খাটের নিচে লাশ রেখে জীবিত হওয়ার অপেক্ষায় ৬ দিন!
১১ জুন ২০২৩ ১৭:১৭ | আপডেট: ১১ জুন ২০২৩ ১৮:২২
নরসিংদী: মৃত স্ত্রী ফের জীবিত হবে- এই আশায় মরদেহ খাটের নিচে রেখে চার মেয়ে ও নাতি-নাতনিকে সঙ্গে নিয়ে একই ঘরে ছয় দিন পার করলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষক। কিন্তু লাশ পচে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবেশিরা পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে খাটের নিচ থেকে অর্ধগলিত মৃতদেহ উদ্ধার করে। শনিবার (১০ জুন) রাতে জেলার মনোহরদী পৌর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, পৌরসভা বাজারের পাশেই নিজেদের বাড়িতে বসবাস করতেন অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক মোক্তার উদ্দীন তালুকদার (৬৮), তার স্ত্রী নাজমা বেগম (৫৫), মেয়ে মাহবুবা তালুকদার(৪০), রোকসানা তালুকদার(৩৪), আফরোজা তালুকদার (২৮) ও নিষাদ তালুকদার (২৫)। তারা সবাই আটরশি পীরের ভক্ত ছিলেন। তাদের কেউই খুব একটা বাসা থেকে বের হতেন না। নিজেরাই বাড়িতে অবরুদ্ধ হয়ে থাকতেন। এ সব নিয়ে প্রতিবেশিরা তাদের জিজ্ঞেস করলেও কোনো সুদত্তর দিতেন না। তারা প্রতিদিন রাত ৩টা থেকে ভোর পর্যন্ত জিকির করতেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নিহত নাজমা বেগম তার পরিবারের সদ্যদের বলে গিয়েছিলেন যে, তিনি যদি মারা যান তাহলে তার লাশ রেখে যেন অপেক্ষা করা হয়। তিন/চার দিন পর ফের জীবিত হবেন তিনি।
গত ৫ জুন নাজমা মারা গেলে তার পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি কউকেই জানায়নি। মরদেহ ফের জীবিত হওয়ার আশায় লাশ খাটের নিচে রেখে তারা অপেক্ষা করতে থাকে। এদিকে প্রতিবেশিরা পঁচা গন্ধ পেতে থাকে। প্রথমে ভেবেছিল ইদুঁর মরে গন্ধ ছড়িয়েছে। কিন্তু গন্ধের তীব্রতা বেশি হতে থাকলে প্রতিবেশিরা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে তাদের ডাকাডাকি করলেও কোন সাড়া দেয়নি। পরে ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের সবাই খাদের নিচে লাশ রেখে অপেক্ষা করছেন। তখন খাটের নিচ থেকে নাজমার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আর পরিবারের সদস্যদের থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে সেখান থেকে তাদের মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।
মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার খন্দকার আনিসুর রহমান বলেন, ‘থানা থেকে তাদের রাতে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। আমরা তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। তাদের শারীরিক অন্য কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি।’
মনোহরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফরিদ উদ্দীন বলেন, ‘পরিবারের সদস্যরা একজন পীরের মুরিদ। জিকিররত অবস্থায় নাজমার মৃত্যু হয়েছে বলে তারা আমাদের জানিয়েছে। ওই নারী পুনরায় জীবিত হবেন- এই আশায় তারা লাশ খাটের নিচে রেখে অপেক্ষা করছিলেন। আমরা মৃতের স্বামী, চার মেয়ে, দুই নাতি ও এক নাতনিকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। আর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
এটি স্বাভাবিক মৃত্যু কিনা তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর বলা যাবে। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান ওসি।
সারাবাংলা/এসএম/পিটিএম