Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রায়ে দণ্ডিত আলমগীর, জেল খাটছেন আল-আমিন!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৭ জুন ২০২৩ ২৩:৪৩

ঢাকা: শুধু বাবার নামের সঙ্গে আসামির বাবার মিল থাকায় সাজাপ্রাপ্ত প্রকৃত আসামির পরিবর্তে জেল খাটছেন আল আমিন নামের এক নিরাপরাধ কলেজ ছাত্র। এরপর বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে গড়ালে হাইকোর্ট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

বুধবার (৭ জুন) বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। রুলে দণ্ডপ্রাপ্ত প্রকৃত আসামি আলমগীরের পরিবর্তে আল আমিনকে গ্রেফতার করা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

চার সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), রংপুরের ডেপুটি কমিশনার, পুলিশ সুপার (এসপি), গঙ্গাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ও রংপুরের জ্যেষ্ঠ জেল সুপারকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য।

পরে আদেশের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘২০১৫ সালে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারক মো. রোকনুজ্জামান পাঁচ আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেন। দণ্ড পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন- গঙ্গাচড়া উপজেলার নরসিংহ মর্ণেয়া গ্রামের আবুজার রহমান (২৮), আলমগীর হোসেন (২৭), নাজির হোসেন (৩২), আবদুল করিম (২৯) ও আমিনুর রহমান (২৯)। তাদের মধ্যে আলমগীর পলাতক।’

বিজ্ঞাপন

সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আলমগীর গঙ্গাচড়া উপজেলার নরসিংহ মর্ণেয়া গ্রামের মো. হান্নানের পুত্র। আর গত ১৮ মার্চ গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা আল আমিন গঙ্গাচড়া উপজেলার হাজির পাড়া গ্রামের মো. আব্দুল হান্নানের ছেলে। তাকে গত ১৮ মার্চ রাতে রংপুরের সিও বাজার মসজিদ ছাত্রাবাস থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

আল আমিন ২০১৫ সালে ওই ঘটনার সময় স্কুল অধ্যয়নরত ছিলেন। জন্ম সনদ অনুযায়ী আল আমিন জন্ম ২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি। তিনি ২০১১ সালে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা (পিএসসি), ২০১৫ সালে জেএসসি, ২০১৮ সালে এসএসসি, ২০০০ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আদিতমারী সরকারি কলেজে ভর্তি হন। আল আমিন বর্তমানে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছেন।

এদিকে, গত ৩০ মার্চ সাজাপ্রাপ্ত আসামি আলমগীরের পরিবর্তে গ্রেফতারকৃত নিরপরাধ আল আমিনকে সাজাপ্রাপ্ত আসামি দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এর পর ন্যায় বিচারপ্রাপ্তিতে মানবিক সহযোগিতা চেয়ে রংপুরের পুলিশ সুপার বরাবর একটি আবেদন করেন আল আমিনের ভাই আলী হোসাইন। এর পর এ বিষয়ে কোন সাড়া না পেয়ে গত ২৮ মে আল আমিনের পক্ষে হাইকোর্টে আবেদন করেন তার ভাই আলী হোসাইন।

আজ ওই আবেদনের শুনানি শেষে আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়ছেন। এবং ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সাজাপ্রাপ্ত প্রকৃত আসামি আলমগীরের পরিবর্তে নিরপরাধ আল আমিনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজিপিসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৪ মে ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা ও মা লালমনিরহাটে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যান। এ সময় ওই কিশোরী ও তার ভাগ্নে বাড়িতে একা ছিল। এ সুযোগে আবুজার সহযোগীদের নিয়ে সন্ধ্যায় ওই কিশোরীর বাড়িতে যান এবং তাকে কৌশলে ডেকে নিয়ে পাশের একটি খেতে দলবদ্ধ ধর্ষণ করেন। পরে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তাকে হত্যা করে পালিয়ে যান তারা। ওই দিন রাতে কিশোরীর বাবা-মা বাড়িতে ফিরে মেয়েকে না পেয়ে সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। পরের দিন সকালে বাড়ির অদূরে একটি খেত থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ওই কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে গঙ্গাচড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গঙ্গাচড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তৌহিদুল ইসলাম তদন্ত শেষে আবুজারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। প্রায় সাত বছর আদালতে বিচার চলার পর ১০ জনের সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে ২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর পাঁচ আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা করে জরিমানার রায় দেন রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মো. রোকনুজ্জামান।

সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম

জেল টপ নিউজ দণ্ডিত রায়

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর