দখলের মুখে রাজধানীর ২৬ শতাংশ জলাশয়
২২ জুন ২০২৩ ১৮:৪২
ঢাকা: ঢাকা মহানগরীর অবশিষ্ট ৩২৭ পুকুর ও জলাশয়ের মধ্যে ৮৬টি (যা প্রায় ২৬%) এখন সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও প্রভাবশালী ব্যক্তি কর্তৃক দখলের পথে। জলাধারগুলোর মধ্যে ছয়টি দখল হচ্ছে সরকারি উদ্যোগে, ৭৯টি দখল হচ্ছে বেসরকারি উদ্যোগে এবং বাকি একটি দখল হচ্ছে সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে।
ঢাকায় পুকুর ও জলাধারের প্রয়োজনীয়তা শীর্ষক এক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব তথ্য তুলে ধরেন রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার-আরডিআরসি এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ।
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট (বাংলাদেশ ন্যাচার কনজারভেশন অ্যালায়েন্স-বিএনসিএ) ও গেণ্ডারিয়ায় ডিআইটি পুকুর রক্ষা আন্দোলনের যৌথ উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘ঢাকায় পুকুর ও জলাধারের প্রয়োজনীয়তা এবং সংরক্ষণে করণীয়’ শীর্ষক এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
মোহাম্মদ এজাজ আরও বলেন, ‘আমরা গবেষণা করে দেখেছি, ঢাকায় বর্তমানে মোট ৬৩টি খাল, ১৩টি লেক ও একটি আদি চ্যানেলের অস্তিত্ব রয়েছে। সরকারিভাবে জলাধারের এখনও কোনো তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। নিজেদের প্রয়োজনে এসব পুকুর ও জলাধার রক্ষা করতে হবে। আইন অনুযায়ী যে কোনো ধরনের জলাধার ভরাট নিষিদ্ধ। ব্যক্তি মালিকালাধীন হলেও জলাধার ভরাট করা যে যাবে না, এ ব্যাপারে রাজউকে সার্কুলার ইস্যু করতে পারে। রাজউক আরও সক্ষম ও সক্রিয় হলে ঢাকার জলাধার রক্ষা পাবে। প্রতিটি পুকুরের সামনে এখনই সাইনবোর্ড টানিয়ে দিতে হবে।’
ঢাকা-৪ আসনের সাংসদ সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা জানান, পুরান ঢাকার ডিআইটি পুকুর দখলমুক্ত রাখার ব্যাপারে তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। যারা এই পুকুর দখল করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। রাজউক কর্তৃক উচ্ছেদ হওয়ার পরও ডিআইটি পুকুরে যে অবশিষ্ট স্থাপনা রয়েছে, তা সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে তিনি কাজ অব্যাহত রাখবেন বলে ঘোষণা দেন।
ঢাকা-সহ সারাদেশের কোথাও পুকুর ও জলাশয় ভরাট করার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি জানান, আগামী সংসদ অধিবেশনে পরিবেশ ও জলাশয় ইস্যুতে তিনি কথা বলবেন।
জলাশয় দখল ও কমে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি- বেলা এর প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘পানির শহর ঢাকাকে আমরা কারবালায় পরিণত করেছি। এই নগরী সবচেয়ে অবসবাসযোগ্য নগরীতে পরিণত হয়েছে।’
এ জন্য অন্য অনেকের সঙ্গে রাজউককে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘রাজউক একটি সাংঘাতিক অস্বচ্ছ প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান নিজেই জলাশয় ভরাট করে হাউজিং করছে।’
ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক বজলুর রশীদ ঢাকা মহানগরীতে অগ্নি নির্বাপণে পুকুরের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘পুরান ঢাকার মতো ঘনজনবসতিপূর্ণ ও সংকীর্ণ রাস্তা সংবলতি এলাকায় অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধে ডিআইটি পুকুর-সহ বিভিন্ন পুকুরের গুরুত্ব অপরিসীম। পুরান ঢাকায় নতুন করে আরও কিছু পুকুর খনন করা একান্ত প্রয়োজন।’
বিএনসিএ এর আহ্বায়ক ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদারের সভাপতিত্বে এতে অংশ নেন পরিবেশবিদ, পরিবেশকর্মী, গবেষক, বিশেষজ্ঞ, সংসদ সদস্য এবং সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা।
সেমিনারে বলা হয়, একটি বাসযোগ্য শহরে কমপক্ষে ১০-১৫ শতাংশ জলাশয় থাকা দরকার হলেও ঢাকার জলাশয়-জলাধার আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। ঢাকার জলাধারগুলো নির্বিচার দখলের শিকার। ড্যাপ (ঢাকা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা), নগর উন্নয়ন আইন, জলাধার সংরক্ষণ আইন ও পরিবেশ সংক্রান্ত আইনকে অমান্য করে পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়ার ডিআইটি পুকুর দখল-সহ এই নগরীর আরও বিভিন্ন পুকুর ও অন্যান্য জলাধার দখল ও ভরাট হচ্ছে, যা খুবই উদ্বেগের।
সেমিনারে আরও আলোচনায় অংশ নেন বিএনসিএ এর যুগ্ম আহ্ববায়ক ও নোঙর ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী সুমন শামস, বিএনসিএ-র সদস্য সচিব ও সেভ আওয়ার সি’র সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক ও নিরাপদ ডেভেলাপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা।
আরও বক্তব্য রাখেন পরিবেশ সংক্রান্ত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ইনিশিয়েটি ফর পিস (আইএফপি)’ এর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শফিকুর রহমান, যাত্রী অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক কেফায়েত উল্লাহ চৌধুরী শাকিল, গেণ্ডারিয়া ডিআইটি প্লট পুকুর রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক ইব্রাহীম আহমদ রিপন।
সারাবাংলা/আরএফ/একে