‘মিলেমিশে’ পাহাড় কাটায় আ.লীগ-বিএনপি নেতা, ৫৫০ স্থাপনা উচ্ছেদ
৬ জুলাই ২০২৩ ২১:২১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: উচ্চ আদালতের নির্দেশে চট্টগ্রামে পাহাড়কাটা বন্ধের পাশাপাশি পাহাড় থেকে সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে নেমেছে জেলা প্রশাসন। প্রথমদফায় পাহাড় কাটার জন্য আলোচিত নগরীর আকবর শাহ এলাকায় অভিযান শুরু করে ৫৫০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। ধারাবাহিক অভিযান আকবর শাহ, বায়েজিদ বোস্তামি, খুলশী হয়ে সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর ও আলীনগরেও পরিচালনা করা হবে বলে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আকবর শাহ থানার বেলতলীঘোনাসহ আশপাশের এলাকায় পাহাড় কেটে অবৈধ স্থাপনা তৈরির সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের পাশাপাশি চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তিও জড়িত আছেন। বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) দুপুরে অভিযানের সময় ঘটনাস্থলে গিয়ে দীপ্তি সেখানকার বাসিন্দাদের উসকানি দিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করেন। তবে অভিযান পরিচালনাকারী ম্যাজিস্ট্রেটরা তাকে ঘটনাস্থল ছাড়তে বাধ্য করেন।
জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মো. তৌহিদুল ইসলাম ও কাট্টলী সার্কেলের সহকারী ভূমি কমিশনার মো. উমর ফারুক অভিযান পরিচালনা করেন। সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত অভিযানে পরিবেশ অধিদফতর, পিডিবিসহ বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি পুলিশ ও আনসার সদস্যরা ছিলেন।
জেলা প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নগরীর ফয়’সলেক সংলগ্ন আকবর শাহ থানার বেলতলীঘোনা এলাকায় ৮ একর পাহাড় থেকে ৫০০টি এবং একইসঙ্গে উত্তর পাহাড়তলীর ৩ একর পাহাড় থেকে আরও ৫০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। রোববার (৯ জুলাই) একই এলাকায় আবারও অভিযানে নামবে জেলা প্রশাসন।
জানা গেছে, বেলতলীঘোনার কয়েক কিলোমিটার পাহাড়ি এলাকায় কয়েজ হাজার ছোট ছোট প্লট বানিয়ে দরিদ্র লোকজনের মাঝে বিক্রি করে বসবাসের ব্যবস্থা করেছিল স্থানীয় রাজনীতিক, জনপ্রতিনিধিসহ প্রভাবশালী একাধিক চক্র। এরসঙ্গে আওয়ামী লীগ-বিএনপি নেতাদের অনেকে জড়িত, যারা প্লট বিক্রির পাশাপাশি ঘর ভাড়া দিয়ে নিয়মিত টাকাপয়সা তোলেন।
জানতে চাইলে এনডিসি তৌহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘একটি রিট পিটিশন ও লিভ টু আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, সমগ্র চট্টগ্রামে আইন ভঙ্গ করে, স্বত্ত্ব ব্যতিরেকে কিংবা অযৌক্তিকভাবে পাহাড় কেটে যেসব স্থাপনা গড়ে উঠেছে, সেগুলো অবিলম্বে উচ্ছেদ করতে হবে। এক্ষেত্রে বায়েজিদ বোস্তামি, আকবর শাহ, খুলশী থানা এবং সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুর ও আলীনগর এলাকা সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। আমরা উচ্চ আদালতের নির্দেশে অভিযানে নেমেছি। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
এদিকে, অভিযানের সময় ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বেলতলীঘোনায় অভিযান চলাকালে সেখানে যান নগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি। তখন তাকে ঘিরে শ’খানেক নারীপুরুষ জড়ো হতে থাকেন। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকলে এনডিসি তৌহিদুল তার কাছে গিয়ে পরিচয় জানতে চান। দীপ্তি জানান, বেলতলীঘোনায় তার ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পদ আছে, তিনি সেখানে কোনো উচ্ছেদ হচ্ছে কি না সেটা দেখতে এসেছেন। এনডিসি তাকে ঘটনাস্থল ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। পরে দীপ্তি স্থানীয় একটি মসজিদে ঢুকে পড়েন।
এনডিসি তৌহিদুল ইসলাম জানান, দীপ্তি’র মালিকানা দাবি করা পাহাড়েও বেশকিছু অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। সকল অবৈধ স্থাপনাই উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে কয়েকবার চেষ্টা করেও মোশাররফ হোসেন দীপ্তি’র বক্তব্য জানতে পারেনি সারাবাংলা।
বেলতলীঘোনার যে এলাকায় জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান করেছে, সেই এলাকায় গত ৭ এপ্রিল পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছিল। এতে মুজিবুল হক খোকা (৪৫) নামে একজন নিহত ও চারজন আহত হন। এ ঘটনায় পরিবেশ অধিদফতর চসিকের উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা জহুরুল আলম জসিম এবং তিন প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল।
গত বছরের ১০ অক্টোবর ফয়’সলেক সংলগ্ন লেকসিটি আবাসিক এলাকায় পাহাড় কাটার অভিযোগে কাউন্সিলর জসিম ও তার স্ত্রীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল পরিবেশ অধিদফতর।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম