Thursday 09 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রোগীর চাপে হিমশিম খাচ্ছে মুগদা হাসপাতাল

রাজনীন ফারজান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৯ জুলাই ২০২৩ ২২:০০

ঢাকা: পাঁচশ শয্যার হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছে ১০৬৩ জন। এর মধ্যে ডেঙ্গু রোগী ৪১৪ জন। তিনটি আলাদা ফ্লোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন পূর্ণবয়স্ক নারী, পুরুষ ও শিশুরা। হাসপাতালের সক্ষমতার তুলনায় অতিরিক্ত রোগী ভর্তি থাকায় দেখা দিয়েছে নানা অব্যবস্থাপনা। লিফটের সামনে দীর্ঘ লাইন, নার্সদের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ, স্যালাইন পেতে বিড়ম্বনা ও রক্ত পরীক্ষার জন্য দীর্ঘসময় অপেক্ষায়, বেডশিট ও অন্যান্য সেবা সামগ্রী পেতে ঘুষ দেওয়াসহ নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন হাসপাতালে থাকা রোগীরা।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৯ জুলাই) সরেজমিন পরিদর্শনে এ চিত্র দেখা গেল রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে।

সাত বছরের মাদারটেকের প্রকৃতি হালদার পাঁচদিন ধরে মুগদা হাসপাতালে ভর্তি। সঙ্গে মা, পিসি ও আরেক আত্মীয়া। মায়ের হাতে আমড়া কিন্তু সেদিকে মন নেই তার। চেটে চেটে লবণ খাচ্ছে সে। মা জানালো মেয়ের মুখে রুচি নেই একদমই। কিছুই খাওয়ানো যাচ্ছে না।

সঙ্গে থাকা পিসি জানান, মেয়েকে বাইরে থেকে কোন খাবার এনে খাওয়ানোও মুশকিল। কারণ লিফটে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয়। মেয়ে হাসপাতালের খাবারও খেতে পারে না। রক্ত পরীক্ষার জন্যও এই অসুস্থ মেয়েকে আটতলা থেকে সেই দোতলা নিয়ে যেতে হয়। আমরা তিনজন মানুষ সঙ্গে তারপরও লিফটে আনা-নেওয়া করতে হিমশিম খাচ্ছি। এর মধ্যে শুক্র-শনিবার টেস্ট হয় না। বাকি পাঁচদিন প্রচুর ভিড় থাকে। আবার অসুস্থ মেয়েকে স্যালাইন দেওয়ার জন্য ডেকেও নার্সকে পাওয়া যায় না। ডাকলে নার্সরা দুর্ব্যবহার করেন। আজ আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর স্যালাইন দিয়েছে।

একই অভিযোগ করেন আশপাশের কয়েক বেডের শিশু রোগীর অভিভাবক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক অভিভাবক জানান, তার পাঁচ বছরের ছেলের স্যালাইন ফুরিয়ে গেছে অনেক আগে। নার্সদের বললেও তারা ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে নিজেরা এনে দিয়েছেন।

হাসপাতাল পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, ‘সক্ষমতার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করছেন তারা। আগামীকাল সোমবার থেকে শুধু মেডিসিন নয়, অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসকদেরকেও ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় যুক্ত করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘মেডিকেল কলেজের হোস্টেল থাকার কারণে পাঁচশ সজ্জার হাসপাতালে এভেইলেবল বেড ৪২০টি। বর্তমান চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাধারণ ও ডেঙ্গু ওয়ার্ড মিলিয়ে দ্বিগুণেরও বেশি রোগী। এখন আপৎকালীন ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা করে বিশেষায়িত এই ওয়ার্ড তৈরি করা হয়েছে। তিনটি ফ্লোরের ওপেন স্পেসে ১৪০ টি করে বেড তৈরি করা হলেও বর্তমানে ভর্তি আছেন ৪১৪ জন। এদের মধ্যে ৩২৯ জন প্রাপ্তবয়স্ক রোগী আর শিশু ৮৫ জন। এ ছাড়াও তৈরি আছে আরও দুটি ফ্লোর। এখানে আরও তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া যাবে।’

বিজ্ঞাপন

মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটির তৃতীয় তলায় নারী, অষ্টম তলায় শিশু ও এগারতম তলায় পুরুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। শিশু হাসপাতালে অভিভাবকদের অভিযোগ কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করা লাগছে সাধারণ সেবা পেতে। একাধিক অভিভাবক এ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘রক্ত পরীক্ষার জন্য দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা তো অপেক্ষা করা লাগছেই স্যালাইন দিতেও অপেক্ষা করা লাগছে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা।’

