পাড়ায়-মহল্লায় গ্রামে-গঞ্জে প্রতিহত করতে হবে। তারা আমাদের দেশটাকে বিশ্ব বেনিয়াদের হাতে তুলে দিতে চায়। আমাদের দেশের জমি, সাগরের অংশ বেনিয়াদের হাতে তুলে দিতে চায়। তাদের হাত থেকে দেশটাকে রক্ষা করতে হবে।’
‘নির্বাচনের বাকি মাত্র কয়েক মাস। আগামী নির্বাচনে বিজয় ছিনিয়ে না আনা পর্যন্ত রাজপথেই থাকবো। আগুন সন্ত্রাসীদের আমরা এই দেশ থেকে বিতাড়িত করব। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবদের অপরাজনীতি বঙ্গোপসাগরে ফেলে দিতে হবে।’
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালামের সভাপতিত্ব ও যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ পালিতের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, সহ-সভাপতি আবুল কাশেম চিশতি, সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি এস এম রাশেদুল ইসলাম ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম এবং মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাসন্তী প্রভা পালিত।
জ্বালাও-পোড়াওয়ের বিরুদ্ধে কলম ধরার অনুরোধ:
এদিকে রাজনীতির নামে মানুষ ও গাড়ি পোড়ানো এবং ক্ষমতার স্বার্থে বিশ্ববেনিয়াদের হাতে দেশ তুলে দেয়ার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের কলম ধরার অনুরোধ করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
রোববার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সাংবাদিক ইউনিয়ন আয়োজিত ‘বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের’ অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ অনুরোধ করেন।
তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘দেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ও স্থিতি বিনষ্ট করার অপচেষ্টা হচ্ছে। দেশের সম্পদ বিশ্ববেনিয়াদের হাতে তুলে দেয়ার অপচেষ্টা হচ্ছে। সাংবাদিকরা মানুষের তৃতীয় নয়ন খুলে দিতে পারে। সাংবাদিকরা মানুষকে সঠিক নির্দেশনা দিতে পারে। আপনারা কলাম লেখেন, রিপোর্টিং করেন, সর্বোপরি আপনাদের লেখনী অপশক্তির হাত থেকে জনগণকে রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে।’
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি তপন চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি শহীদুল আলম, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য কলিম সরওয়ার, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আলী আব্বাস ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক।
সারাবাংলা/আরডি/এনইউ
চট্টগ্রাম জ্বালাওপোড়াও টপ নিউজ তথ্যমন্ত্রী তারেক রহমান সমাবেশ