‘ভিসা নীতির পেছনে অন্য উদ্দেশ্য আছে কি না, খতিয়ে দেখতে হবে’
২ জুন ২০২৩ ১৪:০৯ | আপডেট: ২ জুন ২০২৩ ১৭:২৫
ঢাকা: “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক আগেই ঘোষণা করেছেন যে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এবারের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাহলে বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা নীতির লক্ষ্য ও উদেশ্য কী? একটি অগ্রগামী জাতির নির্বাচনের প্রায় সাতমাস আগে এই ধরণের উদ্দেশ্যপূর্ণ ভিসা নিষেধাজ্ঞার পেছনে অন্য কোনো গুঢ় উদ্দেশ্য আছে কি না সেটি খতিয়ে দেখতে হবে। ওয়াশিংটন তাহলে ‘চীন ঠেকাও’ নীতির অংশ হিসেবে এ ধরণের ভিসা নীতি প্রয়োগ করে বাংলাদেশের ওপর খবরদারি করতে চাইছে?”
শুক্রবার (২ জুন) সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘মার্কিন নতুন ভিসা নীতি: যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত গবেষণাভিত্তিক সংগঠন ‘এডুকেশন, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলেপমেন্ট ফোরাম (ইআরডিএফবি) এই সেমিনারের আয়োজন করে।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য ও ইআরডিএফবি’র সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ৩৫তম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২০৪০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২০তম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হওয়ার লক্ষ্য আমাদের। এছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সংগ্রামী ভূমিকার কথা বিশ্বের জানা। আমাদের প্রথমেই দেখতে হবে, এই ভিসা নীতিতে আমাদের ক্ষতিগুলো কোন কোন জায়গায়? সেইসব ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘পশ্চিমা হস্তক্ষেপ কোথাও কোনো উন্নতি করতে পারেনি; সেটা হোক লিবিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান কিংবা সিরিয়া। বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দল কিছু হলেই বিদেশি হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এই হস্তক্ষেপ যে কতটা ভয়ঙ্কর তার চাক্ষুষ উদাহরণ লিবিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান কিংবা সিরিয়ার মতো দেশগুলো। বিদেশি শক্তির কাঁধে ভর করে ক্ষমতার লোভে যারা দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায় তাদের শক্তভাবে প্রতিহত করতে হবে।’
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধক্ষ্য ও ইআরডিএফবি’র সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় সেমিনারে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপ-উপাচার্য ও ইআরডিএফবি’র সিনিয়র সহ সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের একটি পারস্পারিক মিথস্ত্রিয়া রয়েছে। এই অবস্থায় তাদের নতুন ভিসানীতি বাংলাদেশে প্রয়োগের পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না, সেটি খতিয়ে দেখার যথেষ্ঠ অবকাশ রয়েছে।’
সেমিনারে মূল আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. গোবিন্দ চক্রবর্তী। আলোচনায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি বিশদ ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই একটি আন্তঃনির্ভরশীল সম্পর্ক বিদ্যমান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের বৈশ্বিক দায়দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আগে কোনো নিষেধাজ্ঞা দিলে সেটি জাতি বা রাষ্ট্রকে দিতো। সেখান থেকে তারা সরে গিয়ে এখন নির্দিষ্ট ব্যাক্তিকে দেওয়া শুরু করেছে। এর কারণ আন্তর্জাতিক রাজনীতির জটিল গ্রাউন্ডে রাষ্ট্রকে সবসময় সকল দায়বদ্ধতার মধ্যে আনা সম্ভব হয় না। এজন্য তারা বিষয়টিকে ব্যক্তিপর্যায়ে নিয়ে এসেছে।’
ড. গোবিন্দ চক্রবর্তী আরও বলেন, ‘এটি কোনো নিষেধাজ্ঞা নয়। এটি একটি বিশেষ নীতি ঘোষণা বা সতর্কবার্তা দেওয়া। সবার, সব পক্ষের জন্যই সতর্কবার্তা। এই সতর্কবার্তায় ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।’
সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. দেলোয়ার হোসেন ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম। সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক সদস্য অধ্যাপক ড. আনোয়ারা বেগম।
সারাবাংলা/এসবিডিই/এমও