Sunday 05 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাবুলের ‘অনৈতিক’ সম্পর্কের তথ্য দিলেন ২ গৃহসহকারী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১১ জুন ২০২৩ ২০:২১

চট্টগ্রাম ব্যুরো : সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন আরও দু’জন। এরা হলেন- বাবুলের বাসার গৃহসহকারি মনোয়ারা বেগম বাপ্পী ওরফে ফাতেমা ও বাবুলের বান্ধবী আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারীর বাসার ‍গৃহসহকারী পম্পি বড়ুয়া। উভয়ের সাক্ষ্যে বান্ধবীর সঙ্গে বাবুলের অনৈতিক সম্পর্ক, এ নিয়ে মিতুর সঙ্গে বাবুলের ঝগড়াসহ বিভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১১ জুন) চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জসিম উদ্দিনের আদালতে উভয়ে সাক্ষ্য দেন।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মহানগর পিপি আব্দুর রশীদ সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, সাক্ষ্যগ্রহণের পর পম্পি বড়ুয়াকে আসামিপক্ষের জেরা সম্পন্ন হয়েছে। ফাতেমার জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় আদালত সোমবার পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মূলতবি করেছেন।

সাক্ষ্যে পম্পি বড়ুয়া জানান, ২০১৩-১৪ সালে তিনি কক্সবাজারের হলিডে মোড়ে বাবুলের বান্ধবীর বাসায় কাজ করতেন। বান্ধবীর স্বামী বিদেশে থাকতেন। বান্ধবীর বাসায় মাঝে মাঝে বাবুল আক্তার সন্ধ্যার পর যেতেন এবং রাতে থাকতেন। গভীর রাতে কখন বাবুল ওই বাসা থেকে বেরিয়ে যেতেন, তারা জানতেন না। তবে তিনি বাবুল আক্তারকে চিনতেন না। মিতু হত্যার পর টেলিভিশনে ছবি দেখে বাবুলকে চিনতে পারেন। বাবুলের বান্ধবী পম্পিকে এতই আদর করতেন যে, তাকে নাইজেরিয়া নিয়ে গিয়েছিলেন।

অন্যদিকে ফাতেমা সাক্ষ্যে জানান, ২০১৩ সালে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের বাসায় কাজে যোগ দেন তিনি। বাবুল বদলি হয়ে চট্টগ্রামে আসার পর তাকেও নিয়ে আসা হয়। কক্সবাজারে বাবুলের বাসায় তার বান্ধবী সন্তান নিয়ে মাঝে মাঝে আসতেন। বাবুলের ব্যক্তিগত কক্ষে বসে তারা কথা বলতেন, তবে ওই কক্ষে অন্য কারও ঢোকার অনুমতি ছিল না। চট্টগ্রামের বাসায় আসার পর বান্ধবীকে নিয়ে বাবুল ও মিতুর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। দু’জন আলাদা কক্ষে ঘুমাতেন।

মিতু একবার বাসা ছেড়ে চলে যেতে চাইলে বাবুলের ছেলে ও ফাতেমা মিলে তাকে নিয়ে আসেন। মিতু কক্ষের দরজা বন্ধ করে কাঁদতে থাকেন। দরজা খোলার পর বাবুল দেখেন, ফ্যানের সঙ্গে মিতুর ওড়না ঝুলছে, বাবুল সেটি খুলে ফেলেন। মিশনে যাওয়ার সময় বাবুল তার ব্যক্তিগত কক্ষ তালাবদ্ধ করে চাবি নিয়ে চলে যান। একদিন বাথরুমে গিয়ে দরজা খুলতে না পেরে মিতু আটকা পড়েন। তখন বাইরে থেকে তালা খোলার মিস্ত্রি নেয়া হয় বাসায়। মিস্ত্রিকে দিয়ে মিতু বাবুলের ব্যক্তিগত কক্ষের দরজা খোলার ব্যবস্থা করেন।

বিজ্ঞাপন

ফাতেমা আরও জানান, বাবুলের ব্যক্তিগত কক্ষে দু’টি বই পাওয়া যায়, সেখানে বান্ধবীর কিছু ‘লেখা’ ছিল। মোবাইলে বাবুল ও বান্ধবীর ঘনিষ্ঠ কিছু ছবি ও এসএমএস পান মিতু। মোবাইলের এসএমএসগুলো ছেলের আর্ট পেপারে লিখে রাখেন মিতু। বাবুল মিশন থেকে দেশে ফেরার পর ওই কক্ষ খোলা নিয়ে মিতুর সঙ্গে ঝগড়া হয়। এরপর বাবুলের ঢাকায় পদায়ন হয়। তিনি ঢাকা চলে যাবার তিনপির পর মিতুর মোবাইলে একটি মেসেজ আসে, যেখানে লেখা ছিল পরদিন ছেলের স্কুলে একটু আগেভাগে যেতে হবে। তবে অন্য অভিভাবকদের মোবাইলে এমন কোনো মেসেজ আসেনি বলে তিনি কয়েকজনকে ফোন করে জানতে পারেন।

পরদিন মিতু প্রতিদিনের সময়ে কিছু আগে ছেলেকে নিয়ে বের হন। ১০-১৫ মিনিট পর ভবনের নিরাপত্তা রক্ষী বাসায় যান। এরপর ছেলে কান্না করতে করতে বাসায় যায়। তার জুতা ও পোশাকে রক্ত ছিল। বলল, ‘আমার আম্মু তো রাস্তায় পড়ে আছে, কেউ হাসপাতালে নিচ্ছে না।’ তার আব্বুকে তিনবার ফোন দেয়, তিনবারই কেটে দেন বাবুল আক্তার। এরপর নানা-নানীকে কল দেয়, কিন্তু কান্নার জন্য কথা বলতে পারেনি। পাশের বাসার এক মহিলা গিয়ে মিতুর বাবা-মাকে মোবাইলে বলেন, ‘আপনাদের মেয়ে সিলিন্ডার এক্সিডেন্ট করেছে, তাড়াতাড়ি আসতে হবে।’

ফাতেমা বলেন, ‘মিতু আন্টিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যায়। আমি উনাদের (মিতুর বাবা-মা) সাথে চলে যাই। এরপর ঢাকায় মাহিরের নানা-নানীর কাছে চার বছর ছিলাম। তারপর বাড়ি চলে যাই।’

সাক্ষ্যগ্রহণের সময় আদালতের হাজতে থাকা বাবুল আক্তারকে শনাক্ত করেন পম্পি ও ফাতেমা। এরপর দু’জনকে বাবুল আক্তারের আইনজীবী কফিল উদ্দিন জেরা করেন।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সাতজনকে আসামি করে আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে। ১০ অক্টোবর আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। চলতি বছরের ১৩ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। ৯ এপ্রিল থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। প্রথম সাক্ষী হিসেবে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের সাক্ষ্য দেন।

অভিযোগপত্রে প্রধান আসামি করা হয়েছে মিতুর স্বামী বাবুল আক্তারকে। অভিযোগপত্রে আরও যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু এবং শাহজাহান মিয়া।

অভিযোগপত্রের আসামিদের মধ্যে এখন শুধু মুসা পলাতক আছেন।

সারাবাংলা/আইসি/আরডি/একে

এসপি বাবুল টপ নিউজ মিতু হত্যা

বিজ্ঞাপন

চলে গেলেন প্রবীর মিত্র
৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪২

আরো

সম্পর্কিত খবর