Saturday 11 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডেঙ্গুকে জনস্বাস্থ্য জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা নিয়ে মতভিন্নতা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৭ জুলাই ২০২৩ ১৮:৫০ | আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৩ ২০:২৪

ঢাকা: চুয়াডাঙ্গা বাদে দেশের ৬৩ জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। এতে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুই–ই বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীর মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) আয়োজিত এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে আলোচকরা বলেছেন, দেশে এখন জনস্বাস্থ্য জরুরি পরিস্থিতি চলছে। এটি জাতীয় উদ্বেগের বিষয়।

তবে এই উদ্বেগকে এখনই খুব একটা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে না স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেছেন, ‘বিএমএ’র কর্মকর্তারা মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একটা অনুষ্ঠান করেছেন। দেশের সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বর্তমানে সেখানেই। সেই হাসপাতালে অনুষ্ঠান করার মতো অবস্থা আছে। পরিস্থিতি যদি এতটা খারাপ হতো তবে উনারা কি যেতেন সেখানে? খারাপ হলে তো নিশ্চয়ই তারা সেখানে যেতেন না। এতে কী বোঝা যায়?

বিজ্ঞাপন

রোববার (১৬ জুলাই) মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণবিষয়ক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে বিশেষজ্ঞ ও বিএমএ নেতার পাশাপাশি মুগদা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক, চিকিৎসক ও শিক্ষার্থী ছাড়াও বিএমএর বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন।

সেমিনারে দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। প্রথম প্রবন্ধে বিএমএর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক হোসেন বলেন, ‘২০২২ ও ২০২৩ সালের মধ্যে ডেঙ্গু সংক্রমণের মধ্যে কোনো বিরতি ছিল না। তার মতে, অপরিকল্পিত তড়িৎ নগরায়ণ, জনঘনত্ব, গ্রাম ও শহরে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে খারাপ করেছে।’

বিজ্ঞাপন

ডেঙ্গুর চারটি ধরনেই মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে জানিয়ে মুশতাক হোসেন বলেন, ‘এখন জনস্বাস্থ্য জরুরি পরিস্থিতি চলছে, যা জাতীয় উদ্বেগের কারণ।’

সেমিনারে দ্বিতীয় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খ্যাতিমান রিউমাটোলজিস্ট ও বিএমএর মেডিকেল জার্নালের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক। ডেঙ্গুর বিভিন্ন উপসর্গ বর্ণনা করার পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকদের উচিত ডেঙ্গুর চিকিৎসাবিধি বা প্রটোকল অনুসরণ করে চিকিৎসা দেওয়া।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএমএর সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, ‘জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদের ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আরও সময় দিতে হবে। পাশাপাশি সরকার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরকে ডেঙ্গুর ব্যাপারে আরও সক্রিয় ও সোচ্চার হতে হবে।’

এ দিন স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডেঙ্গু বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এ সময় বিএমএ’র বৈজ্ঞানিক সেমিনার থেকে প্রস্তাবিত ‘জনস্বাস্থ্য জরুরি পরিস্থিতি জারি করা হবে কি না?’ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলমের কাছে। তিনি জানান, বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি ঘোষণা করার মতো অবস্থায় এখনও যায়নি।

অধ্যাপক ডা. খুরশিদ আলম বলেন, ‘যখন করোনা ছিল, তখন পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু এখন এটি ঘোষণা করার মতো পরিস্থিতি আমরা দেখছি না।

তিনি বলেন, ‘পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সির যদি প্রয়োজন হয় তাহলে সেটা পলিসি লেভেলে আলোচনা করতে হবে। আমরা আমাদের কনসার্ন পলিসি লেভেলে জানিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এবার বর্ষা দেরিতে শুরু হয়েছে তাই ডেঙ্গু মৌসুম লম্বা হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ডেঙ্গু চিকিৎসায় হাসপাতালগুলোয় জনবল সংকট নিরসনে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। রাজধানীর সব সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। নির্দিষ্ট একটি হাসপাতালে না গিয়ে ডেঙ্গু চিকিৎসায় অন্যান্য সেসব হাসপাতালে আছে, সেখানে যাওয়ার অনুরোধ করছি।’

স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি ঘোষণা করার মতো পরিস্থিতি এখনো হয়েছে বলে আমি মনে করি না। কারণ যখন কিছু করার থাকে না তখন হয়তো অনেকে সাহায্য চায়। কিন্তু ডেঙ্গু ২০০০ সাল থেকেই আমাদের দেশে আছে। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য আমাদের একটা স্টান্ডার্ড প্রটোকলও আছে। সেটা মানলে ক্যাজুয়ালিটি কমানো খুবই সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুতে মূল সমস্যা হচ্ছে, হাসপাতালে রোগীরা আসছে শকড হয়ে। তাদের ম্যানেজ করাটা কষ্ট হয়ে যায়। তাই দরকার সচেতনতা বাড়ানোর জন্য কাজ করে যাওয়া। জ্বর হলেই যেন দ্রুত নমুনা পরীক্ষা করে ডেঙ্গুর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়, সেটা লক্ষ্য রাখতে হবে। যদি ডেঙ্গু না থাকে তবে ভয় পাওয়ার কিছু নাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর জ্বর কমে গেলেও একটা ভালো ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট দরকার। সেটা বাসায় ও হাসপাতালে দুই জায়গাতেই করা যায়। আমরা সেটার উপরে গুরুত্ব দিচ্ছি। এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বলে আমি মনে করি না।’

তারপরেও সবার পরামর্শ লিপিবদ্ধ করে রাখা হবে বলেও মন্তব্য করেন ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

টপ নিউজ ডেঙ্গু মতভিন্নতা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর