মশা নিধনের পাশাপাশি ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন প্রয়োগে জোর ভাইরোলজিস্টসদের
২৬ জুলাই ২০২৩ ১৮:৫৩ | আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৩ ০০:০৫
ঢাকা: দেশে মশক নিধনের পাশাপাশি ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন প্রয়োগের ওপর জোর দিয়েছেন ভাইরোলজিস্টস’রা। বুধবার (২৬ জুলাই) বিকালে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সোসাইটি ফর মেডিকেল ভাইরোলজিস্টস্ বাংলাদেশ আয়োজিত ‘ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ এবং আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সংগঠনের পক্ষে এ তাগিদ দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সোসাইটি ফর মেডিকেল ভাইরোলজিস্টস্, বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. কাজী জুলফিকার মামুন। সংগঠনের সায়েন্টেফিক সেক্রেটারি ডা. রুখসানা রায়হানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বর্তমানে বিশ্বে ডেঙ্গুর দু’টি ভ্যাকসিন রয়েছে। বিশ্বের প্রায় ২০টির মতো দেশে এসব ভ্যাকসিন অনুমোদন পেয়েছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে এই ভ্যাকসিনগুলোর প্রতিরোধ সক্ষমতা ৮০ শতাংশের উপরে। এসব ভ্যাকসিন প্রয়োগে প্রায় ৯০ শতাংশ রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ক্রমাগত রোগটি বাড়তে থাকায় বাংলাদেশেও ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন প্রয়োগের সময় এসেছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএসএমএমইউ’র সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগ থেকে বাঁচার সহজ উপায় হলো মশাগুলো মেরে ফেলতে হবে। আমরা তা পারছি না। আরেকটি সহজ বুদ্ধি হলো সব রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া, আমরা সেটাও পারছি না। চার ধরণের ডেঙ্গুর জন্য প্রযোজ্য ভ্যাকসিন ছাড়া অন্য ভ্যাকসিন নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন নেই বলে আমি মনে করি।’
অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম তার বক্তব্যে সম্প্রতি করোনা অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যতের যেকোনো ভাইরাসঘটিত অতিমারি মোকাবিলা করতে একটি ‘জাতীয় ভাইরোলজি ইন্সটিটিউট’ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সোসাইটি ফর মেডিকেল ভাইরোলজিস্টস্, বাংলাদেশের সহসভাপতি এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, ‘ভ্যাকসিন নিয়ে এখনও আলোচনা হয়নি। ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন নিয়ে এখনও আলোচনা হয়নি। ভবিষ্যতে আলোচনা হলে তা ভাবা যাবে। সুযোগ এলে এটি নিয়ে অবশ্যই আলোচনা করবো। কারণ কয়েক বছর ধরে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলছে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, ‘ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন দেওয়া যেতে পারে। দেশ চাইলে ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন ব্যাবহার করতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনও ভ্যাকসিনের অনুমোদন না দিলেও বিশ্বের ২০টি দেশে ভ্যাকসিনের প্রয়োগ হচ্ছে। মানুষ মারা যাচ্ছে। আমরা কি বসে থাকবো? ভাইরোলজিস্টস্ হিসাবে ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে যে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা যায় সে বিষয়ে সচেতন করতেই আমাদের এই পরামর্শ।’
তিনি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে, জনসচেতনতা ও মশক নিধনের এর পাশাপাশি এই রোগের বিস্তার রোধে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি ডেঙ্গু ভ্যাকসিন ও বিশ্বব্যাপী এর প্রয়োগ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি কর্তৃক প্রস্তাবিত দুইটি ডেঙ্গু ভ্যাকসিন আছে যেগুলো ইতিমধ্যে বিশ্বের প্রায় ২০টির মতো দেশে অনুমোদন পেয়েছে। বাংলাদেশে এই ভ্যাকসিনগুলোর প্রয়োগের বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের এগিয়ে আসতে হবে।
ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, ‘সম্প্রতি ডেঙ্গু রোগীর হার বৃদ্ধি ও রোগীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ার একটি কারণ হতে পারে অতীতের তুলনায় ঘন ঘন নতুন ডেঙ্গু সেরোটাইপের পুনরাবির্ভাব হওয়া। এ কারণে দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং মারাত্মক শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া বর্তমানে সিজোনাল ফ্লু রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। কাজেই জনগণের উদ্দেশ্যে পরামর্শ হচ্ছে যেকোনো ধরনের জ্বর হলে অবহেলা না করা এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।’
এতে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ডা. তারেক মাহমুদ খান।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এমও
টপ নিউজ ডেঙ্গু ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন ভাইরোলজিস্টস ভ্যাকসিন মশা নিধন