পুরো আসন নয়, গোলযোগপূর্ণ কেন্দ্রে ভোট বন্ধ করতে পারবে ইসি
৫ জুন ২০২৩ ২২:৩০
ঢাকা: ভোটের দিন অনিয়ম, গণ্ডগোল, জবরদস্তি ও পেশী শক্তির প্রভাব খাটালে সুনিদির্ষ্ট কেন্দ্রগুলোর ভোট বন্ধ করার একটি নতুন বিধান যুক্ত করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ’র সংশোধনী বিল সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে নির্বাচন কমিশন (ইসি)-এর ক্ষমতা ‘সীমিত’ হয়েছে দাবি করে ওই বিল উত্থাপনে আপত্তি জানান বিরোধীদলীয় সদস্য ফখরুল ইমাম। তবে তার আপত্তি কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
সোমবার (৫ জুন) বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব (সংশোধন) বিল-২০২৩ সংসদে উত্থাপন করেন আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। পরে বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
কমিটিকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সংসদে বিলের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এর আগে, আইনের সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব হচ্ছে এমন অভিযোগ করে বিলটি উত্থাপনে আপত্তি জানান জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। তিনি বলেন, ‘আজ আরপিও দেখলাম। কিছুদিন আগে গাইবান্ধা উপনির্বাচন হয়েছে। সেটা ইসি বন্ধ করে দিয়েছে। আমি জানি না, কী কারণে মাননীয় মন্ত্রী এটা আনলেন যে, ইসি পুরো নির্বাচনি এলাকা বন্ধ করতে পারবে না। শুধু যেসব কেন্দ্রে গণ্ডগোল হয়েছে, সেখানে বন্ধ করতে পারবে। এটা স্বাধীতার হস্তক্ষেপ।’
প্রস্তাবিত বিলে ইসির ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে দাবি করে ফখরুল ইমাম বলেন, ‘ইসি যদি মনে করে সকাল থেকে এখানে আরও অনেক গণ্ডগোল হবে, পরিবেশ খারাপ- যেটা গাইবান্ধায় হয়েছিল। দুই-তিনটির পরে তারা বন্ধ করে দিতে পারবে, সে স্বাধীনতা খর্ব হয়েছে।’
জবাবে আইনমন্ত্রী দাবি করেন, ‘জোর জবরদস্তি, গোলযোগ, সহিংসতায় তদন্ত সাপেক্ষে পুরো নির্বাচনি এলাকার ভোট বন্ধ করার ক্ষমতা (আরপিও ৯১ ক অনুচ্ছেদ) নির্বাচন কমিশনের রয়েছে। তবে নতুন করে একটা সংশোধনী আনা হয়েছে; যাতে যেসব কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে সেগুলো বন্ধ করতে পারবে। এতে ইসির ক্ষমতা খর্ব করা হয়নি, বরং ইসিকে শক্তিশালী করা হয়েছে। বিলের বিধান অনুযায়ী, শুধু কয়েকটি কেন্দ্রের গোলযোগ-জবরদস্তির জন্য পুরো আসনের ভোট বন্ধ করার পথ রোধ হচ্ছে।’
সংশোধনীতে বলা হয়েছে, সব কেন্দ্রের অনিয়ম না হলে পুরো আসনের ভোট বন্ধ করা যাবে না, শুধু গোলযোগপূর্ণ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করতে পারবে। এতে জাতীয় সংসদের কোনো আসনের নির্বাচনে সব কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ ছাড়া পুরো আসনের ভোটের ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে না ইসি। যেসব ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হবে, শুধু সেসব (এক বা একাধিক) কেন্দ্রের ভোট ফলাফল বা বাতিল করার ক্ষমতা পাবে ইসি।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে মনোনয়নপত্র জমাার সাত দিন আগে বিল পরিশোধের পরিবর্তে মনোনয়ন জমার আগের দিন পর্যন্ত পরিশোধের বিধান করা, নির্বাচনকালে পেশীশক্তির প্রভাব প্রতিরোধ করা, মনোনয়নপত্রের সঙ্গে আয়কর সনদ জমা, গণমাধ্যমকর্মী ও পযবেক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আরপিও সংশোধন প্রয়োজন। বিলটি আইনে পরিণত হলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে একাদশ জাতীয় সংসদের ২৩তম অধিবেশন চলছে। সোমবার বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়, চলে রাত পর্যন্ত। আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় ফের সংসদ অধিবেশন বসবে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম