ছাত্রলীগের ‘সুপার ফোর’ নেতৃত্বের দৌড়ে এগিয়ে যারা
১০ মে ২০১৮ ১৭:১৩ | আপডেট: ১০ মে ২০১৮ ১৭:১৫
তৌকির রনি, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা : আসন্ন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন। আগামী ১১ ও ১২ই মে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলন হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে সংগঠনের অলিখিত অভিভাবক আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন। ইতোমধ্যে সংগঠনের সুপার ইউনিট হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমিটির ‘সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক’ হিসেবে সুপার ফোর তথা চার শীর্ষ পদের দৌড়ে এগিয়ে কারা আছেন? নেতৃত্ব নির্বাচনে অলিখিত অভিভাবক শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে? না নেপথ্যে সিন্ডিকেটের পছন্দের অনুসারীরাই সুপার ফোরে আসবেন? এসব নিয়ে মধুর ক্যান্টিন থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে ধানমন্ডি সভাপতির কার্যালয় আলোচনায় সরগরম।
বুধবার দুপুরে আগামী ১১ ও ১২ মে সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়ে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রলীগ। এতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেছেন, ছাত্রলীগ ‘সিন্ডিকেট’ শব্দের সঙ্গে পরিচিত নয়। সিন্ডিকেট শব্দটি ব্যবহার হয় কেবল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে। দেশরত্ম শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডকে বিতর্কিত করতেই এই সিন্ডিকেট শব্দটি ব্যবহার করে কিছু সংখ্যক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী। ছাত্রলীগের একমাত্র অভিভাবক দেশরত্ম শেখ হাসিনা। তার নিদের্শেই ছাত্রলীগ পরিচালিত হয়। তিনি যে নির্দেশ দেন ছাত্রলীগ তা বাস্তবায়ন করে। দেশরত্ম শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী আগামীর নেতৃত্ব তৈরি হবে।
২৯তম সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে শীর্ষ পদে দৌড়ে পদপ্রত্যাশীরা আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডসহ বিভিন্ন বলয়ে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। পদপ্রত্যাশী অধিকাংশ নেতারাই বিকেল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সালাম বিনিময় করছেন। অনেকে সুযোগ পেলে শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের পা ছুয়ে সালামের সুযোগও হাতছাড়া করছেন না। এদিকে সম্মেলনের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এবার শীর্ষ নেতৃত্ব বাছাইয়ে সমঝোতা না ভোট হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশায় রয়েছে পদপ্রত্যাশীরা। বিশেষ করে সম্প্রতি গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতির বক্তব্যে পদপ্রত্যাশী অনেকের মধ্যে উচ্ছ্বাস আবার অনেকের মধ্যে হতাশাও বিরাজ করছে। বিশেষ করে সিন্ডিকেট আশীর্বাদপুষ্ট হিসেবে পরিচিতদের কপালে চিন্তার রেখা দেখা দিয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের সম্মেলনে সাংগঠনিকভাবে দক্ষ, মেধাবী ও আওয়ামী পরিবারের শিক্ষার্থীরাই এই শীর্ষ চার পদে নেতা হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন। বিগত সময়ে টেন্ডারবাজসহ বিভিন্ন অপকর্মে যারা জড়িত ছিলেন তাদের এবার নেতৃত্বে আসার একেবারে সুযোগ নেই। বিশেষ করে, সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগ নেতাদের কার কি ভূমিকা ছিল সেটাও বিবেচ্য হবে। আর চলতি বছরেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তাই সবকিছু বিবেচনা করেই এবারের সংগঠনের চার শীর্ষ পদের দায়িত্ব আসবে।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির শীর্ষ চার পদে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকারা নেতারা হলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে- কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি আদিত্য নন্দী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদার মুহাম্মদ নিজামুল ইসলাম, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম শামীম, পরিবেশ বিষয়ক উপ-সম্পাদক ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী সজীব, সহ-সম্পাদক জায়েদ বিন জলিল। বরিশাল অঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি রুহুল আমিন, আইন বিষয়ক সম্পাদক আল-নাহিয়ান খান জয়, সহ-সম্পাদক খাদেমুল বাশার জয়, ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক ইয়াজ আল রিয়াদ, প্রচার বিষয়ক উপ-সম্পাদক সাইফুর রহমান সাইফ, উপ-কৃষি শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আরিফ আলী। ফরিদপুর অঞ্চল থেকে- কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সায়েম খান, আরেফিন সিদ্দিক সুজন, কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন, সমাজসেবা সম্পাদক রানা হামিদ, স্যার এএফ রহমান হলের সভাপতি হাফিজুর রহমান, উপ আইন সম্পাদক শরীফুল ইসলাম সাগর, কবি জসীম উদ্দীন হলের সাধারণ সম্পাদক শাহেদ খান। উত্তরাঞ্চল থেকে, আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক হোসাইন সাদ্দাম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপ-সম্পাদক আল মামুন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। খুলনা অঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি চৈতালী হালদার চৈতী, ঢাবি শাখার সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা বিষয়ক উপ-সম্পাদক সাগর হোসেন সোহাগ। ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস, জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস। সিলেট অঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় গণশিক্ষা সম্পাদক আনিসুল ইসলাম জুয়েল, জিয়াউর রহমান হলের সভাপতি ইউসুফ উদ্দিন খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন রহমান। ঢাকা বিভাগ থেকে কেন্দ্রিয় কমিটির সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান রনি, প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবু।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগামীতে ভাল নেতৃত্ব আসবে সেই প্রত্যাশায় সম্মেলনের কাজ ভালভাবে এগোচ্ছে ।
দলীয় সূত্রে আরও জানা যায়, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২৭ বছর নির্ধারিত থাকলেও এবারও নেতৃত্ব বিবেচনায় ২৯ বহাল থাকবে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে নেত্রীর উপর। এদিকে পদপ্রত্যাশী অনেকের গঠনতন্ত্র মোতাবেক যাদের বয়স শেষ হয়ে গেছে তারা বলছেন নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন না হওয়ার কারণে নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে নেত্রী বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারেন।
ছাত্রলীগের সম্মেলন নিয়ে গণভবনে সাম্প্রতিক সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া সফর নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগের কনফারেন্স যেভাবে হয়, হবে। আমাদের একটা নিয়ম আছে। ইতোমধ্যে কে কে প্রার্থী, তাদের কাছ থেকে প্রস্তাব এসেছে এবং ফরম ছাড়া হয়ে গেছে। সবাইকে নিয়ে বসা হয়। সমঝোতার চেষ্টা করা হয়। সমঝোতা না হলে ভোট হয়।
সমঝোতা করে হবে বা আলোচনা করে হবে- এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। আর যদি সমঝোতায় না হয়, তাহলে ভোট হবে। তিনি আরও বলেন, ‘ভোটের আবার কিছু ভালো দিক আছে, মন্দ দিকও আছে। এটাও দেখতে হবে। আমরা চাই উপযুক্ত নেতৃত্ব ও ছাত্র। বয়সসীমা বেঁধে দেওয়া আছে। বয়সসীমার মধ্যে যারা সত্যিকারের ছাত্র, যারা মেধাবী, তারা যেন নেতৃত্বে আসে,সেটাই আমরা চাই। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা কাজ করব।’
সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৬ ও ২৭ জুলাই ছাত্রলীগের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন মনোনীত হয়।
সারাবাংলা/আরএম/এনআর/এমআইএস