Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘১টা ইট মারলে ১০টা পাটকেল মারার ক্ষমতা রাখি’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৭ জুন ২০২৩ ২২:১০ | আপডেট: ১৭ জুন ২০২৩ ২৩:৩৭

হিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাংচুরের প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, একটা ইট মারলে ১০টা পাটকেল মারার ক্ষমতা আমরা রাখি। এটা কোনো হুমকি নয়। আমাদের শক্তি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তাদের মোকাবেলা করার ক্ষমতা রাখি।

শনিবার (১৭ জুন) সকালে নগরীর হোটেল সৈকতে আলকরণ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে উপমন্ত্রী নওফেল এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

গত ১৪ জুন নগরীর কাজীর দেউড়ির মোড়ে বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠনের ডাকা ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ যাবার পথে জামালখানে ছাত্রদল-যুবদলের মিছিল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালসহ অন্তত ৫০টি চিত্রকর্ম ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।

সেই প্রসঙ্গ টেনে উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে বাঁশ দিয়ে আঘাত করে মনের ঝাল মেটানো, জিঘাংসা, প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার একটি চিত্র আমরা দেখলাম। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়ত ক্ষমতায় এসে এভাবেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর প্রতিশোধ নিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তারা আওয়ামী লীগকে শেষ করে দিতে চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি।’

‘আমাদের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলতেন, আওয়ামী লীগ একটি আবেগের নাম। আওয়ামী লীগের প্রত্যেক কর্মীর কোনো না কোনো স্বজন এই দলের জন্য রক্ত দিয়েছে। শহীদ কর্মীদের রক্তের ওপর ভিত্তি করে আওয়ামী লীগ দাঁড়িয়ে আছে। এই দলকে শেষ করে দেওয়া অত সোজা নয়। বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকবে। বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরীরা আওয়ামী লীগকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

বিজ্ঞাপন

নেতাকর্মীদের আত্মসমালোচনার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে তুলনা করলে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে অনেক শক্তিশালী। কিন্তু একটা জায়গায় পিছিয়ে আছি, আমরা শেখ হাসিনার কাজ মানুষের কাছে প্রচার করতে পারছি না। এক্ষেত্রে আমাদের আত্মসমালোচনার দরকার আছে। তবে আত্মসমালোচনা করতে গিয়ে এমন করি যে, নিজেরা আলোচনায় বসে নিজেরাই বলি- এই নেতা হাজার হাজার কোটি টাকা কামাই করেছে, অমুক মন্ত্রী-তমুক মন্ত্রী এই করেছে, সেই করেছে। শুধু নিজেরা বলি তা-ই নয়, আমাদের দলের আদর্শে বিশ্বাস করে না, দলের আদর্শকে সমর্থন করে না, এমন লোকদের সঙ্গেও বলি এবং তাদের উদ্ভট সব গুজবকে বৈধতা দেই।’

‘অথচ এসব আত্মসমালোচনা সাংগঠনিকভাবে করতে পারি। কিন্তু আমরা সেটা না করে অন্যদের সামনে নিজেদের চৌদ্দগুষ্ঠী উদ্ধার করি, আর বিএনপির একজন নেতা পেলে তাকে ভাই বলে সম্মানের সঙ্গে সম্বোধন করি। নিজেদের সম্পর্কে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা বন্ধ করা উচিৎ। মার্জিতভাবে কথা বলা উচিৎ।’

নওফেল বলেস, ‘বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াতের আমলে যে পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে, আমাদের আমলে সেটা বাড়েনি, বরং কমেছে। কিন্তু কথাবার্তা শুনলে আর পত্রিকা পড়লে মনে হয়, দেশ বোধহয় দুর্নীতির কারণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। মানুষকে এটা কেন বলি না যে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতির দায় আমরা রাজনীতিবিদরা নিতে পারি না। মানুষকে বোঝাতে হবে— সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। কোনো অফিসার সাধারণ মানুষকে হয়রানি করলে রাজনীতিবিদ হিসেবে আমাকে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে।’

ঈদুল আজহার আগেই কাউন্সিলর এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে প্রতিরোধ কমিটি গঠনের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, জিসাসসহ তাদের যেসব সংগঠন আছে, সেই সংগঠনগুলো দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের তালিকা সংগ্রহ করতে হবে। তাদের বাড়িঘরগুলো যেন আমরা চিহ্নিত করে রাখি। বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে একটা আঘাত করেছে, আমরা যদি আঘাতকারীর বাড়ি চিহ্নিত করে লাল মার্ক দিয়ে রাখি, তাহলে ভবিষ্যতে ভুলেও তারা আর একাজ করবে না। একটা ইট পারলে দশটা পাটকেল মারতে হবে।’

বিএনপির সমালোচনা করে নওফেল বলেন, ‘তারা অনেক নৃশংস, হিংস্র। আন্দোলনের নামে পেট্রোলবোমা মেরে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। আন্দোলন আওয়ামী লীগও করেছিল, অসহযোগ আন্দোলন করেছিল। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে বাসে, মানুষের গায়ে আগুন দিয়ে কাউকে হত্যা করেনি। সংঘাত-সহিংসতার মধ্যে কারও কারও মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু পরিকল্পিতভাবে কাউকে হত্যা করেনি।’

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি বারবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ধর্ণা দিচ্ছে। মনে রাখতে হবে, তারা ওয়াশিংটনে বসে বড় বড় কথা বলতে পারে, কিন্তু শেখ হাসিনার বাংলাদেশে এসে মাতবরি তারা করবে না। তাদের কিছু স্বার্থ আছে, স্বার্থ উদ্ধার হলে তারা চুপ হয়ে থাকবে।’

‘যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে বাঁচানোর জন্য আমেরিকা অনেক চেষ্টা করেছিল। তুরস্কের রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে চিঠি দিয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকারকে টলাতে পারেনি। নিজামীসহ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসিতে ঝুলতে হয়েছে। সুতরাং ভিসা দেব না বলে ভয় দেখিয়ে আওয়াম লীগের নেতাকর্মীদের নিবৃত্ত করা যাবে না। কারণ, আমরা সরকারি বাহিনী ব্যবহার করে ক্ষমতায় নেই।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে নওফেল আরও বলেন, ‘প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিন। বাড়ির সামনে লিখে দিতে হবে- এটা গাড়ি ভাংচুরকারীর বাড়ি, এটা পেট্রোল বোমা হামলাকারীর বাড়ি। তখন তারা সতর্ক হয়ে যাবে এবং নির্বাচনে আসবে। নির্বাচনে বিএনপি এমনিতেই আসবে, আগে একটু ধানাইপানাই করছে। তবে বিএনপি আসুক কিংবা না আসুক, নির্বাচন হবেই, দেশে আরও অনেক রাজনৈতিক দল আছে।’

আলকরণ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল মোতালেব চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. ইছহাকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে নগর কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, সহ-সভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরী, ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, স্বাস্থ্য সম্পাদক ফয়সল ইকবাল চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।

সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে গোপন ব্যালটে রুহুল আমিন তপন সভাপতি এবং মো. ইব্রাহিম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

সারাবাংলা/আরডি/এনএস

চট্টগ্রাম টপ নিউজ মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর