মানিকগঞ্জে বান্ধবীর বাসায় যাওয়াই কাল হলো জেপি নেতার
১৯ জুলাই ২০২৩ ১৭:১৬ | আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২৩ ১৭:১৭
ঢাকা: টাকা আদায়ে জাতীয় পার্টির (জেপি) কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম বাহাদুরকে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে গত শনিবার আটকে রেখে দুই দফায় পেটান কথিত বান্ধবী ও তার সহযোগীরা। পরে অবস্থার অবনতি হলে একটি লাল রঙের প্রাইভেট কারে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে অচেতন অবস্থায় তাকে ফেলে রেখে যান। এরপর সালামকে পুলিশ উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিলে তাকে মৃত ঘোষণা করে চিকিৎসকরা।
ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) দিবাগত রাতে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে অভিযান চালিয়ে সালামের কথিত বান্ধবী ও তার মাকে গ্রেফতার করে শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ।
বুধবার (১৯ জুলাই) দুপুরে শেরেবাংলা নগরে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিসি এইচ এম আজিমুল হক এসব তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বলেন, ‘শনিবার (১৫ জুলাই) দিবাগত রাত ১১টার পর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে আবদুস সালাম বাহাদুরের (৬০) লাশ পাওয়া যায়। পরে জানা যায়, তিনি একজন ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার। লাশটি কে বা কারা ফেলে রেখে গেছে, এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও সংলগ্ন এলাকার সিসিটিভি অকার্যকর থাকায় প্রাপ্ত তথ্যগুলো পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরাও হত্যাকাণ্ডের সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে তেমন কিছু জানাতে পারেননি। নিহতের ভাই আবদুল করিম খলিফা শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। বিভিন্ন মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় মানিকগঞ্জে অভিযান চালিয়ে সালাম বাহাদুরের কথিত বান্ধবী ও তার মাকে গ্রেফতার করা হয়।’
উপকমিশনার আজিমুল হক বলেন, ‘পাঁচ-ছয় বছর আগে অভিযুক্ত মেয়েটির সঙ্গে সালামের পরিচয় হয়। মেয়েটি তখন ধানমন্ডির একটি সুপার শপে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। সালাম মেয়েটিকে (২৩) সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখান। এতে তাঁদের দুজনের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিছুদিন পর মেয়েটি বুঝতে পারেন, সালাম তাঁকে চাকরি দেবেন না। পারিবারিকভাবে জানাজানি হলে মেয়েটি সালামের সঙ্গে সম্পর্কের ছেদ টানেন। মেয়েটি ঢাকা ছেড়ে মানিকগঞ্জে তার বাড়িতে চলে যান। কিন্তু সালাম তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের করা ভিডিও মেয়েটির পরিচিতজনদের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে সম্পর্ক রাখতে মেয়েটিকে চাপ দেন। মেয়েটির সঙ্গে কথোপকথনের সূত্র ধরে সালাম ১৫ জুলাই বেলা তিনটার দিকে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে মেয়েটির বাসায় পৌঁছান। এ সময় মেয়ের মায়ের সঙ্গে সালামের কথা–কাটাকাটি হয়। টের পেয়ে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। তারা একসঙ্গে সালামকে মারধর করেন।’
অন্যদিকে, সালাম আসবেন, এই কথা মেয়ে ও তার মায়ের মাধ্যমে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আগে থেকেই জানতেন। তারাও সালামকে আবার মারপিট করেন। তারা সালামের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে গুরতর অবস্থায় তাকে আটকে রাখেন। দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখার পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। এ সময় মেয়েটির মা কয়েকজনকে নিয়ে সালামকে চিকিৎসার জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিতে লাল রঙের একটি প্রাইভেট কারে রওনা দেন।
মেয়েটির মায়ের সঙ্গে আসা ব্যক্তিরা পথে নেমে যান। একপর্যায়ে মেয়েটির মা সালামকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ফেলে যান বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। প্রাইভেট কারটি জব্দ করা হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা আজিমুল হক বলেন, ‘মা-মেয়ের সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে। ওই ঘটনায় জড়িত অন্যদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার রুবাইয়াত জামান বলেন, ‘টাকা আদায় করতে সালামকে আটকে রাখা হয়েছিল বলে শুনেছি।’
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই মেয়েকে সম্পর্কের একটা পর্যায়ে পাঁচ লাখ টাকার ব্যাংক চেক দিয়েছিলেন। সেই চেকের অর্থও পরিশোধ করেননি। এরপরও তিনি সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। পরে মিউচুয়ালি কথা বলে মানিকগঞ্জে যান ব্যবসায়ী ও জেপি নেতা আব্দুস সালাম। কিন্তু সেখানে টাকা না দিয়েও ঝগড়াঝাঁটিতে লিপ্ত হন। এছাড়া সালাম ওই সময় নেশাগ্রস্ত অবস্থায়ও ছিলেন বলে জানা গেছে।
আবদুস সালাম বাহাদুর (৫৮) জেপির কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ সম্পাদক ছিলেন। তার বাড়ি পিরোজপুরের ইন্দুরকানিতে। ঢাকার ধানমন্ডির ২৭ নম্বর রোডের ৩৫/এ বাড়িতে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি সড়ক ও জনপথ বিভাগে ঠিকাদারি করতেন।
আরও পড়ুন:
জেপি নেতা সালাম হত্যা মামলায় মা-মেয়ে ৫ দিনের রিমান্ডে
সারাবাংলা/ইউজে/এমও
জেপি নেতা সালাম জেপি নেতা সালাম হত্যা টপ নিউজ বান্ধবীর বাসা মানিকগঞ্জ হত্যা