লিফট নিয়েও রোগী ও স্বজনদের রয়েছে অভিযোগ। লিফটের সামনে দীর্ঘ লাইন। কয়েকটি লিফট আবার বন্ধ থাকে। ফলে রোগীদের স্যালাইনসহ সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে ওঠা-নামা করা লাগছে। নয় বছরের ডেঙ্গু আক্রান্ত মেয়েকে নিয়ে লিফটে করে রক্ত পরীক্ষার জন্য আট তলা থেকে দোতলায় আসছিলেন এক অভিভাবক। হাতে স্যালাইন। যে লিফটে উঠেছেন সেটি নিচতলায় আসায় মেয়েকে নিয়ে দোতলায় সিঁড়ি বেয়েই উঠছেন। দুর্বল শিশুটিকে কোনোরকমে পা টেনে টেনে উঠছে। প্রাপ্ত বয়স্ক রোগীদেরও দেখা গেল হেঁটে উঠছেন সিঁড়ি দিয়ে। নিচ থেকে খাবার বা অন্যান্য জরুরি কাজে ওঠানামা করতে হিমশিম খাচ্ছেন রোগীর স্বজনরাও। বিশেষ করে যেসব রোগীর সঙ্গে একজন করে মানুষ, তারা রোগী রেখে যেতেও পারছেন না, কারণ প্রতিবার লিফটের জন্য কমপক্ষে আধাঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা লাগছে।

কয়েকজন আবার অভিযোগ করলেন হাসপাতালের কর্মচারীরা দুর্ব্যবহার করেন। বেডশিট বা স্যালাইন চাইতে গেলে দেয় না, তাড়িয়ে দেয়। তবে হাতে টাকা গুঁজে দিলে দ্রুত সব কাজ করে দেয়। কত টাকা নিচ্ছে জানতে চাইলে কয়েকজন বললেন, ‘এক দেড়শ টাকার বিনিময়েই তারা কাজ করছেন।’

ডা. নিয়ামুজ্জামান বলেন, ‘শুধু রোগী ভর্তিই না টেস্টেরও চাপ বেড়েছে। সাধারণ সময়ের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি টেস্ট করতে হচ্ছে এখন। জুনের মাঝামাঝি সময়ে যখন চাপ বাড়ছিল তখন মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরে অবগত করায় তাতক্ষণিকভাবে রি-এজেন্ট কেনার জন্য টাকা দেওয়া হয়। হাতে যা ছিল তাতে আরও তিনমাস যাওয়ার কথা ছিল। বর্তমানে দুই সেট মেশিন রেডি হয়ে আছে। এ ছাড়াও ননস্টপ ইমার্জেন্সি সার্ভিস ওসেক রেডি। সিমাটোলজি এনালাইজার, বায়ো কেমিস্ট্রি এনালাইজার যেখানে একসঙ্গে পাঁচশ টেস্ট করা যায় ও ইমিউন এনালাইজার। এই মেশিন তিনটি গ্রাউন্ড ফ্লোরে রেডি হয়ে আছে। প্যাথলজিতে ট্রাবলশুট করলে এগুলোর মাধ্যমে দ্রুত আবারও টেস্ট করা যাবে।’

পাঁচগুণ বেশি পরীক্ষা বাড়া প্রসঙ্গে পরিচালক বলেন, ‘আগে দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ পরীক্ষা হলেও বর্তমানে ৮০০ থেকে ৮৫০ পরীক্ষা হচ্ছে। কিন্তু একজন ডেঙ্গু রোগীর দিনে গড়ে ৫ থেকে ৭ টি বিভিন্ন ধরনের টেস্ট করতে হয়। ফলে পরীক্ষার সংখ্যা বেড়ে গেছে।’

রোগীর সিরিয়াল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রোগীর চাপ বেশি থাকায় আমাদের পক্ষে প্যাথলজি সেকশন মেইনটেন করা সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে আমি অসহায়। সকালের শিফটে আমার সক্ষমতা পাঁচশ রোগীর পরীক্ষা করা। শুধু তো ব্লাড নেওয়াই না, সেটি প্রসেসও করতে হয়। এতে অন্তত দুই ঘণ্টা লাগে। এতগুলো রোগীর পরীক্ষা একসঙ্গে করা যথেষ্ট চাপের। এতে রোগীদের একটু লাইনে দাঁড়াতে হয়। তারপরও চাপ সামলাতে আমি নিয়ম করেছি সন্ধ্যায় শুধুমাত্র হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের আল্ট্রাসনোগ্রাম, এক্স-রে, প্যাথলজিসহ সব পরীক্ষা হবে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আমি জরুরি বিভাগকেও রেস্ট্রিকটেড করে দিয়েছি। ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীরা রাত আটটা পর্যন্ত স্যাম্পল দিতে পারবে। দশটা পর্যন্ত প্যাথলজিতে রিপোর্ট দেওয়া হবে।’

সারাবাংলা/আরএফ/একে

টপ নিউজ ডেঙ্গু রোগী মুগদা হাসপাতাল

বিজ্ঞাপন

লস অ্যাঞ্জেলসে দাবানল, নিহত ৫
৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:৪৩

আরো

সম্পর্কিত খবর