হোসনি দালান থেকে তাজিয়া মিছিল শুরু
২৯ জুলাই ২০২৩ ১৩:০৫
ঢাকা: পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে রাজধানীতে তাজিয়া মিছিল শুরু হয়েছে। নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও যুবকসহ হাজার হাজার শিয়া মুসলমান এ মিছিলে অংশ নেন। মিছিলটি বকশীবাজার, নিউ মার্কেট হয়ে ধানমন্ডি লেকের পার্শ্ববর্তী সীমান্ত স্কয়ারের সামনে গিয়ে শেষ হবে।
শনিবার (২৯ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় শিয়া সম্প্রদায়ের উদ্যোগে পুরান ঢাকা লালবাগের হোসেনি দালান ইমামবাড়া থেকে এই মিছিল শুরু হয়।
মিছিলে যাতে কোনো ধরনের অপ্রতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে পুলিশ। মিছিলের আগে পিছনে নিরাপত্তা জোরদারে কাজ করতে সোয়াটসহ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন ইউনিট। মিছিলকে কেন্দ্র করে পুলিশের সোয়াট ইউনিটসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা কয়েক স্থরের নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করেছে।
এছাড়াও আশুরা উপলক্ষে পুরান ঢাকার লালবাগের হোসেনি দালান ইমামবাড়া, বড় কাটারা ইমামবাড়া ও এর আশপাশের শিয়া সম্প্রদায় কেন্দ্রিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও ঐতিহ্যবাহী তাজিয়া (শোক) মিছিল ঘিরে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা। কাউকে ব্যাগ বা অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে ওই এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। দিবসটি নির্বিঘ্নে পালনে ডিএমপির পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আশুরায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পুলিশ ও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।
সুষ্ঠুভাবে তাজিয়া মিছিল সম্পন্ন করতে দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি বহন নিষিদ্ধ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একইসঙ্গে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
জানা গেছে, এই দিনে কারবালা প্রান্তরে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেনের (রা.) শাহাদতের শোককে ধারণ করে শিয়া মুসলমানরা এই তাজিয়া মিছিলের আয়োজন করে থাকে।
মিছিলে অংশ নেওয়া জাফর আহমেদ বলেন, ‘এ মিছিল মূলত শোক মিছিল। প্রতিবছরই মিছিলটিতে অংশগ্রহণ করি। এতে করে নিজের মধ্যে একটা ধর্মীয় চেতনা জাগ্রত হয়। পাশাপাশি ইমাম হোসেনকে (রা.) স্মরণ করা হয়ে থাকে।’
অন্যদিকে মিছিল চলাকালে বিভিন্ন ধর্মের লোকজনও দাঁড়িয়ে থেকে মিছিলটিকে স্বাগত জানান। বেশ কিছু সনাতস ধর্মের নারী মিছিল শুরু হলে সেখানে উৎসবমুখর পরিবেশ দাঁড়িয়ে অংশ নেন। এদের কেউ কেউ আবার দোয়া নিচ্ছিলেন, মানত করছেন বলেও জানান।
এ ব্যাপারে সনাতন ধর্মের অনুসারী পুতুল তার তিন মেয়ে নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিবছর এখানে অংশ নেই। আমি নানা ধরনের মানত করি। আল্লাহ আমার ইচ্ছা পূরণ করে। আমি উপকার পাই।’ তার মেয়ে ইতি সারাবাংলাকে বলেন, ‘তাজিয়া মিছিল সব সময় দেখতে আসি। এটা আমার ভালো লাগে।’
মিছিলে অংশ নেওয়া কামাল মিয়া বলেন, ‘শত শত বছর ধরে ইমাম হোসেন (রা.) শহিদ হওয়ার দিনটিকে ঘিরে তাজিয়া মিছিল বের করা হয়। তাজিয়া তৈরি করা হয় ইমাম হোসেনের (রা.) সমাধির আদলে। তাজিয়া মিছিলে ভক্তরা শোকের গান গাইতে গাইতে বুক চাপড়ে হায় হোসেন, হায় হোসেন বলে বিলাপ করে।’
সারাবাংলা/জিএস/এনএস