ব্যাংকঋণের সুদহারের সীমা তুলে দিয়ে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা
১৮ জুন ২০২৩ ২০:০৬ | আপডেট: ১৮ জুন ২০২৩ ২০:৫৫
ঢাকা: ব্যাংকঋণের সুদহারের সীমা তুলে দিয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর-২০২৩) জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন মুদ্রানীতিতে প্রত্যাশিতভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে অর্থ সরবরাহ কমানোর পাশাপাশি টাকার মান বাড়াতে নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে। এছাড়াও বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ১১ দশমিক ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে নতুন মুদ্রানীতিতে। এর আগের মুদ্রানীতিতে প্রাক্কলন করা হয়েছিল ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ।
রোববার (১৮ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে এই নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. হাবিবুর রহমান নতুন মুদ্রানীতি তুলে ধরেন। পরে বিস্তারিত তুলে ধরেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। অনুষ্ঠানে ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, কাজী ছাইদুর রহমান, আবু ফরাহ মো. নাছের ও এ কে এম সাজেদুর রহমান খান উপস্থিত ছিলেন।
আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী বর্তমানে চার ধরনের লক্ষ্যমাত্রাভিত্তিক মুদ্রানীতি প্রচলিত আছে। সুদহার, মূল্যস্ফীতি, মুদ্রা সরবরাহ এবং বিনিময় হার টার্গেটিং। বাংলাদেশ ব্যাংক এতদিন ‘মূল্যস্ফীতি টার্গেটিং’ মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে আসছিল। এবার ‘সুদহার টার্গেটিং’ মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে। মুদ্রানীতিতে এটা কাঠামোগত পরিবর্তন বলা যায়। নতুন মুদ্রানীতিতে টাকার চাহিদা কমাতে নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে। ঋণের সুদহারের যে ৯ শতাংশ ক্যাপ ছিল তাও তুলে দেওয়া হয়েছে।’
মুদ্রানীতি ঘোষণায় ড. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘নতুন সুদহার ব্যবস্থাটিই শর্ট টার্ম মুভিং এভারেজ রেট বা স্মার্ট। ১৮২ দিন মেয়াদি সরকারি ট্রেজারি বিলের ৬ মাসের গড় সুদহারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ করিডোর বা সীমা দেওয়া থাকবে। বর্তমানে ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার ৭ দশমিক এক শতাংশ। অর্থাৎ গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের সুদহার হবে ১০ দশমিক ১ শতাংশ।’
নতুন মুদ্রানীতিতে নীতি হার হিসাবে বিবেচিত রেপো সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো জরুরি প্রয়োজনে অর্থ নিলে গুণতে হবে অতিরিক্ত সুদ। পাশাপাশি রিভার্স রেপো ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৪ শতাংশ ২৫ শতাংশ থেকে ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা রাখলে ব্যাংকগুলোকে আগের চেয়ে বেশি সুদ পাবে।
নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ দশমিক ১০ শতাংশ। এর আগের মুদ্রানীতিতে প্রাক্কলন করেছিল ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। যদিও প্রাক্কলিত হারের চেয়ে লক্ষ্যমাত্রার অর্জন ছিল অনেক কম। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষে তথ্যানুযায়ী, গত এপ্রিলে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশে নেমেছে। অন্যদিকে সরকারি ঋণের ৪৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। আগের মুদ্রানীতিতে প্রাক্কলন ছিল ৩৭ দশমিক ৭০ শতাংশ।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ এবং সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবার প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনের চেয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে জোর দিয়েছে।
সারাবাংলা/জিএস/এনএস